দেশের ২০০টি স্কুলে মেয়েদের মাঝে স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণ করবে 'উই ফর দেম'

১৮৯৫ পঠিত ... ১৭:২৬, মার্চ ০২, ২০১৯

বাঙালির জীবনের একটি নিষিদ্ধ শব্দ হল ‘পিরিয়ড’ যা ঋতুচক্র বা মাসিক নামেও পরিচিত। বয়ঃসন্ধিকালে যখন প্রথম মাসিক হয়, এদেশের মেয়েদের মা-বোনেরা তখনই শিখিয়ে দেন যে মাসিক একটি গোপনীয় ব্যাপার। অথচ প্রতি মাসে খুব স্বাভাবিক কিংবা প্রাকৃতিকভাবেই তা প্রতিটি মেয়ের হয়ে থাকে। পিরিয়ড নিয়ে আমাদের অদ্ভুত 'সামাজিক লুকোচুরি'র কারণে এ ব্যাপারে দেশের সব স্থানের মেয়েরা সমানভাবে সতর্ক নয়। দেশের অনেক কিশোরীই স্যানিটারি ন্যাপকিনের কথা ও ব্যবহার জানে না, অনেকেই অস্বাস্থ্যকরভাবে দিনগুলো কাটায়। এসব ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ‘উই ফর এডোলেসেন্ট’ প্রজেক্টের আওতায় কাজ করছে ‘উই ফর দেম’ নামক অলাভজনক সংগঠন।  

‘উই ফর দেম’ সংগঠনটি সমাজসেবামূলক ও সমাজের উন্নয়নমূলক কাজ করে থাকে। শীতবস্ত্র বিতরণ, দুর্যোগে ত্রাণ দেয়া, বিধবা এবং শারীরিকভাবে অক্ষম নারীদের সেলাই প্রশিক্ষন ও কর্মসংস্থান কর্মসূচি ইত্যাদি কাজ তারা করে থাকেন। গতবছর তারা একটি নতুন প্রজেক্ট শুরু করেছেন যার নাম ‘উই ফর এডোলেসেন্ট’, যার অর্থ বয়ঃসন্ধিকালীনদের জন্য আমরা। এই প্রজেক্টের মূল লক্ষ্য স্কুলের বয়ঃসন্ধিকালীন মেয়েদের ইমার্জেন্সি স্যানিকারি ন্যাপকিন বিতরণ করা ও পিরিয়ড সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। এই লক্ষ্যে তারা ২০১৯ জুড়ে দেশের ২০০টি স্কুলে মেয়েদের মাঝে স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণ করবেন এবং ঋতুকালীন সময়ের স্বাস্থ্য ও সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা করবেন।

ইতোমধ্যে ‘উই ফর এডোলেসেন্ট’ প্রজেক্টের জন্য সংগঠনটি তিনটি বিদ্যালয়ে গিয়েছে। মূলত প্রতিটি স্কুলের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির ছাত্রীদের নিয়েই কাজ করা হয়। বেশ কয়েকটি সেশনে কার্যক্রম চলে। প্রথম সেশনে মেয়েদের সংকোচ ভাঙিয়ে দেওয়ার কাজ করা হয়, যাতে তারা নিঃসংকোচে নিজেদের কথা বলতে পারে। প্রতিটি স্কুলেই এই সেশনে দুই আড়াই ঘন্টা সময় লেগে যায়। এরপরের সেশনে মেয়েদের কাছে জানতে চাওয়া হয় তাদের নিজেদের প্রথম পিরিয়ডের অভিজ্ঞতা। কেমন ছিল সময়টা, কেমন অভিজ্ঞতার দিয়ে যেতে হয়েছিল, সেসবই জানায় ছাত্রীরা।

পরের সেশনে একজন ডাক্তার পিরিয়ড এবং সংক্রান্ত সবকিছু নিয়ে কথা বলেন। পিরিয়ডের সময় স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন তিনি। এরপর মেয়েদের জন্য থাকে একটি কুইজ পরীক্ষা। এর মাঝেই ছাত্রীরা হাতে হাতে পেয়ে যায় স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের দিকনির্দেশনা এবং কৈশোরের যাবতীয় পরিবর্তন নিয়ে সচিত্র বুকলেট। কুইজ শেষে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের জেন্ডার এন্ড উইমেন্স স্টাডিজের শিক্ষক কিংবা শিক্ষার্থীরা ছাত্রীদের সামনে আসেন আরেকটি সেশনে।

তারপর ছাত্রীরা গান, কবিতা, গল্প শোনায়। মেয়েরা চকলেটও পায়। একইসাথে প্রতিটি মেয়েকে তিন মাসের জন্য ন্যাপকিন উপহার দেওয়া হয়। এরপর কেউ কেউ সাদা কাগজে প্রকাশ্যে বলতে না পারা শারীরিক সমস্যাগুলো লিখে ডাক্তারের কাছে দেয়। এছাড়াও পিরিয়ড নিয়ে বানানো অ্যানিমেটেড ডকুমেন্টারি দেখানো হয়। ডকুমেন্টারির পর আবার ডাক্তার আরেকটি সেশন নেন চিরকুটে পাওয়া সমস্যার সমাধান নিয়ে। কুইজে বিজয়ীরা আলাদা বইও উপহার পায়। আরও নানান কিছুর পর সমস্বরে ‘মাসিক নিয়ে লজ্জা আর নয়’ স্লোগানে শেষ হয় চমৎকার এবং প্রাণবন্ত ইভেন্টটি।

মাসিক সম্পর্কে সচেতনকরণ ও ছাত্রীদের স্যানিটারি ন্যাপকিন দেয়ার পাশাপাশি দলটি বিদ্যালয়ে প্যাডবুথও স্থাপন করে থাকে। এ ব্যাপারে ‘উই ফর দেম’-এর প্রতিষ্ঠাতা জীবন ঘোষ বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের তিন মাসের স্যানিটারী ন্যাপকিন দেয়ার পাশাপাশি তাদের ওয়াশরুমের সামনে আমরা একটি ইমার্জেন্সি প্যাডবুথ স্থাপন করে দেই। তাদের ন্যাপকিন ডাম্পিং এর জন্য বিন বসিয়ে দেই। ন্যাপকিন ডিস্ট্রিবিউশনের জন্য স্কুলের সকলের পছন্দের শিক্ষককে হেড করে আমরা একটি কমিটি করে দিই। তিন মাস অন্তর আমরা প্যাডবুথ পুনরায় ফিল করে দেই।’

‘উই ফর এডোলেসেন্ট’ এর পুরো প্রজেক্টটিই চলে ফান্ডিংয়ের মাধ্যমে। তাদের সম্পর্কে আরো জানতে পারবেন ও তাদের ফান্ডিংএ সাহায্য করতে ঘুরে আসতে পারেন তাদের পেজ ‘We For Them’-এ।

১৮৯৫ পঠিত ... ১৭:২৬, মার্চ ০২, ২০১৯

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top