২০০৩ সালের কথা। ভারতের মাঠে নিউজিল্যান্ডের সাথে সিরিজ চলছে। মোহালি টেস্ট। আমি (শচীন টেন্ডুলকার) আর রাহুল (দ্রাবিড়) ব্যাটিং করছি তখন। বোলিং করছিল ক্রিস কেয়ার্নস। আর যে বোলিং… এমনভাবে বল রিভার্স স্যুইং করাচ্ছিল যে আমি বা রাহুল, দুইজনের জন্য ব্যাটিং করাটা হয়ে পড়েছিল খুবই দুরূহ! প্রতি ওভারেই দুই বা তিনটা করে বল আমরা পরাস্ত হচ্ছিলাম।
এখন উপায়? আমরাই যদি এর কোনো সমাধান বের করতে না পারি, পরের ব্যাটসম্যানদের অবস্থা তো আরও ভয়াবহ হবে! আর রিভার্স স্যুইং করানোর যে মূল উপায়, অর্থাৎ বলের শাইনি সাইডটা কোনদিকে রাখছে কেয়ার্নস, সেটা ব্যাটিং করতে দাঁড়িয়ে কোনোভাবেই বোঝা যাচ্ছে না। রিভার্স স্যুইঙের ব্যাপারটা একটু বলে রাখি। বলের একদিকের শাইন ঠিক রেখে আরেকদিকের অবস্থা একটু খারাপ হলেই রিভার্স স্যুইং করানো যায়। শাইনি সাইড বামে রাখলে বল আউটসুইং করবে, ডানে রাখলে বল ইনসুইং করবে।
কেয়ার্নসের একটা ওভার শেষ হলে আমি রাহুলকে বললাম, একটা উপায় মাথায় এসেছে। রাহুল বলল, ঠিক আছে, ড্রেসিংরুমে গিয়ে তোমার উপায়টা নিয়ে কথা বলব। আমি বললাম, আরে না, এখনই একটা সমাধান বের করে ফেলেছি। তুমি ব্যাটিং করার সময় কেয়ার্নস যখন বোলিং করবে, তার কাছে কে দাঁড়াবে? তুমি না আমি?
তুমি।
ফাইন। আর আমি দেখতে পারব কেয়ার্নস বলের শাইনিংটা কোন পাশে রেখেছে, রাইট?
তাতে কী লাভ শচীন? তুমি দেখলে তো আমার ব্যাটিঙে কোনো উপকার হবে না!
হবে বৎস! তুমি তাকাবে আমার হাতের দিকে। আমি বামহাতে ব্যাট ধরা থাকলে বল হবে আউটসুইং। ডানহাতে ব্যাট ধরা থাকলে বল হবে ইনসুইং।
তারপর খেলা শুরু হলো। আমরা বেশকিছু দৃষ্টিনন্দন কাভার ড্রাইভ, ব্যাক ড্রাইভ দেখলাম। কেয়ার্নস কিছুতেই বুঝতে পারছিল না, এতক্ষণ বুঝতে না পারা তার বলগুলো কীভাবে আমরা খুব সহজে এখন খেলতে পারছি! একসময় বাড়ি-টাড়ি খেয়ে কেয়ার্নস তার রিদমটাই হারিয়ে ফেলল!
নিউজিল্যান্ডের প্লেয়াররা ধারণা করল কিছু একটা প্ল্যান আমরা করেছি। বিশেষ করে নন প্লেয়িং এন্ডে দাঁড়িয়ে আমার ব্যাট এই হাত-ওই হাত করাতে আমার ধারণা ওরা ব্যাপারটা ধরতে পেরেছিল। এইবার কেয়ার্নস ক্রস সিমে বল ধরল। এইভাবে ধরলে আমি কী আর, কেয়ার্নস নিজেও দেখতে পাবে না বলের শাইনিং পার্ট কোনদিকে। বলটা করেই সব ফিল্ডার ও কেয়ার্নস আমার দিকে তাকাল, এখন আমি কোনদিকে ব্যাট রেখেছি। কিন্তু ওরা তো জানে না, আমি রাহুলকে এটাও বলে রেখেছিলাম যে, কোনো বল আমি যদি বুঝতে না পারি, তাহলে ব্যাটটা আমি দুই হাতেই ধরে রাখব!
তথ্যসূত্র: টাইমস অফ ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত শচীন টেন্ডুলকারের সাক্ষাৎকারের একটি ভিডিওচিত্র
মূল ভিডিওটি দেখতে পারেন
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন