বাংলাদেশ ক্রিকেটে সাকিব আল হাসান আর বিতর্ক যেন সমার্থক হয়ে গেছে। ক্রিকেটে নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে তাঁকে নিয়ে যতটা আলোচনা হয়, মাঝে মাঝে তার বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ও মন্তব্য নিয়ে এর চেয়েও বেশি সমালোচনা হয়। বাংলাদেশ তো বটেই, বিশ্ব ক্রিকেটেই সাকিবের মতো ‘আমি যেখানে, বিতর্ক সেখানে’ ক্রিকেটার কমই আছে। তবে সাকিব যে সবসময় শুধু অনর্থক বিতর্কই তৈরি করেন, তা না। অপ্রিয় সত্য কথা বলেও অনেক সময় সমালোচকদের মুখের খোরাক জুগিয়েছেন তিনি। কোনো প্রলেপ ছাড়া নিপাট সত্য কথা বলাতে সাকিবের জুড়ি নেই। সাকিব ইস্যুতে আবারও যখন বাংলাদেশের ক্রিকেটাঙ্গন সরগরম, তখন তাঁর কিছু আলোচিত, অপ্রিয় সত্যবচন ও বিতর্কিত মন্তবগুলো পাঠককে পুনরায় মনে করিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছে eআরকি।
১. আমি প্ল্যান করে কিছু বলি না। যা মনে আসে, তা-ই বলি। যা বিশ্বাস করি, তা-ই বলি। কথায় কথায় প্রসঙ্গ এসেছে, যা ঠিক মনে করি, বলে দিয়েছি।
আইপিএল খেলতে ছুটির দরখাস্ত দেওয়া এবং এ নিয়ে বিতর্কে আকরাম খান ও নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের সমালোচনা প্রসঙ্গে
২. টাকাটাও একটা ফ্যাক্টর। আমার কথাই বলি। বয়স ৩৪ হয়ে গেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে বড়জোর আর তিন/চার বছর খেলতে পারব। দুই বছরও হতে পারে। কপাল খারাপ থাকলে এক বছর। আর্থিক দিকটা ভাবা কি অন্যায়?
আইপিএলের আর্থিক প্রভাব প্রসঙ্গে
৩. বোর্ড প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সম্পর্ক তো ভালো থাকারই কথা, তাই না? মেসিকে দেখেন, বার্সার সব প্রেসিডেন্টের সঙ্গেই তো ওর ভালো সম্পর্ক। শুধু গতবারেরটা ছাড়া। নতুন প্রেসিডেন্ট এসে কী করেছেন, মেসিকে হাতে পায়ে ধরে হলেও বার্সায় রাখতে চেয়েছে। প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো থাকাটাই তো স্বাভাবিক।
বোর্ড প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ভালো সম্পর্কের প্রসঙ্গে
৪. আমার কাছে মনে হয়, কখনও যদি বিসিবির সভাপতির মতো পদে যেতে পারি তাহলে আমি যে কাজ করব ওটা বাংলাদেশের আর কেউ করতে পারবে না। অবশ্যই, ক্রিকেটে থাকলে আর বিসিবি সভাপতি হওয়ার সুযোগ আসলে আমি হতে চাইব। আমি জানি, আমি বিসিবির ইতিহাসের সেরা সভাপতি হবো। খুব ভালোভাবে বিশ্বাস করি, আমার পক্ষে এটা সম্ভব।
ভবিষ্যতে বিসিবি প্রেসিডেন্ট পদ প্রসঙ্গে
৫. যেভাবেই হোক, আমাকে ক্রিকেটে রাখেন। নইলে আপনাদের লাইফ বোরিং হয়ে যাবে। মিডিয়ার সাকিবকে দরকার।
নিজের বিভিন্ন বিতর্কে সংবাদমাধ্যমে যে ঝড় ওঠে, সে প্রসঙ্গে রসিকতা করে
৬. ওদের মূল দল বাংলাদেশের সঙ্গে পারছে না বলেই নাকি এমন দল পাঠিয়েছে তারা!
জানুয়ারিতে বাংলাদেশ সফরে আসা দ্বিতীয় সারির ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল নিয়ে করা প্রশ্নের জবাবে
৭. জয়–পরাজয় থাকবেই, চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই!
এই দ্বিতীয় সারির ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের সঙ্গে হারার পর
৮. ড্রাইভার গিয়েছে শিশিরকে ড্রপ করতে। কিন্তু আলাইনা চায় আইসক্রিম খেতে যেতে! কিভাবে যাই?
২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে ফেসবুকে এই স্ট্যাটাসটি দেন সাকিব। এরপর এটি নিয়ে ফেসবুকে তীব্র আলোচনা ও গুঞ্জন শুরু হয়। এর একদিন পরই ঘোষণা আসে রাইড শেয়ারিং সার্ভিস উবারের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হলেন সাকিব আল হাসান
৯. আমরা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও শ্রীলংকার সঙ্গে হারলে কোনো কথা হয় না। আফগানিস্তানের কাছে হারলে সবার খারাপ লাগে। তারা টি২০ র্যাংকিংয়ে সাতে। আর প্রথমে যে দুটি দলের নাম বললাম তাদের র্যাংকিং আট ও নয়। আমি জানি না আমাদের দেশের মানুষের প্রত্যাশা কী।
২০১৯ সালে ত্রিদেশীয় টি২০ সিরিজে আফগানিস্তানের সঙ্গে হারার পর
১০. এখন তাহলে টেস্ট থেকে রিটায়ার করে ফেলা যায়। শুধু টি-টোয়েন্টি খেলব। টি-টোয়েন্টি ইজ দ্য রিয়েল ক্রিকেট।
২০১৬ সালের অক্টোবরে ক্রীড়া সাংবাদিক উৎপল শুভ্র’র সঙ্গে আনানুষ্ঠানিক আলাপে
১১. কেন, বাংলাদেশের সিরিজটা বাদ দিয়ে যদি আইপিএল খেলি, সমস্যা কী?
২০১৪ সালের দিকে বাংলাদেশের একটা সম্ভাব্য সিরিজের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত আইপিএলের সময়টা মিলে যাওয়ায় জাতীয় দল না আইপিএল, এই প্রশ্নের উত্তরে
১২. টি-টোয়েন্টিতে দক্ষতা যেমন দরকার, শক্তিরও দরকার আছে। দুটিই না থাকলে আপনি পারবেন না। টি-টোয়েন্টির জন্য সবচেয়ে বেশি টাকা পায় কারা? গেইল, ডি ভিলিয়ার্স—কী পাওয়ার ওদের খেলায়! জাতিগতভাবেই আমরা শারীরিকভাবে ওদের চেয়ে পিছিয়ে। জন্মের পর থেকে আমরা খাই সবজি খিচুড়ি...নরম করে রান্না করা। এই তো আমাদের খাওয়া, তাই না! আর ওরা ছোটবেলা থেকে অরেঞ্জ জুস খায়। আমাদের হয়তো পাঁচ-দশ ভাগ শিশু এই খাওয়াটা পায়। আমাদের তো ওই সামর্থ্যটা নেই। আর খাওয়াবেন কী, তা-ও তো ভেজাল। আপনি অরেঞ্জ জুস খাওয়াবেন? ফরমালিনে ভরা। বাংলাদেশে নাকি তিনটা ফলে সবচেয়ে বেশি ফরমালিন। কমলা, আপেল আর মাল্টা। যে তিনটা ফল বেশি খাওয়া উচিত, সেগুলোই বাংলাদেশে খাওয়া যায় না।
২০১৮ সালে প্রথম আলোর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে সাকিব
১৩. সবচেয়ে ভালো দেশের বাইরে খেলা। দুই বছর দেশে খেলা না হোক। দেশের মানুষের প্রত্যাশা কমে যাক, তাহলে ভালো হবে। বাংলাদেশের ক্রিকেটে প্রত্যাশার সীমাটা কোন পর্যায়ের হওয়া উচিত, এটা আমাদের বোঝা উচিত। হ্যাঁ, আমরা যখন ও রকম খেলোয়াড় তৈরি করব, তখন আমরা বলতে পারব। কিন্তু আমাদের পাইপলাইনে না আছে ও রকম খেলোয়াড়, না আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটের মান অত ভালো, না আমাদের অনুশীলন-সুবিধা ভালো, না আমাদের কোচিং স্টাফ ও রকম বিশ্বমানের। আমরা যারা হয়ে গেছি, যতটুকু হয়েছি ততটুকুই। হয়তো নিজেদের পরিশ্রমে, কয়েকজনের চেষ্টায় আমরা কয়েকজন এই পর্যায়ে এসে গেছি। ব্যক্তিগতভাবে আমরা কেউ কেউ হয়তো একটু উন্নতি করতে পারব, কিন্তু দল হিসেবে খুব বেশি এগোব কি না তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। টেস্টে আমাদের রানের গড় ৪০-৪৫ হতে হবে। সে জন্য তো খেলোয়াড় লাগবে।
২০১৮ সালে প্রথম আলোর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে সাকিব
১৪. ক্রিকেট-সংশ্লিষ্ট সবারই...সেটা নির্বাচক বলেন, কোচ বলেন, বোর্ড সভাপতি বলেন, বোর্ড সদস্য বলেন বা আমরা খেলোয়াড়দের। সবারই নিজেদের জায়গা থেকে কিছু করার আছে। নির্দিষ্ট কাউকে দায়ী করা যাবে না। সব জায়গা যখন ঠিক হবে, তখন আমাদের দলটাও ভালো হবে। এই বিশ্বকাপ যা হওয়ার হয়েছে। এখন ২০১৯ বিশ্বকাপের প্রতি আমাদের অনেক বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত। ওখানে খারাপ খেললে খুব বড়সড় সমস্যা হয়ে যেতে পারে। আসলে ওই বিশ্বকাপই তো মানুষ মনে রাখে।
২০১৮ সালের টি২০ বিশ্বকাপে প্রত্যাশিত সাফল্য না পাওয়ার দায় কার? এ প্রশ্নের জবাবে সাকিব
১৫. আর আয়ের কথা যে বললেন, জাতীয় দলের একটা ক্রিকেটারকে যে মান মেনে চলতে হয়...বললে হয়তো খারাপ শোনা যাবে, আমার বেতন কোন দিক দিয়ে আসে কোন দিক দিয়ে যায় আমি জানি না। একটা ভালো রেস্টুরেন্টে যান, পাঁচ-ছয়জন লাঞ্চ করেন, ডিনার করেন, আপনার ২০-২৫ হাজার টাকা শেষ।
জাতীয় দলের ক্রিকেদােরদের আয় নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে সাকিব
১৬. যদি দেশপ্রেমের কথা বলি, বাংলাদেশের অনেক মানুষের মধ্যেই সেটা নেই। অনেকেই মুখে অনেক কথা বলতে পারে। কিন্তু যদি তাকে একটা চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড় করিয়ে দেন, যখন আপনি প্রমাণ করতে বলবেন দেশপ্রেম আছে কি নেই, তখন দেখবেন ৯০ শতাংশ লোক সরে গেছে।
ক্রিকেটারদের দেশপ্রেম নিয়ে করা প্রশ্নের উত্তর
১৭. মেসেজ পেয়েছি কিন্তু পড়িনি। জানতাম না যে ওখানে ফটোসেশন আছে!
২০১৯ সালে বিশ্বকাপগামী দলের আনুষ্ঠানিক ফটোসেশন মিস করা প্রসঙ্গে
১৮. যখন সুমন ভাই ক্যাপ্টেন ছিলেন তখন সবাই উনার জন্যই ভালো খেলতে চাইত। উনি সবার ভেতর সেই সম্মান অর্জন করতে পেরেছিলেন। আমিও চাই তেমন হতে।
২০১১ বিশ্বকাপের আগে
১৯. ভাবলে চাপ, না ভাবলে কোনো চাপ নয়। ওভাবেই চিন্তা করি। বাইরে কী কথা হচ্ছে, কে কী ভাবছে, সেটা মোটেও ভাবি না। এ কারণে চাপ আমাকে ঘিরে ধরে না। মাঠের খেলায় মনোযোগী থাকি। সফল না হলে তা নিয়ে ভাবি না।
অধিনায়কত্বের চাপ প্রসঙ্গে
২০. এখন কম কথা বলি, আগে মনে হয় দলের ভেতর আরও বেশি সম্পৃক্ত থাকতাম। আগে আরও বেশি কাজ করতাম!
২০১১ আর ২০১৮ সালের অধিনায়ক সাকিবের পার্থক্য প্রসঙ্গে
২১. বড় কারণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উনি আমাকে একবার বলেছিলেন, ‘দেখো, আগে আমরা শচীনের নাম শুনতাম। ইমরান খানের কথা বলত মানুষ। কিন্তু আমাদের বলার মতো ও রকম কেউ ছিল না। এখন আমরা তোমার কথা বলতে পারি।
২০১৯ বিশ্বকাপে অসাধারণ সাফল্যের পেছনের উদ্দীপক প্রসঙ্গে
২২. আমি যখন খেলতে নামব, স্বাভাবিকভাবেই তো ‘লাস্ট’ হওয়ার জন্য খেলতে নামব না। একটা ছাত্র স্কুলে যতই কম যাক, কম পড়ুক; ও তো ফার্স্ট হওয়ার জন্যই পরীক্ষা দেয়।
এক বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে খেলায় ফিরে মনোবল ফিরে পাওয়া প্রসঙ্গে
২৩. বেশি চাপ থাকলে আরও বেশি মজা লাগে। আর মাঠে নামলেই কীভাবে যেন আমার মাথা খুলে যায়। কীভাবে যেন সব ঠিকঠাক করে ফেলি।
উৎপল শুভ্রকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে
২৪. যদি দলের ৯ জন খেলোয়াড়ও বিশ্বাস করে যে আমাদের পক্ষে জেতা সম্ভব তবুও কিছুই হবে না । দলের ১১ জন খেলোয়াড়কেই বিশ্বাস করতে হবে আমাদের জেতা সম্ভব তবেই সব সম্ভব।
২০১১ বিশ্বকাপ শুরুর আগে
২৫. গ্রুপিং! অবশ্যই আমাদের দলে দুটো গ্রুপ আছে । এক ব্যাটিং গ্রুপ আর দুই বোলিং গ্রুপ।
দলে গ্রুপিং আছে কি না সে প্রশ্নের জবাবে
২৬. যখন ছেলেটি বলল , ফুলের দাম লাগবে না । একটা ছক্কা মাইরেন । তখন সারা শরীর আমার শিউরে উঠলো।
ফুলওয়ালা একটি ছেলেকে ফুলের দাম দিতে গেলে ছক্কার আবদারে
২৭. আমি বা বাংলাদেশের কেউ খেললেই কেবল বাংলাদেশের মানুষ আইপিএলের খেলা দেখে এবং তাদের আগ্রহ থাকে।
ভারতের আইপিএলে সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে
২৮. আমরা যতোটা স্বামী স্ত্রী তার চেয়েও ভালো বন্ধু।
স্ত্রী শিশির সম্পর্কে
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন