আমি নই, সাঈদীই প্রথম চন্দ্রমানব: একান্ত কাল্পনিক সাক্ষাৎকারে নিল আর্মস্ট্রং

১১৭৪৯ পঠিত ... ১৩:১৫, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৯

১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই দিনটি মানব সভ্যতার ইতিহাসে এক মাইলফলক। এই দিনে প্রথমবারের মতো মানুষ চাঁদে পদার্পণ করে। অ্যাপোলো-১১ মহাকাশযানে চড়ে চন্দ্র অভিযানে গিয়েছিলেন তিন আমেরিকান নিল আর্মস্ট্রং, বাজ অলড্রিন এবং মাইকেল কলিন্স। মাইকেল কলিন্সকে কমান্ড মডিউলে রেখে বাকি দুজন নেমে আসেন চাঁদের বুকে। আর প্রথম মানুষ হিসেবে চন্দ্রপৃষ্ঠে পায়ের ছাপ রেখে ইতিহাসের অংশ হয়ে যান নিল আর্মস্ট্রং।

এই ঘটনার প্রায় চার যুগ পর ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ঘটে আরেক কীর্তি। চাঁদের বুকে দেখা যায় একজন মানুষের মুখ। ২৮ ফেব্রুয়ারি দিনের বেলায় মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির রায় পান জামায়াতের তৎকালীন নায়েবে আমির দেলোয়ার হোসেন সাঈদী। কৃষ্ণপক্ষের তৃতীয় তিথিতে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে খবর পাওয়া যায় যে, দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে চাঁদে দেখা গেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় সাঈদীকে চাঁদে দেখার ছবিও প্রকাশিত হয়। সাড়া পরে যায় দেশে বিদেশে।

চাঁদের বুকে যার চাঁদবদন দেখা গিয়েছিল তাকে নিয়ে কথা বলতে eআরকি মুখোমুখি হয় নিল আর্মস্ট্রংয়ের। অ্যাপোলো-১১ মহাকাশযান, চাঁদ, চাঁদের বুড়ি এবং সর্বোপরি দেলোয়ার হোসেন সাঈদী ছিলেন আমাদের আলোচনার মূল বিষয়। নিল আর্মস্ট্রং এমন অনেক কিছুই বলেছেন যার কথা এর আগে শোনেনি কেউ। চমকপ্রদ এই সাক্ষাৎকারটি নিতে eআরকির মহাকাশ গবেষণা সেল এবং চন্দ্র গবেষণা দলের কয়েকজন সদস্য উড়ে যায় যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও রাজ্যের লেবানন শহরে। পশ্চিম এশিয়ার দেশ লেবানন ভেবে ভুল করবেন না যেন।

লেবাননে নিল আর্মস্ট্রংয়ের বাড়িতে পৌঁছালে দরজা খুলে দেন সদাহাস্য এই ভদ্রলোক। বাংলাদেশ থেকে এসেছি শুনে আমাদের বেশ খাতির যত্নও করেন। চন্দ্র বিজয়ের বছরেই বাংলাদেশে এসেছিলেন তিনি। সেই স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে খানিকটা আবেগাপ্লুতও যেন হয়ে পড়লেন। এ কথা সে কথা ঘুরে আসতেই হলো সেই দিনটির কথায়।

 

eআরকি: স্যার, আপনার মনে আছে সে দিনটির কথা? কিছু বলবেন কি?

নিল: সেদিনের কথা আর ভুলি কী করে? ঐটা একটা দিনই ছিল! রওনা তো দিয়েছিলাম ঠিকঠাক মতোই। চার দিন ধরে চালায় নিয়ে ঠিক যখন মাইকেল (কলিন্স) অ্যাপোলো-১১টা চাঁদে সাইড করবো, এমন সময় টের পেল আমাদের মেশিন তো আর কাজ করছে না! মাইকেলের চেতনাও তখন কাজ করছিল না!

eআরকি: এ তো ভয়াবহ কথা! তখন আপনাদের অনুভূতি কেমন ছিলো?

নিল: আমাদের তো তখন একদম গলা শুকিয়ে কাঠ! চাঁদে প্রথম মানুষ হওয়া নিয়ে তখন আর কোন উচ্ছ্বাসই কাজ করছিলো না। এই চেতনা হারানো মেশিন নিয়ে আমরা পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে ঢুকবো কী করে? তখন আমাদের দরকার ছিলো এক মেশিনম্যানের। কিন্তু এই বিরান নির্জন চাঁদের বুকে মানুষই নেই, মেশিনম্যান পাবো কোথায়? আমি আর বাজ (অলড্রিন) নেমে গেলাম।

eআরকি: এভাবে করে আপনারা নেমেছিলেন? তাহলে লোকে যে বলে চাঁদে পা রাখার সময় আপনি কীসব ফিলোসফিকাল কথা...

নিল: আরে মিয়া রাখেন! সেইগুলা পরে ফেরার সময় ভাবছি। তখন বাঁচি কি মরি, তারই কোন ঠিক ঠিকানা নাই!

eআরকি: আমরা তো শুনে শিহরিত হয়ে যাচ্ছি! এরপর?

নিল: আমি আর বাজ চারিদিকে ঘুরে দেখা শুরু করলাম। জিদানের মাথার মতো শুন্য মাটিতে আমরা খুশিতে ঠেলায় ঘোরতে ঘোরতে হঠাৎ দেখি, দূরে এক কুঁড়েঘর। উঠানে ছিলো একটি চরকা। ছোটবেলায় চরকা বুড়ির গল্প শুনেছিলাম। একেবারে বাস্তবে দেখা পেয়ে আমরা অভিভূত হয়ে গেলাম। পৃথিবীতে না ফিরতে পারলে তো চাঁদের লোকাল এই বুড়িমাই ভরসা। তাই তার সাথে খাতির জমানোই ছিল তখন আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য।

eআরকি: উনার ঘরটি কেমন ছিলো?

নিল: বুড়ি তো একা মানুষ...সরি চন্দ্রমানুষ, তাই তেমন কোন জাঁকজমকের বাড়ি না। কিন্তু উনার ছাদে দেখলাম অনেকগুলা লইট্যা শুটকি শুকাতে দিয়েছেন উনি।

eআরকি: তারপর? উনি আপনাদের চাঁদের শুটকি ভর্তা খাওয়ালো?

নিল: চাঁদের বুড়ি খুব যত্ন করে আমাদের খাওয়ালো। লম্বা লম্বা লইট্যা শুটকিগুলো খুব সুস্বাদু ছিলো। বুড়ি মাকে বললাম, ‘আমরা তো চাঁদে প্রথম মানুষ হিসেবে আসলাম, এখন তো আমাদের মেশিন কাজ করছে না…’ এটুকু বলতেই তিনি আমাদের থামিয়ে দিলেন!

eআরকি: কেন?

নিল: উনি একটা মুরুব্বিমার্কা হাসি দিয়ে বললেন, ‘তোমরা প্রথম আসছো। কেমনে শিওর হইলা? তোমরা তো দেখি বড় নাদান, কিছুই জানো না।’ আমরা তো তার এই কথা শুনে অবাক হয়ে গেলাম!

eআরকি: তার মানে আপনারা, মানে আপনি চাঁদের প্রথম মানুষ ছিলেন না?

নিল: বুড়ি মা আমাদের এমন কথা শুনালেন, যার জন্যে আমরা মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না। আমাদের আগেই আরেকজন পৃথিবীর সন্তান এই চাঁদে এসেছেন। এই পুরো চাঁদের মাটিতে তিনি চষে বেড়িয়েছেন। সেই মহান ব্যক্তিটি হলেন দেলোয়ার হোসেন সাইদী। রক্তিমশ্মশ্রুর এই মানুষটি শুধু প্রথম চাঁদের মানুষই নন, দীর্ঘদিন এখানে একাকী নিজ হাতে মেশিন হ্যান্ডেল করতে করতে পরিণত হয়েছেন একজন দক্ষ মেশিনম্যানে!

eআরকি: তাহলে তো আপনারা হাতে চাঁদ পেয়ে গিয়েছিলেন!

নিল: হাতে পেতে হবে কেন? আমরা তো সরাসরি চাঁদেই বসে ছিলাম! কী যে বোকার মতো কথা বলেন! যাই হোক, আমরা পরিমরি ছুটে চললাম সাইদীর মেশিন ওয়ার্কশপে। চাঁদের ডার্ক সাইডের এক প্রান্তে খুঁজে পেলাম তাকে। দেখলাম, অন্ধকারে এক হাতে তিনি তার পোষা লইট্যামাছের লালন করছেন, আরেক হাতে তার মেশিনে হাত বুলাচ্ছেন।

eআরকি: সত্যিই অদ্ভুত একটা দৃশ্যকল্প! উনি আপনাদের সাহায্য করলেন?

নিল: নাহলে কি আর পৃথিবীতে আমরা আসতে পারি? তার মতো মেশিন হাতানোর দক্ষতা পৃথিবীর কারো নেই। তিনি অনেকক্ষন আমাদের মেশিন টিপেটুপে দেখে বললেন, ‘এখানে আসার আগে মনে হয় তোমরা মিরপুরে মেশিন নিয়ে গিয়েছিলে? ধুলাটুলা ঢুকে জ্যাম হয়ে আছে দেখছি।’ এরপর তিনি পরম যত্নে আমাদের মেশিন রগরে সব ময়লা ঝেড়েঝুড়ে দিলেন। সবশেষে তার লইট্যা মাছ থেকে খানিকটা তেল বের করে লুব্রিকেশন হিসেবে আমাদের মেশিনে মেখে দিলেন। মেশিনটি আমি একটা ট্রায়াল দিয়ে দেখলাম, একদম ঝরঝরে পারফর্মেন্স দিচ্ছে।

eআরকি: তারপর? মেশিনে চেপে আপনারা চলে এলেন?

নিল: আমরা কীভাবে তার এই প্রতিদান ফেরত দিবো বুঝতে পারছিলাম না। উনাকে আমরা অফার করি আমাদের নাসার হেড মেশিনম্যান হওয়ার। কিন্তু তিনি তা সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করেন। উনি বলেন, ‘আমি এই চাঁদের বুকে আমার মেশিন আর লইট্যা মাছের সাথে ভালোই আছি। পৃথিবীর অতো ঝুটঝামেলা আমাকে টানে না।’ কিন্তু এত গুণী এক মেশিনম্যানকে একা এভাবে ছেড়ে যেতে একদমই মন টানছিলো না। তখন তিনি আমাদের বলেন, ‘যদি আমাকে বেশি মিস করো, তবে কৃষ্ণপক্ষের তৃতীয়ার রাতে চাঁদের বুকে নজর দিও। সেখানে দেখতে পাবে আমার মুখ।’

এ পর্যায়ে কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে পরেন নিল। নিজেকে সামলে নিয়ে  আবার বলতে শুরু করেন তিনি।

নিল: পৃথিবীতে আমি সাইদীর কথা চেপেই গিয়েছিলাম। পরে সময়ের আবর্তে ভুলেই গিয়েছিলাম তার নাম। কিন্তু সবকিছু বদলে যায় ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারির এক রাতে। বাড়ি ফেরার পথে হঠাৎ মেশিনের গোলযোগে আমার গাড়িটি বন্ধ হয়ে যায়। নেমে চেক করতে গেলাম, কী হয়েছে। সে রাতে পূর্ণিমা ছিলো না। ছিল তিনদিন আগে। অনেক চেষ্টা করেও বুঝতে পারছিলাম না, আমার মেশিনে কী সমস্যা। তখন মনে পরে গেল সেই চাঁদের বুকে সাইদীর সাথে সেই রাতের কথা। মুখটা তুলে আকাশের পানে তাকালাম। দেখলাম একটু ক্ষয়ে আসা চাঁদের বুক জুড়ে মেশিনম্যানের মুখখানি ভেসে আছে এক মায়াবী আভা নিয়ে। আবেগে আমার চোখ ভিজে গেল একদম। আশ্চর্যজনকভাবে তখনই আমার মেশিন তরতরিয়ে স্টার্ট নিয়ে নিলো।

ডিনার শেষ করে বের হতে হতে বেশ রাতই হয়ে গিয়েছিল। যে কথা কেউ জানতেন না, বিশ্ববাসীকে সেই কথাটি জানানোর দৃঢ় সংকল্প নিয়ে eআরকি বেরিয়ে আসে নিল আর্মস্ট্রংয়ের বাড়ি থেকে। আবেগে তাদেরও চোখ ভিজে গিয়েছিল। সে রাতটিতেও ছিল না পূর্ণিমা। তিন দিন আগেই ঝিলিক তুলে চলে গেছে পূর্ণিমা। ওহাইওর ঝকঝকে পরিষ্কার আকাশে ভেজা চোখ পড়তেই দেখা গেল তার মুখ। তিনি স্নেহের হাসি হেসে যেন তিনি বলতে চাইছেন...


(একান্তই কাল্পনিক সাক্ষাৎকারটি বিশ্বাস করতে চাইলে একেবারে নিজ দায়িত্বে বিশ্বাস করবেন!)

১১৭৪৯ পঠিত ... ১৩:১৫, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৯

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top