ম্যাথিউ ওয়ালজার। ২৪ বছর বয়সী তরুণ। ভুগছে সেরিব্রাল পালসি নামক রোগে। এটি এক ধরনের স্নায়বিক সমস্যা, যার ফলে মানুষের ভারসাম্য রাখার ক্ষমতা প্রভাবিত হয়, যা হাঁটাচলার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে।
২০১২ সালে তার বয়স ছিল মাত্র ১৬ বছর। তখন ম্যাথিউ কিশোর পেরোনোর মুখে সকল প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে নিজের সব কাজ করতে পারলেও পারতো না ঝুঁকে নিজের জুতার ফিতা বাঁধতে। তাই সে বিখ্যাত জুতার ব্রান্ড নাইকি (Nike)-কে চিঠি লেখে এবং জানায় তার অসুবিধার কথা। সে চিঠিতে লিখে, ‘আমার স্বপ্ন হল আমার পছন্দের কলেজে যাওয়া এবং যাওয়ার সময় প্রতিদিন আমার জুতা কে বেঁধে দিবে তা নিয়ে চিন্তা না করা।’ সে আরও বলে, ‘১৬ বছর বয়সে আমি নিজে নিজে আমার পোশাক পরতে পারলেও আমার জুতা বেঁধে দিতে দরকার হয় বাবা-মাকে। যেই কিশোর প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছে একজন আত্মনির্ভরশীল মানুষ হয়ে উঠতে, তার জন্য এ ব্যাপারটি অত্যন্ত হতাশাজনক এবং মাঝেমাঝে লজ্জারও কারণ।’
সবাইকে অবাক করে দিয়ে নাইকি-ও ম্যাথিউকে অনুপ্রেরণা ধরে তার মত শারিরীক ত্রুটিতে ভোগা মানুষের জন্য তৈরি করে ফেলে ‘নাইকি ফ্লাইইজি (Nike FlyEasy)’। পরবর্তীতে পাল্টে হয় ‘নাইকি গো ফ্লাইইজি (Nike Go FlyEasy)’।
নাইকি গো ফ্লাইইজি হল শারীরিক ত্রুটিযুক্ত মানুষের জন্য তৈরি নাইকির বিশেষ জুতা। এর বিশেষত্ব হচ্ছে, এই জুতা পরতে আপনার ঝুকতে হবে না বা জুতার ফিতা বাঁধতে সংগ্রামও করতে হবে না। কারণ জুতার কোনো ফিতাই নেই! জুতাটি মাঝ থেকে বাঁকানো যায়, যার ফলে সহজেই পা গলে যায় ভেতরে আবার বেরিয়েও আসে হাতের কোনো সাহায্য ছাড়া। শারিরীক অক্ষমতায় ভোগা মানুষদের জন্য তৈরি করা হলেও নাইকি গো ফ্লাইইজি বর্তমানে গর্ভবতী মা, স্থূলতায় ভোগা রোগীরা থেকে শুরু করে জুতা বাঁধতেও যাদের সময় নেই, বা জুতা বাঁধতেও যাদের আলসেমি তাদের জন্যও বেশ কাজের।
নাইকি জানায়, জুতাটি পাওয়া যাবে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকে। দাম নিশ্চিত করা হয়েছে ১২০ ডলার, যা প্রাথমিকভাবে দেওয়া হবে কিছু নির্দিষ্ট ক্রেতাদের। এছাড়াও নাইকি এই জুতা বানানোর পেছনের ঘটনা নিয়ে একটি ভিডিও তৈরি করেছে। ‘নাইকি গো ফ্লাইইজি’ জুতাটি পরে উড়তে না পারলেও অন্যের সাহায্য ছাড়া জুতা পরতে পারায় আত্মনির্ভরশীলতার স্বাদ পেয়ে অনেকে হয়তোবা খুশিতেই সাত আসমানে উড়বে!
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন