ছেলেটা মায়ের পা ছুঁয়ে সালাম করলো, মা ছেলের মাথায় হাত দিয়ে দোয়া ইউনুস পড়ে তিন ফুঁ দিয়ে হাতটা মাথায় বুলায়ে দিল।
ছেলে এক হাতে কাঁধের ব্যাগ সামলে, আরেক হাতে মা'কে জড়ায়ে ধরে বলে, বেশি টেনশান করবা না, আমি পৌছায়ে ফোন দিব। প্রেশারের ওষুধটা খাইয়ো মনে করে, খাবা তো?
মা, মাথা ঝাঁকায়ে হ্যা বলে। তারপর জালি ব্যাগে একটা প্লাস্টিকের টিফিন বক্স আগায়ে দিয়ে বলে, রুটি আর ভাজি দিলাম, গাড়িতে খাইস।
ছেলেটার ছোটবোন স্কুলের জন্য রেডি হচ্ছে। মাথার একপাশে বেণি করা হয়েছে, এখন অন্যপাশের চুল তিন গোছা আঙ্গুল প্যাচায়ে বেণী করছিল। ভাইয়ের পিছে পিছে দরজা পর্যন্ত আসলো। ছেলেটা যখন দরজার বাইরে পা ফেলছে, হুট করেই ছোটবোন বললো, ভাইয়া পানি খাইস ঠিক মত।
কথা শুনে ঘুরে দাঁড়ায়ে ছেলেটা মুচকি হেসে দিল। বোন চুল প্যাচাতে প্যাচাতে বলে, ফোন করিস, খবর দিস। মা খুব চিন্তা করে তুই চলে যাবার পর।
: আচ্ছা দিব। তোর জন্য কিছু লাগবে? কি আনবো আসার সময়?
: একটা নেল পালিশ রিমুভার লাগতো, তুই আসা পর্যন্ত বসে থাকা যাবে না, আমিই কিনা নিব নি, তুই যা। ভালোভাবে যাইস।
ভাই বোনের কথা এই পর্যন্তই শেষ।
ছেলেটা দরজা দিয়ে বের হয়ে সিঁড়ি ভেঙ্গে রাস্তায় নামে। ছেলেটার মা বারান্দার গ্রিলের ফাঁকা দিয়ে যতক্ষন ছেলেকে গলির রাস্তায় দেখা যায় ততক্ষন তাকিয়ে থাকে।
রাস্তায় ছেলেটার সাথে দেখা হয় এক প্রৌঢ় ভদ্রলোকের। দাড়ি টুপি আর হাফশার্ট পরা প্রৌঢ় লোককে ছেলেটা সালাম দেয়। লোকটা জিজ্ঞেস করে, চললা নাকি?
: জ্বী চাচা।
: সাবধানে যাইও, শরীরের খেয়াল রাইখো।
: জ্বী, আপনি আম্মা আর টুম্পাকে দেইখেন একটু চাচা, রাইখা গেলাম ওদের।
: অবশ্যই বাবা, চিন্তা কইরো না যাও, দেরী হইয়া যাবে। ফি আমানিল্লাহ।
ছেলেটা আগায় ।
ছোট রাস্তা মিলায় বড় রাস্তায়।
গাড়ি দাঁড়াবার নির্দিষ্ট স্থানে তার মত আরও কয়েকজন ফুটপাতে দাঁড়ায়ে আছে। পূর্ব পরিচিত আরেক যুবক ছেলেটাকে দেখে আগায়ে আসে। কাঁধে ব্যাগ ছাড়াও হাতের পলিব্যাগে দুইটা পেয়ারা আর কমলা দেখা যাচ্ছে। ছেলেটাকে দেখে বলে, তোমার দেরি দেইখা ভাবলাম, তুমি আলাদা বাসে যাবা নাকি।
একটা ফেরীওয়ালা পানির বোতল আর বাসের সিটে ঘুমানোর জন্য কাঁধ বালিস বিক্রি করছে, যুবকের দিকে এগিয়ে যেতেই, যুবক বলে, লাগবো না মামা, আছে আমার।
তারপর যুবক ব্যাগ থেকে ভাজ করা কাঁধ বালিস বের করে, ফুঁ দিয়ে বাতাস ভরে ফুলাতে থাকে।
বাস আসে নাই এখনো। সবাই দূরের যাত্রার জন্য রেডি...
...এমন প্রস্তুতি আগে শত মাইল পাড়ি দেয়ার জন্য নেওয়া হলেও...আজকের ছেলেটা বের হয়েছে শান্তিনগর থেকে উত্তরা যাবে বলে।
প্রতিদিন সকালের মত অফিস করতে।
তার এই দীর্ঘযাত্রা শুভ হোক...!
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন