ব্যক্তির প্রাইভেট লাইফ আর পাবলিক লাইফ সবসময়ই আলাদা। কিন্তু মানুষ যখন তার ঘরের ছবি আমজনতার সঙ্গে শেয়ার করে, তখন কিছু হিসাব-নিকাশ কাজ করে। প্রথমত যেহেতু অনেক মানুষ দেখবে, আর মানুষ যেহেতু প্রবৃত্তিগতভাবে জাজমেন্টাল, মানুষ তার ব্যাপারে কিছু, তার রুচি ও অর্থনৈতিক অবস্থার কিংবা সাংস্কৃতিক আবহাওয়ার ব্যপারে কিছু অনুমান করবে। এর ফলে ব্যক্তি চায় সেই অনুমান যতটা সম্ভব ইতিবাচক রাখতে।
এই কারণে ঘরে মানুষ যেভাবে থাকে, সোশ্যাল মিডিয়ায় উপস্থাপন তার থেকে কিছুটা আলাদা হয়। আর কিছুটা প্যারাডক্সিক্যাল লাগলেও বেশিরভাগ ক্যান্ডিড যেমন স্ক্রিপ্টেড হয়, ভিডিও কনফারেন্স বা ওয়ার্ক-ফ্রম-হোমের ভিডির ব্যাকগ্রাউন্ডও আপাতভাবে ইনফর্মাল হলেও তার পেছনে থাকে সবিশেষ প্রস্তুতি।
আর করোনা উদ্ভুত লকডাউনে এটা আরও নতুন মাত্রা পেয়েছে। আমাদের দেশে এখনও এদের উপস্থিতি দেখা না গেলেও, পশ্চিমে ইতিমধ্যে ভিডিও কলের ব্যাকগ্রাউন্ড বিষয়ে এখন অনেক প্রফেশনাল এক্সপার্ট ও এডভাইজার রয়েছে। তারা অর্থের বিনিময়ে এই ব্যাপারে আপনাকে সেবা দিতে প্রস্তুত! মজার ব্যাপার হলো, বিশ্বজুড়ে জারি থাকা লকডাউনে পশ্চিমের অনেক দেশে এই কারণে ইন্টেরিওর ডিজাইনারদের ডিম্যান্ড বেড়ে গেছে। এই এক্সপার্টদের একটা বড় অংশ আসলে তারাই। আপনি কিভাবে ব্যাকগ্রাউন্ড সাজাবেন, রুমের কালার, লাইট, পরিবেশনা থেকে শুরু করে জানালার পর্দা পর্যন্ত তারা আপনাকে ঠিক করে দেবে।
প্রফেশনাল এই এক্সপার্টরা আপনাকে হয়তো বলবে, শিল্পকর্ম ঝোলানো কোনো দেয়াল বা বুকশেলফকে ব্যাকগ্রাউন্ডে রেখে ভিডিও কল বা লাইভে যুক্ত হতে। বলবে, ক্যামেরা যাতে রুমের কর্নারে ফোকাস না করে, কারণ সেটি নাকি এঙ্গেল হিসেবে ভালো দৃষ্টিনন্দন নয়। সম্ভব হলে গ্লাস ব্যবহার করে সেলুন-স্টাইল লেয়ার লুক নিয়ে আসতে পারেন, যাতে ভিডিওতে অংশগ্রহণকারীদের মনে আগ্রহ জাগায়।
যদি এসব কিছুই না পারেন, ভার্চুয়াল ওয়ালকাভারিং ব্যবহার করে অন্তত ফেইক করুন। আপনি অবাক হতে পারেন, অনেক কোম্পানি এমনকি ভার্চুয়াল ব্যাকগ্রাউন্ডও বিক্রি করছে। কেউ কেউ ওয়ার্ক ফ্রম হোমওয়ালাদের ভিডিও কনফারেন্সের জন্যে ক্রোমা পেপার, ডিজাইন বা ডেকোরেট করা পর্দা বা ইমেজও বিক্রি করছে!
অবশ্য এরকম এক্সপার্ট এডভাইস নিয়ে এখনও বেশিরভাগ লোক কনফারেন্স করা শুরু করেনি৷ নিজেদের বিবেচনা অনুযায়ী একেকজন একেকরকম ব্যাকগ্রাউন্ডসহ ভিডিওতে হাজির হচ্ছেন। তবে এদের ব্যাকগ্রাউন্ডে কিছু ট্রেন্ড বা প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
যেমন, ভিডিও কলে বা লাইভে ব্যাকগ্রাউন্ড হিসেবে সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে লাইব্রেরি কিংবা বুকশেলফ। রুচিশীলতার নতুন অভিপ্রকাশ হিসেবে বুকশেল্ফ বা বই দেশে জনপ্রিয় হচ্ছে কিনা সেটি অবশ্য একটি প্রশ্ন। আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে অন্তত সেই সম্ভাবনা ক্ষীণ। কারণ যদি তেমনটিই হতো, তাহলে দেশে অন্তত বইয়ের বেচা-বিক্রি বেড়ে যেতো৷ বাংলাদেশে এখনও তেমনটি দেখা যায়নি। ভিডিও কল বা লাইভের ব্যাকগ্রাউন্ডে যা দেখা নির্দিষ্ট কিছু ক্লাসিক টাইপ বই ও মধ্যবিত্ত হলে অন্যান্য বইয়ের পাশাপাশি কিছু টেক্সটবুক। বুকশেলফ বাংলাদেশের বেশিরভাগ স্বচ্ছল পরিবারের দেখা যায় না, নতুন ট্রেন্ড যদি তাদের অনেককে সেভাবে রুম সাজাতে প্ররোচিত করে তা ইতিবাচকই বলতে হয়।
বুকশেলফ বা লাইব্রেরির পরেই ভিডিও কলে হোম অফিসের ব্যাকগ্রাউন্ডের জন্য ওয়ার্ল্ড ম্যাপ জনপ্রিয়। শুধু দেখতে ভালো তাই নয়, দর্শকদের কাছে তা একধরণের বৈশ্বিক উপস্থিতি নিয়ে আসে।
অবশ্য কেউ কেউ এইসব নিয়ম-কানুন বা ট্রেন্ডের তোয়াক্কা করছেন না।
যেমন, কমেডিয়ান, উপস্থাপক স্টিফেন কোলবার্ট তার বাথরুম থেকে সরাসরি ব্রডকাস্ট করেন! মিলিয়ন মিলিয়ন লোক এখন জানে কোলবার্টের টয়লেটের সিট কিভাবে থাকে! যদি না আপনি কমেডিয়ান হন, কোলবার্টের মতো না হওয়াই ভালো। আপনার ভিডিও কলের ব্যাকগ্রাউন্ডের জন্যে আরও 'প্রফেশনাল লুকিং' কিছু বাছাই করুন। কারণ সেলেব্রিটিরা যা ইচ্ছা তাই করে পার পেয়ে যেতে পারেন, নতুন ফ্যাশন বা ট্রেন্ড হিসেবেও সেইসব চালু হয়ে যেতে পারে। কিন্তু আপনি নিজে তেমন কিছু করলে আপনার ক্লায়েন্ট, কলিগ বা অফিসের বস সেটি এপ্রিশিয়েট নাও করতে পারে। একটা এলোমেলো মেসি ব্যাকগ্রাউন্ড ডিস্ট্র্যাকশন হিসেবে কাজ করতে পারে। এমনও হতে পারে অফিসের কল শেষে আপনার সহকর্মীদের আলোচনার বিষয়টাবস্তু হয়ে উঠতে পারে আপনার ভিডিও কলের ব্যাকগ্রাউন্ড। আপনি সেলেব্রিটি না, তাই সতর্ক থাকা ভালো।
একজন বিশেষজ্ঞের উদ্ধৃতি দিয়ে লেখা শেষ করবো:
'আপনি যদি ভিডিও কলে প্যান্ট না পরেও থাকেন, নো প্রবলেম, কারণ কেউ দেখছে না। কিন্তু ভিডিও কলে আপনার ব্যাকগ্রাউন্ড অবশ্যই দৃষ্টিনন্দন হওয়া উচিৎ।'
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন