মুহম্মদ বিন তুঘলক ছিলেন উন্নয়নবিলাসী রানি, থুক্কু রাজা। তার কাণ্ডকারখানা থেকেই 'তুঘলকি কাণ্ড’ কথাটার জন্ম। তিনি উন্নয়নের নামে বড় বড় প্রজেক্ট করতে ভালোবাসতেন। কিন্তু সেসব প্রজেক্টের কারণে ট্যাক্স দিতে দিতে প্রজাদের নাভিশ্বাস উঠে যেত।
তুঘলক বুঝতে পারতেন না, প্রজাদের জন্য এত কিছু করছেন, বড় বড় রাস্তা, রাস্তার দুধারে গাছ, পথে জিরোবার জন্য সরাইখানা, দুপাশে সড়কবাতি... তবু প্রজারা কেন খুশি না। রাগ হলে তিনি বলতেন, তাহলে দেই কারেন্ট অফ করে (ওহ থুক্কু, কারেন্ট বোধহয় ছিল না, তিনি সড়কবাতির তেল অফ করে দেওয়ার কথা বলতেন মেবি)।
তার সম্পর্কে বলা হতো, তিনি একই সাথে ছিলেন দয়ালু ও চরম নিষ্ঠুর। চালাক এবং বোকা। বিদ্বান এবং মূর্খ। দূরদৃষ্টিসম্পন্ন কিন্তু ব্যর্থ শাসক। কেউ তার শাসনের সমালোচনা করলে হাতির দাঁতের বিদ্ধ করে তাকে মেরে লাশ ঝুলিয়ে রাখা হতো। (তার আইনমন্ত্রী বুদ্ধিমান হলে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নামের আইন বানিয়ে ফেলতে পারত। তাতে কাজ অনেক সহজ হয়ে যেত)
তুঘলকের সবচেয়ে বড় তুঘলকি কাণ্ড ছিল রাজধানী দিল্লি থেকে সরিয়ে ৭০০ মাইল দূরে দেবগিরিতে নেওয়া। এও এক মেগা প্রজেক্ট। কেউই এই সিদ্ধান্তে খুশি ছিল না। কথিত আছে রীতিমতো ধরে বেঁধে দিল্লিবাসীদের এই দূরবর্তী নতুন রাজধানী শহরে নিয়ে যাওয়া হতো। দিল্লি প্রায় জনশূন্য হয়ে গিয়েছিল।
তুঘলক ভালো ভালো কাজও করেছেন। কিন্তু তার স্বৈরাচারী শাসন ও আজগুবি সব চিন্তাভাবনার কারণে প্রজারা ছিল চরম বিরক্ত। মুজতবা আলীর লেখায় পড়েছিলাম, এই তুঘলক মারা যান ইলিশ মাছ খেয়ে। সারাদিন রোজা রাখার পর তেল ও চর্বিতে ভরা ইলিশ তার পেটে সয়নি। সেখান থেকে পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হন। রোগটাকে এখন আমরা ডায়রিয়া নামে চিনি।
তুঘলকের মতো প্রতাপশালী শাসকের শেষ পরিণতি কি না ডায়রিয়ায় মৃত্যু!
তার মৃত্যুর পর ইতিহাসবিদেরা লিখেছেন, এইভাবে তুঘলকের হাত থেকে প্রজারা মুক্তি পেলেন, তুঘলকও মুক্তি পেলেন প্রজাদের হাত থেকে! হোয়াট অ্যান আয়রনি!
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন