সাঁতার আর দৌড়, অলিম্পিকের বহু ইভেন্টের মধ্যে এই দুটি সম্ভবত সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং উপভোগ্য, কারণ সেকেন্ডের ক্ষুদ্রাংশ সময়ের ব্যবধানে এখানে বিজয়ী নির্ধারিত হয়। তাই এখানে বিজয়ী হতে খেলোয়াড়েরা নিজেদের সর্বোচ্চ নৈপুণ্যের পাশপাশি সম্ভব হলে কিছুটা কৌশলেরও আশ্রয় নেন। অলিম্পিক সুইমিং পুলের ৪ নম্বর লেনে সাঁতরানোটাও এই রকমই একটি কৌশল।
একটি অলিম্পিক সুইমিং পুলে মোট ৮ টি লেন থাকে। লেনগুলো ভাগ হয় কোয়ালিফাইং রাউন্ডে কোন সুইমার কেমন করেছেন, তার ভিত্তিতে। সবচেয়ে দ্রুত সাঁতরানো প্রতিযোগী প্রথম লেন আর সবচেয়ে শেষে সাঁতার শেষ করা ব্যক্তি ৮ নম্বর লেন পান, বিষয়টা এমন নয়। এখানে সবার চোখ থাকে ৪ নম্বর লেনের দিকে। কোয়ালিফাইং রাউন্ডে যিনি প্রথম হন, তিনি ফাইনালে ৪ নম্বর লেনে সাঁতার কাটার সুযোগ পান। তার মানে, যিনি গোল্ড মেডেল ফেবারিট, তিনি এই চতুর্থ লেনে সাঁতারের সুযোগ পান। কোয়ালিফাইং রাউন্ডে দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারী ৩ অথবা ৫ নম্বর লেনে সাঁতরান। যাদের স্থান শেষেরদিকে, তারা দুই পাশের লেনগুলোতে সাঁতরান।
এবার আসুন বুঝে নেই কেন এই লেনটি কৌশলগত দিক থেকে এত গুরুত্বপূর্ণ! ঘটনা সহজ ফিজিক্স, পুলের মাঝামাঝি হওয়ায় এই লেনে ঢেউ সবচেয়ে কম হয়। ঢেউ কম হওয়া মানে বাধা কম, অর্থাৎ, প্রতিযোগীদের সাঁতারের গতি এই লেনেই সবচেয়ে কম বাধাপ্রাপ্ত হয়। এই লেনের দুই পাশের দুটি লেনে যারা সাঁতরায়, তারাই মূলত ৪ নম্বর লেনের সাঁতারুর মূল প্রতিপক্ষ, কারণ কোয়ালিফাইং রাউন্ডে তারাই দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে। ৪ নম্বর লেনে সাঁতরালে খুব সহজেই এই ৩ ও ৫ নম্বর লেনের সাঁতারুর উপর নজর রাখা যায়।
এজন্যই ৪ নম্বর লেন ছাড়া অন্য কোনো লেন থেকে কেউ পদক জিতলে সেটিকে আপসেট হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে অলিম্পিকের মতো প্রতিযোগিতায় যেকোন কিছুই হতে পারে। যেমন- চলমান টোকিও অলিম্পিকসেই এইরকম একটি আপসেটের জন্ম দিয়েছেন তিউনিসিয়ার সাঁতারু আহমেদ হাফনাউই। কোয়ালিফাইং রাউন্ডে সবার শেষে সাঁতার শেষ করায় ফাইনালে তার লেন নম্বর ছিল ৮। কেউ তাকে গোল্ড মেডেলের জন্য বিবেচনা করেননি। কিন্তু ফাইনালে এই ৮ নম্বর লেনে সাঁতরে গোল্ড মেডেল জিতে তিনি সবাইকে চমকে দিয়েছেন তিনি!
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন