ঘরের মধ্যে পাওয়া যায় না জিপির নেটওয়ার্ক। অথচ প্রেমিকার সাথে কিছুক্ষণ কথা না বললে দিনটাই খারাপ যায় প্রেমিক যুবকের। তাই উপায়ান্তর না পেয়ে গত তিন বছর ধরে সমুদ্রের গভীরে গিয়ে ফোনে কথা বলছেন এক প্রেমিক। এই প্রেমিকের নাম সবুজ আহমেদ।
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার বিন্যাকুড়ি-উত্তর বড়ভিটা গ্রামে শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ গ্রামীণফোন ব্যবহার করে আসছেন। তবে এলাকাবাসী জানিয়েছেন, বাড়িতে ইন্টারনেট তো দূরের কথা; পাওয়া যায় না সামান্য কথা বলার নেটওয়ার্ক। অন্যদিকে গ্রামীণফোনের দাবি, সমুদ্রের ৩৮ কিলোমিটার গভীরেও তাদের নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়। খবর: যুগান্তর।
একদম শুরুর ঘটনা যা জানা যায় সেটা হলো, বছর কয়েক আগে রাজশাহীর মেয়ে সালমার সাথে ফেসবুকে পরিচয় হয় নীলফামারীর ছেলে সবুজের৷ পরিচয় থেকেই একসময় প্রেম। চ্যাটিং বাদ দিয়ে শুরু হয় ফোনে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলা। দুইজনের ফোনেই জিপি সিম। এমন সময় দেখা দেয় বিপত্তি৷ সবুজের বাসায় নেটওয়ার্ক পায় না একদমই। বারবার ফোন কেটে যায়৷ অথচ প্রেমিকার সাথে কথা বলার জন্য তার বুকটা খা খা করে। এমন সময় অদ্ভুত এক তথ্য জানতে পারে সবুজ। ঘরে নেটওয়ার্ক না থাকলেও সমুদ্রের আটত্রিশ কিলোমিটার গভীরে পাওয়া যায় জিপির নেটওয়ার্ক। সেদিনই প্রেমের টানে ঘর ছেড়ে প্রথমে ঢাকা চলে আসে সবুজ। ট্রেনিং নেয় ডুবুরি হিসাবে। ট্রেনিং শেষ করেই সোজা চলে যায় সেন্ট মার্টিন। অক্সিজেন মাস্ক নিয়ে সমুদ্রের গভীরে ডুব দিয়ে দেখে ফোনে জিপির ফুল নেটওয়ার্ক। আরাম করে এখন প্রেমিকার সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলতে পারে সবুজ। সমুদ্রের ঢেউয়ের হালকা শব্দ ছাড়া তাদের প্রেমে আর কোনো বাঁধা নেই।
এ বিষয়ে সবুজের কাছে জানতে চাইলে সে মুচকি হেসে eআরকিকে বলে, 'প্রেমিক হতে হলে বন্ধু, গভীর জলের মাছ হতে হয়। জিপির নেটওয়ার্কের কারণে আমি আজ গভীর জলের মাছ।'
আরো বিস্তারিত জানার জন্য সবুজের বাবা মায়ের সাথে কথা বলতে চাইলে তাদের জিপি নাম্বারে ফোন দিয়ে পাওয়া যায়নি। নেটওয়ার্ক কানেকশন ইরোর দেখাচ্ছিলো। কারণ তারা বাসাতেই থাকে, সমুদ্রে থাকে না। উপায়ান্তর না দেখে নীলফামারি গিয়ে সবুজের আব্বা আম্মার কাছে বিষয় কী তা জানতে চাইলে তারা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানায়, 'সবুজ ছোটবেলা থেকেই বড্ড জেদী আর একরোখা টাইপের। নিজের অধিকার বুঝে নেয়ার জন্য দুনিয়ার যেকোনো জায়গায় যেতে পারে। এখন যেমন জিপির নেটওয়ার্ক পেতে একরকম সমুদ্রেই বসবাস করছে।'
সবুজের আম্মা কান্নাজড়িত গলায় বলেন, 'গত তিনটা বছর ছেলেটারে দেখি না। আমার পোড়া কপাল এই জিপির নেটওয়ার্ক আমার বুক খালি করে দিয়েছে। তিনি জনতার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়ে দেন, সমুদ্রের এতো গভীরে নেটওয়ার্ক দিলে আর কত মায়ের বুক খালি হবে? কবে হুশ ফিরবে জিপির?'
সবশেষে জিপির এক শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তার কাছে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, 'আমাদের স্লোগানটাই তো এরকম, চলো বহুদূর। মানে ঘরের মধ্যে নেটওয়ার্ক পাবা না। নেটওয়ার্ক পেতে তোমাকে বহুদূর যেতে হবে৷ আর সমুদ্রের আটত্রিশ কিলোমিটার গভীরের চাইতে বহুদূর আর কী হতে পারে!'