মেয়েরা নাকি গণিতে দুর্বল! একবিংশ শতাব্দীতে এসেও এমন গৎবাঁধা চিন্তাধারায় বিশ্বাসী মানুষের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। অবশ্য ইতিহাসের দিকে তাকালেও পিথাগোরাস, নিউটন, রামানুজান কিংবা জন ন্যাশদের ভীড়ে নারী গণিতবিদদের আনাগোণা খুব একটা দেখা যায় না। তবে সম্প্রতি আমেরিকান নারী গণিতবিদ ক্যারেন উলেনবেক ‘গণিতের নোবেল’খ্যাত ‘এবেল প্রাইজ’ পেয়ে কোনো উপপাদ্য ছাড়াই প্রমাণ করে দিয়েছেন, গণিত বুঝতে নারী পুরুষে কোনো তফাত নেই। ১৯ মার্চ প্রথম নারী হিসেবে এই পুরস্কার লাভ করেন ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাসের এই অধ্যাপক।
ক্যারেন উলেনবেক গত কয়েক দশক ধরে জ্যামিতি, কোয়ান্টাম থিওরি এবং পদার্থবিজ্ঞানসহ বেশ কয়েকটি শাখায় কাজ করে যাচ্ছেন। ‘এবেল প্রাইজ’ কমিটির ওয়েবসাইট অনুযায়ী তার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অর্জন হল ‘জ্যামিতিক আংশিক ডিফারেনশিয়াল সমীকরণ, গেজ তত্ত্ব ও সংহত পদ্ধতিগুলোর অগ্রগতি, এবং বিশ্লেষণ, জ্যামিতি ও গাণিতিক পদার্থবিজ্ঞানের নানা কাজে তার মৌলিক প্রভাব’।
‘এবেল প্রাইজ’ প্রথম দেওয়া হয় ২০০৩ সালে নরওয়ের রাজার পক্ষ থেকে। এই পুরস্কারের মূল্যমান ৬ মিলিয়ন নরওয়েজিয়ান ক্রোনার, যা প্রায় ৭ লক্ষ ডলারের কাছাকাছি। তবে এই পুরস্কার পাওয়ার বেশ আগে থেকেই ক্যারেন একজন নামকরা গণিতবিদ। ২০০০ সালে তিনি ‘ন্যাশনাল মেডেল অফ সায়েন্স’ লাভ করেন, সেইসাথে পান ‘জিনিয়াস গ্রান্ট’ নামে খ্যাত ‘ম্যাকআর্থা্র ফেলোশিপ’।
ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাসের কলেজ অফ ন্যাচারাল সায়েন্সের ডিন ড. পল গোল্ডবার্ট এক বিবৃতিতে বলেন, ‘উলেবেনবেকের গবেষণায় গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানে বিপ্লবী অগ্রগতি সাধিত হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘স্ট্রিং থিওরি থেকে শুরু করে নানান আকর্ষণীয় বিষয়ে তার অগ্রগামী অন্তর্দৃষ্টিগুলোর কার্যকরণ রয়েছে, যা স্থান-কালের জ্যামিতির বাস্তব প্রকৃ্তি ব্যাখ্যা করতে পারে।’
ক্যারেন নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, তিনি পরবর্তী প্রজন্মের নারীদের জন্য একজন অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে গড়ে ওঠার ব্যাপারে সচেতন ছিলেন। ছোটবেলায় তার নিজের প্রিয় ব্যক্তিত্ব ছিল বিখ্যাত শেফ ও টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব জুলিয়া চাইল্ড। পুরো ক্যারিয়ারজুড়ে ক্যারেন একজন নারী হিসেবেই নিজের কাজ করে গেছেন। তার কখনো মনে হয়নি যে তাকে পুরুষদের মত হতে হবে। সেইসাথে নিজেকে ভাগ্যবানও মনে করেন যে এমন সময়ে তার জন্ম হয়েছে যখন একজন নারী হয়েও তিনি গণিতের মত বিষয়ে এত দূর আসতে পেরেছেন। আর কয়েক শতাব্দী আগে জন্ম নিলে যা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার ছিল।
তার এই সাফল্য শুধু গণিতকেই অগ্রসর করে না, সেইসাথে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিতের মত পুরুষপ্রধান সকল ক্ষেত্রে পরবর্তী প্রজন্মের নারীদের জন্য এক অপার সম্ভাবনার বার্তা রেখে যায়।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন