ভ্রমণপ্রিয় মানুষেরা প্রায়সময়ই বিভিন্ন দেশে গিয়ে পড়ে নানা ‘স্ক্যাম’ বা ধোকাবাজের চক্করে। চিকন বুদ্ধির বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের কাছে বেড়াতে আসা বিদেশি ট্যুরিস্টদের ধরা খেয়ে ফতুর হয়ে যাওয়ার ঘটনার সাথে আমরা পরিচিত। কিন্তু বিদেশি পর্যটকদের বোকা বানাতে শুধু বাংলাদেশিরাই পারদর্শী- এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। বিশ্বের অনেক বিখ্যাত সব পর্যটন শহরেও এমন জোচ্চুরি দেখা যায়। চলুন আজ জেনে নেয়া যাক ভ্রমণকারীদের এমন কিছু জোচ্চুরির ঘটনা, সেই সাথে ভ্রমণপিপাসুরা হতে পারেন সতর্ক।
১# যা দেখছো, তা ‘তা’ না!
বাটপারির জন্য কোন পুরষ্কারের ব্যবস্থা থাকলে সেটার যোগ্য দাবিদার হতো মেক্সিকোর চোরেরা। পর্যটকদের পকেট খালি করার জন্য তারা রাস্তার মোড়ে মোড়ে বসিয়ে রেখেছে নকল এটিএম বুথ। এসব বুথে ক্রেডিট কার্ড ঢোকানো মাত্রই কার্ড আটকে যাবে। টাকা ওঠানো তো দূরে থাক, কার্ড উদ্ধার করাই অসম্ভব এসব নকল বুথ থেকে।
২# চকচক করলেই সোনা হয় না!
দুবাই থেকে সোনা কিনে আনার প্রবণতা পর্যটকদের মধ্যে বহু পুরনো। সোনার প্রতি এই আকর্ষণকে কাজে লাগিয়ে প্রতারকেরা চড়া দামে স্বর্ণের বদলে ধরিয়ে দেয় নকল স্বর্ণ বা ইমিটেশনের গয়না। বাঙালিরা ইমিটেশন আর স্বর্ণের পার্থক্য ধরতে পারলেও সবাই তো আর তা পারে না, অগত্যা চকচকে নকল সোনা নিয়েই বাড়ি ফিরতে হয় তাদের।
৩# পুলিশ হইতে সাবধান!
মোটামুটি সব দেশেই হয়তো পুলিশ গোত্রের সাথে একটু ‘বাম হাতের আদানপ্রদান’ জড়িয়ে থাকে। ইউরোপও এর ব্যতিক্রম নয়। স্পেনের মাদ্রিদ শহরে একদল নকল পুলিশ ঘুরে বেড়ায়, যাদের কাজ হচ্ছে পর্যটকদের মানিব্যাগে নকল ইউরো আছে কিনা তা চেক করার নামে টাকাপয়সা পকেটে পুরে ফেলা।
৪# মিটার নিয়ে বাটপারি!
দুবাই শহরে ঘুরতে গেলে ট্যাক্সিওয়ালারা মিটার নিয়ে বাকি দুনিয়ার মানুষকে বোকা বানাতে পারলেও বাংলাদেশিদের পারবে না। আর এতে সবচেয়ে বড় কৃতিত্বটা এদেশের সিএনজি চালকদের! বাংলাদেশি সিএনজিওয়ালাদের মতো দুবাইয়ের ট্যাক্সিচালকরাও মিটারে যেতে একদমই রাজি হন না। উদ্দেশ্য একটাই, ন্যায্য ভাড়ার চেয়ে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করা। দেশ-বিদেশের সীমানা ছাড়িয়ে এমন ভ্রাতৃত্বের বন্ধন বেশ বিরলই বটে!
৫# ধোলাইখালের কোরিয়ান শাখা!
ঢাকার ধোলাইখালে গেলে যেমন নামীদামী বিদেশি কসমেটিকস ব্র্যান্ডগুলোর ‘ডিসকাউন্ট ফ্যাক্টরি’ পাবেন, তেমনি দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলেও রয়েছে ধোলাইখালের একটি আন্তর্জাতিক শাখা। সিউলে পড়তে আসা বিদেশি ছাত্রীরাই এই নকল মার্কেটের প্রধান ক্রেতা।
৬# সৎসঙ্গে স্বর্গবাস, অচেনা নারীসঙ্গে সর্বনাশ!
আর্জেন্টিনার রাস্তাঘাটে প্রায়ই কিছু সুন্দরী নারীর দেখা পাবেন, যারা আপনাকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ফ্রি টিকেট দিয়ে শো দেখার আমন্ত্রণ জানাবে। এদের আমন্ত্রণে সাড়া দিলেই মুশকিল, কেননা ‘ফ্রি’ শো দেখা শেষ করে ক্লাব থেকে বের হওয়ার সময় আপনার হাতে ধরিয়ে দেওয়া হবে মোটা অংকের এক বিল।
৭# অর্থই অনর্থের মূল!
চীনের বেইজিংয়ে একদল প্রতারক আছে, যাদের ব্যবসার কেন্দ্রবিন্দু রাস্তার মোড়ের টং দোকানগুলো। এসব দোকান থেকে কিছু কেনার পর ক্রেতাকে বাড়তি টাকা ফেরত দেওয়ার সময় তারা জাল টাকা ধরিয়ে দেয়। বলা যায়, বাংলাদেশি বাটপার দোকানিদের জাতভাই এরা!
৮# সৌভাগ্যের দূর্ভাগ্য!
মেক্সিকোর রাস্তাঘাটে ক্রুশ হাতে কিছু নকল ধর্মযাজক ঘুরে বেড়ায়, বিদেশি পর্যটক দেখলেই এরা কাজে নেমে পড়ে। পর্যটকের হাতে ক্রুশ ধরিয়ে দিয়ে বলা শুরু করে পর্যটকটি অত্যন্ত সৌভাগ্যবান, দ্রুতই তার জীবনে আসতে চলেছে আনন্দের সংবাদ। তারপর দাবি করে বসে বিশাল অংকের বখশিস। সেই বখশিস না দিয়ে ইজ্জত নিয়ে পালানোও এক দুঃসহ ব্যাপার!
৯# কফি কাপের ফাঁদ!
গ্রিসের রাস্তায় হাঁটার সময় হঠাৎ করেই এক লোক এসে আপনার গায়ে ধাক্কা লেগে কফির কাপ উলটে দিতে পারে। ভয় নেই, দেখবেন, আশেপাশের কেউ না কেউ এগিয়ে এসেছে আপনাকে সাহায্য করতে। পথচারীদের আন্তরিকতায় মুগ্ধ হয়ে হোটেলে ফিরে দেখবেন, প্যান্টের পকেট থেকে আপনার ওয়ালেটটাই গায়েব!
আসলে কফি ফেলে দেয়া ব্যক্তি আর সাহায্য করা ব্যক্তি দলবেঁধে বোকাসোকা বিদেশিদের পকেট মারার এই কাজটা করে থাকে।
১০# আগে গেলে ‘কার্ড রিডার’ খায়, পরে গেলে সোনা পায়!
লন্ডনে চলাফেরার সময় একটু খেয়াল রাখবেন, যেন আপনার প্যান্টের পেছনের পকেটে ক্রেডিট কার্ড না থাকে। কেননা, কন্টাক্টলেস কার্ড রিডার ব্যবহার করে পকেটমারের দল প্রায়ই ক্রেডিট কার্ড থেকে পয়সা হাতিয়ে নেয়!
১১# ‘কী ঘর বানাইব আমি শূণ্যেরও মাঝার,
লোকে বলে রে ঘরবাড়ি ভালা না আমার!’
হাসন রাজার গানটিকে নেদারল্যান্ডসের প্রতারকেরা একটু বেশিই আক্ষরিকভাবে নিয়েছে। ডাচ হোটেলগুলো বা এয়ার বিএনবির ঘরগুলোর ভাড়া আকাশচুম্বী হওয়ায় প্রতারকেরা অনলাইনে সস্তায় ঘরভাড়ার বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে। পর্যটকেরা অনলাইনে এডভান্স পেমেন্ট করে ঘর বুক করে নেদারল্যান্ডে এসে আবিষ্কার করেন, তাদের ভাড়া করা বাড়ির ঠিকানায় খা খা করছে শূণ্য বাতাস, বড়জোর একটা পানিভরা লেক!
তথ্যসূত্র: বোরডপান্ডা
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন