ভূপেন হাজারিকার ‘মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য...’ গানটি আমাদের সবার পরিচিত। তবে গানের লাইন পরিচিত হলেও এর ভেতরের মানবিকতাটুকু আজও আমাদের স্পর্শের বাইরে। এমনই এক অমানবিক ঘটনার শিকার হলেন ময়মনসিংহের নাজমুল (২৬) নামের এক যুবক। স্টুডেন্টের বড়বোনের কাছ থেকে একটু সহানুভূতিও পাননি তিনি।
নাজমুল হোসেন (২৬) আনন্দমোহন কলেজে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত একজন মেধাবী যুবক। পড়ালেখার পাশাপাশি ৪-৫ টা টিউশন করিয়ে জীবিকা নির্বাহন করেন। এদের মধ্যে একটি টিউশন তার কাছে বরাবরই স্পেশাল। সেখানে তাকে ঘিরে ছাত্রী এবং ছাত্রীর বড় বোন— দু'জনেরই মুগ্ধতার সীমা পরিসীমা ছিলো না। এই মুগ্ধতার জন্ম হয় অনার্সে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হওয়ার পর।
জানা যায়, বেশিরভাগ সময় ছাত্রীর পাশে তার বোন লিসাও (১৮) সেজেগুজে বসে থাকতো। নাজমুলকে এমনভাবে মাঝেমাঝে ‘স্যার’ ডাকতো যে, নাজমুলের মনে হতো তিনি সারাজীবন এই বাসায় টিউশন করেই কাটিয়ে দেবেন। এছাড়া, পড়ানোর সময় বিভিন্ন ধরনের দেশি-বিদেশি খাবার নিয়ে হাজির হতো ছাত্রীর বড় বোন লিসা, সবকিছুই সে নিজের হাতে করতো। একবার নাজমুলের জন্য রাঁধতে গিয়ে হাতও পুড়িয়ে ফেলে সে৷ পরবর্তীতে দেখা যায়, সেখানে ‘N’ অক্ষরের মতো একটা চিহ্ন ফুটে উঠেছে। এ ঘটনায় যারপরনাই অবাক হয়েছে লিয়া-লিসার পরিবার, এবং স্বয়ং নাজমুল।
নাজমুলের বিসিএস প্রিলিমিনারির আগের দিনও তার বাসায় হুজুরের পড়া পানি নিয়ে হাজির হয়েছিল লিসা। বেস্ট উইশেস জানিয়ে নাজমুলকে সে একটা রুমাল উপহার দেয়। সেখানে সুতার কাজে লেখা, 'ভুলো না আমায়', এক কোনায় বড় করে হার্ট শেপের ভেতর ‘N+L’ লেখা৷ একটু লজ্জা পেলেও এই আন্তরিকতা এবং পরিশ্রমে বেশ মুগ্ধ হন নাজমুল। এমন টিউশন পাবার সৌভাগ্য ক'জনের হয়— ভেবে মনে মনে হাসেন তিনি।
এসব কিছুই এখন ইতিহাস। এদিকে, গত পরশু প্রিলিমিনারির রেজাল্টের পর সবকিছুতেই দেখা যায় একটা সূক্ষ্ম পরিবর্তন। ব্যাপারটা আর সূক্ষ্ম থাকে না যখন টিউশনে তার জন্য ন্যাতানো মুড়ির আর পঁচা কলা নিয়ে আসে কাজের মেয়ে। সেদিনের পানিও ছিলো সন্দেহজনক। তিনি কাঁদতে কাঁদতে eআরকি প্রতিনিধিকে জানান, 'পানির স্বাদ অন্যান্য দিনের মতো ছিলো না। সম্ভবত বাথরুমের পানি দিছে আমারে...'
সেদিনের পর থেকে আর লিসাকে দেখা যায়নি। তার ছাত্রী লিয়াও ঠিকমতো কথা বলে না। প্রশ্ন করলে কোনো উত্তর দেয় না। নাজমুল খুবই আপসেট হয়ে স্মৃতিরোমন্থনের জন্য গতকাল সেই রুমালটা বের করেন। হঠাৎ করে তার চোখে পড়ে, ‘ভুলো না আমায়’ এর উপর ছোটো করে লেখা ‘বিসিএসের পর’।
নাজমুল ব্যাপারটা একদমই মেনে নিতে পারেনি। গতকাল থেকে তিনি অনশনে আছেন। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে এর উপযুক্ত বিচার চেয়েছে তার পরিবার। আসুন, আমরা নাজমুলদের পাশে দাঁড়াই...।