আপনার জীবনে আর্টের প্রয়োজন যদি না-ই থাকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আপনি কি নাটক-সিনেমা দেখতে থিয়েটারে যাবেন না? আপনি কি কনসার্টে মিউজিকের তালে তালে নাচবেন না? আপনি কি সে রেস্টুরেন্টে যাবেন যেখানে কোনো মিউজিক নেই, চিত্রকর্ম নেই ওয়ালে, ডিজাইন নেই, যেখানে আছে শুধু খাবার?
এখন এই লকডাউনের বেঁচে থাকার মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ হয়ে গেলে আপনি কী করছেন? মুভি দেখছেন নেটফ্লিক্সে, হুলু/আমাজনে/ টিভিতে বা অন্য কোনো স্ট্রিমিং সার্ভিসে। অস্বস্তিকর দমবন্ধ পরিবেশ থেকে বইয়ের জগতে ডুব দিচ্ছেন। কল্পনার কোনো অজানা ভূবন ঘুরে আসছেন। দেখছেন কোনো চমৎকার ছবি। কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে গান শুনছেন সাউন্ডক্লাউড, স্পটিফাই বা ইউটিউবে। মজার কোনো ভিডিও দেখছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। আপনার রাগ-ক্ষোভ চমৎকাভাবে তুলে ধরেছেন কোনো সাহসী কার্টুনিস্ট।
এগুলো জীবনের খুব সাধারণ কিছু অনুসঙ্গ। এর বাইরেও জীবনের সবক্ষেত্রে আর্ট এতো ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত যে সেগুলো বাদ দিতে গেলে জীবনই অবশিষ্ট থাকে না।
আমরা খেয়াল করি বা না করি বিশ্বব্যাপী এই সংকট ও গৃহবন্দিত্বের সময়ে, আর্টের ভূমিকা আরও বেশি গুরুত্ববহ হয়ে উঠেছে আমাদের জীবনে।
মানুষ সোশ্যাল মিডিয়াতে তার প্রিয় নেটফ্লিক্স প্লেলিস্ট শেয়ার করছে। তার প্রিয় গান, ভিডিও এমনকি চিত্রকর্ম শেয়ার করছে তার আইসোলেশনের বাইরে অন্যান্যদের কাছে পৌঁছাতে, ভালোলাগাগুলো অন্যের সাথে শেয়ার করতে। এইসব লিস্ট ক্যাজুয়াল জিনিসমাত্র বা শুধু মুহুর্তের বিনোদন এমনটা ভাবা বোকামি। এগুলো লিস্ট তৈরিকারকদের ব্যক্তিত্বের বাহ্যিক প্রতিফলনও৷ অন্যের সঙ্গে যুক্ত হওয়ারও মাধ্যম।
আবদ্ধ সময়ে টিভি, চলচ্চিত্র, বই বা ভিডিও গেম গতিশীলতার সুযোগ করে দিচ্ছে। এক রকম কল্পনার পৃথিবীতে ভ্রমণ যা এই কোভিড আক্রান্ত সময়ে অসম্ভব কাজ৷ শিল্প আমাদেরকে যুক্ত করে অজানায়, অদ্ভুতুড়ে আর অসম্ভবে।
জীবনানন্দ দাশ লিখেছিলেন, ‘মানুষ ভাত খেয়ে বাঁচে না শুধু। সে পুঁই শাকের চচ্চড়ি ও কুচো চিংড়ির ঘন্ট খেতে পারে কিন্তু চিন্তা ও কল্পনা তবুও তার। সে পশ্চিমের মেঘে সোনার সিংহ আবিষ্কার করতে পারে, অদৃশ্য সমুদ্রের শব্দ শুনতে পারে, ভোরের রাঙা সূর্যে অর্ধনারীশ্বরের ভয়াবহ সুন্দর রূপ দেখতে পারে।’
চিন্তা ও কল্পনার অধিকারী, সোনার সিংহ আবিষ্কারকারী মানুষের সর্বাঙ্গীন সম্ভাবনা ও এগিয়ে যাওয়ার জন্যেই এই বিপর্যস্ত পৃথিবীতেও আর্ট খুব প্রয়োজন।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন