সম্প্রতি ইতালির পত্রিকায় বাংলাদেশ বিষয়ে খবর ছাপা হয়েছে। ইতালির পত্রিকা, খবর ইতালিয়ান ভাষায় ছাপা হয়েছে, তাই হওয়ার কথা।
যদি ইতালিয়ান ভাষা না বোঝেন, তাহলে এটা একটা ভালো খবর। বিদেশি পত্রিকায় বাংলাদেশের নাম, এ তো ইন্সট্যান্ট গৌরবের বিষয়, এত বোঝাবুঝির দরকারটা কী! ফেসবুক/ইউটিউবে যেকোনো পোস্টে বাংলাদেশ নামটি দেখলেই (ভালো-খারাপ যে বিষয়েই হোক) গর্বে বুক ফুলে ওঠায় যারা 'লাভ ফ্রম বাংলাদেশ' কমেন্ট করে বুকের প্রশস্তি ব্যালেন্সে আনেন, তাদের জন্যও ভালো খবর।
তবে সমস্যা হলো, অনেকেই ইতালিয়ান ভাষা বোঝে। আচ্ছা বুঝিস ভালো কথা, তাই বলে ইতালির পত্রিকার খবর বাংলায় অনুবাদ করতে হবে কেন বাপু? অনেকে তা করে ফেলেছে। দৈনিক ইত্তেফাকের একটি ভুল অনুবাদসূত্রে অবশ্য আমরা জানতে পারি, ইতালির প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, 'একেকজন বাংলাদেশি একেকটা ভাইরাস বোমা।'
এর আগে মহাকবি মমতাজ একবার বলেছিলেন, 'পোলা তো নয় একখান আগুনেরই গোলা।' সেটা ছিল একটা কমপ্লিমেন্ট। সেই হিসেবে 'বাংলাদেশি তো নয় একখান ভাইরাসের বোমা', এইটাকেও কমপ্লিমেন্ট ধরে নেয়া যায়। একজন বিদেশি প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশিদের এপ্রিসিয়েট করলো, হইহই কান্ড রইরই ব্যাপার।
তবে ইতালির প্রধানমন্ত্রী আরও কথা বলেছেন। তার টোটাল বক্তব্য এইরূপ-
'আমরা এক জরিপে দেখেছি, বাংলাদেশ থেকে আসা প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ করোনা ভাইরাস বহন করে নিয়ে আসছে। এরা কিভাবে বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন পার হলো সেটা অবশ্যই ভাবার বিষয়। আমরা সুস্পষ্ট করে বলতে পাড়ি বাংলাদেশের ইমগ্রেশনে সঠিকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয় না। বাংলাদেশিরা কোনো ধরনের পর্যবেক্ষণ ছাড়াই ইমিগ্রেশন পার হয়ে ইতালি এসে এখানে এ ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটাচ্ছে । তাই আমরা বাধ্য হয়ে ফ্লাইট বন্ধ করেছি। আমরা আমাদের দেশকে বোমা থেকে দূরে রাখতে আপাতত ফ্লাইট স্থগিত করেছি।'
প্রথমত আমার মনে হয়, বাংলাদেশ সম্পর্কে ঠিকঠাক ধারণা না থাকায় ইতালির প্রধানমন্ত্রী একটা ভুল কথা বলেছেন। তিনি দোষ দিয়েছেন ইমিগ্রেশনকে। উনি হয়তো জানেন না, আমাদের ইমিগ্রেশনে মানুষ বন্দুক নিয়ে ঢোকে, বন্দুক নিয়ে বের হয়ে যায়। সারা বিশ্ব যখন করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সীমান্ত-এয়ারপোর্ট সব আটকায়ে একেবারে প্যাকেট হয়ে ছিল, আমাদের এয়ারপোর্ট তখনও করোনার অভয়ারণ্য। সেখানে দেশ থেকে বেরোচ্ছে এমন যাত্রীর করোনা আছে কি নাই, ইমিগ্রেশন তাহা কী করিয়া জানিবে?
তাহলে এই যে করোনা আক্রান্ত বাংলাদেশিরা ইতালিতে গিয়ে ভাইরাস বোমা ফাটাইলো, এর পেছনে দোষ আসলে কার? আপনি হয়তো তবু বলতে পারেন, কর্তৃপক্ষের দোষ। তবে আমার ধারণা, এই ঘটনার পেছনে ঐ বাংলাদেশি যাত্রীরাই দায়ী।
ভুয়া করোনা পরীক্ষার জন্য ইতালি যাওয়া যাত্রীরা আদৌ জানতো না তারা আক্রান্ত। টেস্টে রেজাল্ট নেগেটিভ এসেছে, তাই তারা দেশ ছেড়ে যেতেই পারে। তবু আমি বলবো, তারাই দায়ী। করোনা টেস্ট নেগেটিভ আসলেই সে বিশ্বাস করলো কেন? সে কি জানে না, বাংলাদেশে কোনো কিছুরই বিশ্বাস নাই? ভুয়া করোনা পরীক্ষা হতে পারে, ভুয়া রেজাল্টও আসতে পারে। কর্তৃপক্ষ লাইসেন্স ছাড়াই যাকে-তাকে করোনা পরীক্ষার কাজ দেবে, ভুল রেজাল্ট আসবে, এইগুলা বাংলাদেশে নতুন কী? দেশের বাইরে কিছুদিন থাকছে বলেই কি দেশের ঐতিহ্য ভুলে যাবে তারা?
তাদের উচিত ছিল, কমপক্ষে দশ জায়গায় করোনা টেস্ট করায়ে সব জায়গায় নেগেটিভ আসলে এরপরই দেশত্যাগের সিদ্ধান্ত নেয়া। এতবার এত জায়গায় টেস্ট করাইতে যদি কষ্ট হয়, তাইলে নিজে নিজে করোনা টেস্ট করাইতে পারলো না কেন? না পারলে শিখে নিতো, সেটাও তারা করে নাই।
ঐ বাংলাদেশি যাত্রীদের আরও দোষ আছে, তারা ভ্যাকসিনও আবিষ্কার করতে পারে নাই। দেশে ঠিকঠাক করোনা টেস্ট হয় না বলে কি তুমি ভ্যাকসিন বানাইতে পারবা না? নিজে বানাও, নিজে খাও, এরপর ইতালি যাও। ভ্যাকসিন না বানাইতে পারলে ইতালিমুখো হবা কেন?
ইমিগ্রেশন তোমাকে আটকাইতে না-ই পারে। ঐ যাত্রীদের ইমিগ্রেশনে গিয়ে বারবার বলা উচিত ছিল, আমাদের আটকান, প্লিজ, আমাদের যাইতে দিয়েন না। আগে দেখেন আমাদের করোনা আছে কিনা, এরপর ছাড়েন। টেস্ট রেজাল্ট নেগেটিভ, তবে সেটা বিশ্বাস করবেন না। আবার টেস্ট করান...
এই যে এশিয়ার নানান দেশ, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ-আমেরিকায় যে প্রবাসীরা দেশ ছেড়ে দূরে থাকেন, দেশে বৈদেশিক টেকাপয়সা পাঠান, গার্মেন্টস শিল্প বাদে এই টেকাই বাংলাদেশের বড় ইনকাম। বিদেশ বিভূঁইয়ে বছরের পর বছর কষ্টে দিন কাটায়েও আমাদের বাঁচায়ে রাখছে ঐ প্রবাসীরাই। অনেকে তাই বলতে পারে, দেশ ছাড়াটা তাদের চয়েজ না, এছাড়া তাদের উপায় কোথায়।
আমি তা বলবো না। আমার কথা হইলো, দেশে থাকো। অভাবে-বেকারত্বে মইরা যাও, ভুল চিকিৎসায় মইরা যাও। অন্য আর দশটা মানুষ মরতেছে না? তোমারে কেন বাঁচতে হবে, বাঁচাইতে হবে?
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন