১৯৬৫ সাল; ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের উত্তেজনার দিনরাত্রি। মিয়ানওয়ালির এক আধ্যাত্মিক সাধক এক তরুণকে ডেকে বলেন, তুমি বাবা একটু করাচিতে যাও। আমার ছোট ভাই পুলিশে কাজ করে। ও এসব ঢিশুম-ঢুশুম যুদ্ধ করে মরুকগে; তুমি আমার ভাইয়ের স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে এসো।
তরুণটি মনে মনে হাসে; আধ্যাত্মিক পুরুষ করাচিকে অনিরাপদ ভাবছেন; আর মিয়ানওয়ালিকে নিরাপদ ভাবছেন; কিন্তু যুদ্ধ বিমান যে কোন জায়গায় আঘাত হানতে পারে।
তরুণটি করাচিতে পৌঁছে সেই পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করে তার বড় ভাইয়ের দুঃশ্চিন্তার কথা জানায়। পুলিশ কর্মকর্তা হেসে বলে, এখন তুমি ফিরে যাও; সেরকম পরিস্থিতি দেখলে আমি ওদের পাঠিয়ে দেবো।
পুলিশ কর্মকর্তাটি তরুণকে ট্রেনের প্রথম শ্রেণীর টিকেট কেটে দেয়। কিন্তু রেলস্টেশানে পৌঁছাতে একটু দেরি হওয়ায় দৌড়ে তাকে চলন্ত ট্রেনের তৃতীয় শ্রেণীর একটি কামরায় উঠতে হয়। সে ভাবে; ট্রেন এরপরে যেখানে থামবে; সেখানে নেমে আবার ফার্স্ট ক্লাসের বগিতে ওঠা যাবে।
থার্ড ক্লাস বগিটি মানুষে গিজ গিজ করছে; সেখানে খই-এর মতো দেশপ্রেম ফুটছে। কোনমতে একটা বসার সিট পায় তরুণ। পাশে বসে এক রিটায়ার্ড জওয়ান; যে যুদ্ধের বিশেষ ডাক পেয়ে ভীষণ উত্তেজিত। ওপরে বাংকারে শুয়ে পান মুখে ফত ফত করে এক মোল্লা খুব ভারত বিদ্বেষী লেকচার দিচ্ছে।
তরুণ বিরক্ত হয়ে বলে, ভারত তো পাকিস্তানের চেয়ে দশগুণ বড়ো একটি দেশ; ওদের সেনা সামর্থ্য অনেক বেশি। তাই এ যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে পাকিস্তান হেরে যাবে। এরচেয়ে সমঝোতার মাধ্যমে যুদ্ধের অবসান হওয়াই ভালো।
মোল্লা ক্ষেপে গিয়ে নীচে নেমে তরুণের শার্টে পানের পিক ফেলে বলে, অই ভারতের দালাল চুপ কর।
রিটায়ার্ড জওয়ান সন্দেহ প্রকাশ করে, এ নিশ্চয়ই ভারতের গুপ্তচর।
গুপ্তচর শোনার পর অনেকগুলো হাত-পা এগিয়ে আসে তরুণটিকে পিষে ফেলতে। এক সহৃদয় ব্যক্তি রেল পুলিশে খবর দিয়ে এনে তরুণটিকে উদ্ধার করে।
পুলিশ তরুণটিকে তার টিকেট অনুযায়ী ফার্স্ট ক্লাসে নিয়ে যায়। সেখানে পুলিশের এক সিনিয়ার কর্মকর্তা বসে মিটিমিটি হাসছিলো তরুণটিকে দেখে।
তরুণটি তার কাছে অনুযোগ করে, খুব যৌক্তিক কথা বলে সে আজ প্রাণ হারাতে বসেছিলো। পুলিশ কর্মকর্তা তাকে একটি তোয়ালে দিয়ে বলে, নেক্সট স্টেশানে নেমে তোয়ালে দিয়ে মুখ ঢেকে পালিয়ে যান। বাসে চেপে মিয়ানওয়ালি যান। এই ট্রেনে থাকা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ আপনার জন্য। কারণ অক্ষমের দেশপ্রেমের বিগিড় উঠলে তা খুনোখুনিতে পর্যবসিত হতে বাধ্য।
তরুণটি আকুল হয়ে বলে, কিন্তু আমি ভুলটা কী বললাম; যা সত্যি তাই তো বলেছি।
পুলিশ হো হো করে হেসে বলে, ফার্স্ট ক্লাসের আলাপ থার্ড ক্লাসে গিয়ে করলে যা হবার কথা; আপনার সেটাই হয়েছে ভায়া।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন