লেখা: তুহিন খান
এই ভয়াবহ ধর্ষকামী পুরুষতান্ত্রিক সমাজে আমাদের মেয়েদের রাজনীতি করা কতটা কঠিন, তা ৫ আগস্টের আগে-পরে কিছুটা দেখা গেল। নুসরাত, উমামা, প্রাপ্তি, মনসুরা আলম, কানিজ, সাকাফিসহ আরও অনেকেই তাদের রাজনৈতিক বা লাইফস্টাইলগত পজিশনের কারণে ভয়াবহরকমের স্লাট শেমিংয়ের শিকার হইলো।
ওদিকে অদিতির পোস্ট থেকে জানতে পারলাম, গাজীপুরের এক প্রতিনিধি সভায় একজন হুজুর আসবেন বলে কয়েক ঘণ্টা সমস্ত মেয়েকে মাস্ক পরিয়ে রাখা হইছে৷ উইদাউট নোটিশিং দেম আর্লিয়ার। এটা একটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতি। আমাদের মেয়েরা নেহায়েত সর্বংসহা বিধায় এটা নিয়ে আমি কোথাও তেমন কিছুই শুনি নাই।
ধর্ম বা বর্গ, হিজাবি বা নন-হিজাবি—আমাদের সকল নারীরা তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের হাতে স্রেফ ‘ধর্ষিতা’ হন। সমাজের নানা বিধিব্যবস্থার দোহাই দিয়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদের অনেক কিছুতেই বাধ্য করা যায়। যারা একটু ধার্মিক, তারা পাব্লিকের একটা বড় অংশের সাপোর্ট পাইলেও, যারা তা না, তারা সেটাও পান না। হয়তো কিছু সুশীল বা মিডিয়া সাপোর্ট তারা পান, সেইটা দিয়া তো আর পলিটিক্স চলে না। বাধ্য হয়ে তাদের হয় নিজের রাজনীতিরে জলাঞ্জলি দিতে হয়, ডিপ্রেসড হয়ে পড়তে হয় বা অন্যের রাজনীতির সাব-অর্ডিনেট হয়ে থাকা লাগে আজীবন। এমনকি, নিজের লাইফস্টাইল চেঞ্জ কইরা, মাথায় হিজাব তুইলা নিয়াও শেষরক্ষা হয় না।
আমরা সবাই বড় বড় নারী অধিকারের আলাপ করি তো। কিন্তু এই অস্বস্তিকর সমাজব্যবস্থা, এই প্রবল ভয়ংকর মিসোজিনিস্ট থট-সিস্টেম, এই নিদারুণ ধর্ষকামী রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক স্ফিয়ার চেঞ্জ করতে না পারলে, নারীর উন্নতি কেবল বক্তৃতায় আর এনজিওর কর্মসূচিতেই থাইকা যাবে। জুলাই অভ্যুত্থানে আমাদের এই নারীরাই সকল ফ্যাসিবাদী নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ইতিহাসের কর্তা হয়ে এসে দাঁড়াইছিলেন রাজপথে। তারা এই আন্দোলনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছেন। ৫ আগস্টের পরও যদি আমরা আমাদের নারীদের স্বাভাবিক বিকাশের পক্ষে অনুকূল একটা সমাজব্যবস্থা তৈরি করতে না পারি, তাইলে আমাদের এই অভ্যুত্থানের মৌলিক কমিটমেন্টটুকু ব্যর্থ হইতে বাধ্য।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন