আজ আন্তর্জাতিক সহনশীলতা দিবস। সকাল থেকেই শাহবাগে জমায়েত হচ্ছিলো নানা সংগঠন। সবাইকে সাথে নিয়ে, কাঁধ মিলিয়ে চলার জন্য একত্র হতে চাওয়া সংগঠনের স্লোগান ছিলো একটাই—এসো সহনশীলতার চর্চা করি, অন্যের মতামতকে শ্রদ্ধা করি।
এই উদাত্ত আহ্বানে সবাই সাড়া দিলেও বিপত্তিটা বাঁধে প্রোগ্রামের শুরু কারা করবে সেটা নিয়ে।
প্রথম বিতর্কটা শুরু হয় সহনশীলতা দিবসের মিছিল শেষে কারা আগে বক্তব্য দেবে সেটা নিয়ে। একটা গ্রুপ দাবি করেছিল, তারা অন্য যেকোনো দলের চেয়ে বেশি সহনশীল। সহনশীলতার ইতিহাসে তাদের পদচারণা অনেক পুরনো। অন্য গ্রুপ পাল্টা যুক্তি দেয়, পুরনো হলেও তাদের সহনশীলতার মধ্যে কোনো ডায়নামিজম নেই। সহনশীলতা মানে মুখ বুঝে থাকা নয়, বরং অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেয়া। সেই বিবেচনায় আমরা অনেক আধুনিক, সবার প্রথমে বক্তব্য আমাদের দেয়া দরকার।
বাকবিতণ্ডা কিছুক্ষণের মধ্যেই রূপ নেয় ঠেলাঠেলিতে, এবং ঠেলাঠেলি থেকে চড়-থাপ্পড়ের পর্যায়ে। সহনশীলতার চর্চায় যেন উভয়পক্ষ সমান উৎসাহী—হাতাহাতির সমান তালে চলছিলো গগনবিদারী স্লোগান। একদল চিৎকার করছিল সহনশীলতা মানেই শ্রদ্ধা! আরেক দল তারচেয়ে উঁচু গলায় বলছিল, সহনশীলতা মানেই ঐক্য!
এদিকে, পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলে দুপক্ষই একমত হয়—পুলিশ আমাদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছে! সহনশীলতা দিবসে পুলিশের এমন অসহনশীলতা আমরা কিছুতেই মেনে নিতে পারি না। আমরা পুলিশের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলে তাদের সহনশীলতার উচিত শিক্ষা দিয়েই শাহবাগ ছাড়ব। সহনশীলতার প্রশ্নে আমরা একচুল পরিমান ছাড় দিতে প্রস্তুত নই।
এদিকে কে প্রথমে বক্তব্য রাখবে সেটা ঠিক করার জন্য এক অভিনব প্রস্তাব এসেছিলো একজনের কাছ থেকে। যারা প্রথমে বক্তব্য রাখতে চায় তাদেরকে সামনে এনে নিজেদের মধ্যে চেয়ার দিয়ে মারামারি করার প্রস্তাব দেয় একজন। যারা চেয়ারের আঘাত সহ্য করেও টুঁ শব্দ করবে না তাদের দলের নেতাই প্রথমে বক্তব্য রাখবে বলে ঠিক করা হয়।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, উভয় পক্ষ শাহবাগের চত্বরে বসে চেয়ার দিয়ে মারামারি করে যাচ্ছে, যে যাকে পাচ্ছে তাকেই উদুম কেলানি দিলেও কেউ কিছু বলছে না। হয়ত এমন সহনশীলতাই আমরা চেয়েছিলাম যেখানে বক্তব্য দেয়াটা মূখ্য না হয়ে নিজেদের সহনশীলতার পরিচয় দেয়াটাই মূখ্য হয়ে দাঁড়াবে।