আজ ১৭ নভেম্বর। নিউটনের তৃতীয় সূত্রকে সত্যতা দান করে ফ্রেন্ডশিপ ডে'র বিপরীতে আজ 'ফেসবুক আনফ্রেন্ড ডে'। তবে 'আনফ্রেন্ড করা' কিংবা 'আনফ্রেন্ডেড হওয়া'— দুটোই আমাদের কাছে দৃষ্টিকটু। আনফ্রেন্ড হলে সবাই অফেন্ডেড ফিল করে। আবার আমরা কাউকে সহজে আনফ্রেন্ড করতেও চাই না আমাদের ইমেজ রক্ষার জন্য। যাকে করবো তার সাথে পরবর্তীতে সম্পর্ক খারাপ হওয়ার একটা ভয় যেন থেকেই যায়। এর ফলে যা নষ্ট হয় সেটা হলো মানসিক শান্তি।
২০১০ সালে কমেডিয়ান ও প্রেজেন্টার জিমি কিমেল অনেকটা মশকরা করেই সোশ্যাল মিডিয়ার জীবন পরিচ্ছন্ন রাখতে এই দিবসটির সূচনা করেন। তবে এখন তা আসলেই পালন করা হয়। চলুন তাই আজ দেখে আসি কোন কারণগুলোর জন্য আপনি একজন মানুষকে আনফ্রেন্ড করবেন—
১# প্রতিনিয়ত রাজনৈতিক উস্কানিমুলক পোস্ট
আমাদের ফ্রেন্ডলিস্টে অবশ্যই এমন কেউ না কেউ আছেন যিনি রাজনীতি ভালবাসেন। রাজনীতিকে ভালবাসা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। তবে টক্সিক রাজনীতিপ্রেমীদের থেকে দূরে থাকুন। কারণ এরা যেকোন বিষয়কে ,যে কোন মুহূর্তে রাজনীতিকেন্দ্রিক করে ফেলার ক্ষমতা রাখে। এছাড়াও সাধারণ কনভারসেশন যারা সাধারণভাবে রাখতে না পেরে রাজনীতিতে নিয়ে তাদেরকে আনফ্রেন্ড করাই উত্তম। কেননা, আপনার মানসিক শান্তি রক্ষার দায়িত্ব কিন্তু আপনারই!
২# সর্বদা বিদ্রুপ এবং আক্রমণকারী
কিছু মানুষ আছে, যারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মানুষকে বিদ্রূপ করে মজা পান। এরা স্থান কাল,পাত্র বিবেচনা না করেই ব্যঙ্গাত্মক পোস্ট করেন, যা সবসময় অ্যাপ্রোপ্রিয়েট নাও হতে পারে। এছাড়াও যাদের মূল টার্গেট হচ্ছে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা, এদের থেকেও দূরত্ব বজায় রাখুন।
৩# যারা সবসময় নেগেটিভিটি স্প্রেড ছড়ায়
কিছু মানুষ ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের ‘হাতে নিয়ে আলোকবর্তিকা’র মতো ‘হাতে নিয়ে নেগেটিভিটি’ প্রচার করেন। এদের প্রোফাইলে গেলে ইহজাগতিক সকল দুঃখের সন্ধান পাওয়া যায়। সুখের দিনেও এরা দুঃখের কথা শেয়ার করেন, আর দুঃখের দিনের কথা বলাই বাহুল্য। এদের পরিহার করুন। মনে রাখবেন, 'Stress is contagious. So is depression'!
৪# সকল ধরনের প্রাক্তন
প্রাক্তন প্রেমিক/প্রেমিকা, বন্ধু, ল্যাব পার্টনার যাই হোক না কেনো, যদি তার সাথে এখন আর সম্পর্ক ভালো না থাকে, তবে নির্দ্বিধায় দূরে থাকুন। কেননা অতীতে ফেলে আসা গুরুত্বপূর্ণ ও ভালো লাগার স্মৃতিগুলো আমাদের মস্তিষ্ক সহজেই মুছে ফেলতে পারে না।
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট এবং 'Facehooked: How facebook affects our emotions, relationships, and our lives' লেখক ফ্লোরেন্স বলেছেন, ৭০ শতাংশ মানুষই তাদের প্রাক্তনের প্রোফাইল ঘেটে তাদের আপডেট জানার চেষ্টা করে।
তবে প্রাক্তনকে আনফ্রেন্ড কিংবা আনফলো 'করতেই' হবে, এমন নয়। এটা তখনই প্রযোজ্য যদি এটি বিশ্রীভাবে আপনার মানসিক স্বাস্থ্যকে আঘাত করে।
৫# যাদেরকে আপনি 'হেইট ফলো' করেন
সোশ্যাল মিডিয়াতে আপনার এমন জিনিসগুলো খুঁজে বের করা উচিত যা আপনাকে উৎসাহিত করে আরও ভালো করতে। কিন্তু তা না করে আমরা অনেক সময় উল্টো কাজটি করি।
সেটা কিভাবে?
একে বলা হয় 'Hate follow'. আপনি একজনকে ফ্রেন্ডলিস্টে রেখেছেন বা ফলো করছেন শুধু যেন তাকে আপনি নিন্দা করতে পারেন। এজন্য আপনি ঘন্টার পর ঘন্টা তার পেছনে ব্যয় করছেন, তার প্রোফাইল ঘাটছেন। এতে ক্ষতি কিন্তু আপনারই হচ্ছে। সুতরাং, নিজের সময় এবং মানসিক শান্তি রক্ষার জন্য হলেও সাত-পাঁচ না ভেবে তাকে আনফ্রেন্ড করে দিন।
৬# তুলনা করার অভ্যাস থাকলে
আমরা মনের অজান্তেই অন্যের ছবির সাথে নিজের জীবনকে তুলনা করে থাকি। ভুলে যাই যে, তুলনা বা Compare কে বলা হয় 'Thief of joy.'
সুতরাং আপনি যদি কোনো বন্ধু, কিংবা অন্যকারো জীবনযাপনকে ঈর্ষা করে চোখ ফেরাতে না পারেন, তাকে আনফ্রেন্ড (সেলিব্রেটি হলে আনফলো) করে দিন।
৭# ধর্মীয় উস্কানিমূলক পোস্টদাতা
অন্য ধর্মের প্রতি সহনশীল নয় এমন মানুষকে ফ্রেন্ডলিস্টে রাখবেন না। কেননা তাদের বিরুদ্ধাচারণ দেখতে দেখতে আপনি নিজেই ক্লান্ত হয়ে যাবেন এবং অসুস্থবোধ করবেন।
এছাড়াও যারা কথায় কথায় ধর্ম টেনে আনেন বা সংঘর্ষের সূচনা করেন, এদেরকেও পরিহার করুন।
৮# সমালোচনা সহ্য করতে না পারলে
অনেকেই আছে যারা নিজের সমালোচনা নিতে পারেন না। আবার অনেকেই আছেন সমালোচনা করেই যান, হোক সেটা পাবলিক পোস্ট বা চায়ের দোকান।
সমালোচনা নিতে না পারলে কী করবেন?
সমালোচনা গ্রহণ করার চেষ্টা করা উচিত প্রথমত। তবে যদি নিতান্তই না পারেন বা মানসিক অশান্তির সম্মুখীন হয়ে থাকেন প্রতিনিয়ত, অবশ্যই সমালোচনাকারীকে আনফ্রেন্ড করুন। ফেসবুক আপনার ব্যক্তিগত জায়গা। আপনি এখানে কাকে রাখবেন আর কাকে রাখবেন না, সে সিদ্ধান্ত আপনার!
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন