গত ২৩ ডিসেম্বর একটি টিভি চ্যানেলের টক শো তে বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ, ঢাকাই চলচ্চিত্রের এক সময়ের ডাকসাইটে নায়িকা, ঢাকা শহর এসে যার নয়ন জুড়াইছিল সেই অঞ্জনা ব্লাউজের উৎপত্তি, প্রচার ও প্রসার নিয়ে এক বিস্ময়কর তথ্য দেন। অথচ এতদিন ধরে সবাই জেনে এসেছিল, বাংলা তথা ভারতবর্ষে ব্লাউজের প্রচলন ঠাকুরবাড়ির জ্ঞানদানন্দিনী দেবীর হাত ধরে।
দ্বিধায় পড়ে eআরকির কৌতুহলী দল ছুটে গেল কলকাতার সুবিখ্যাত জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে। সেখানে আমাদের বরণ করে নিলেন বিদুষী নারী জ্ঞানদানন্দীনি। ঠাকুরবাড়িতে বউ হয়ে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু ঠাকুরবাড়ির পরিচয়ে তার পরিচিত হতে হয়নি, নিজের কাজেই যিনি ছিলেন উজ্জ্বল ও অনন্য।
জ্ঞানদানন্দিনী দেবীর সাথে কুশল বিনিময় হলে, তিনি আমাদের বেশ আপ্যায়ন করলেন। এরপরই দ্বিধা দ্বন্দ ঝেড়ে জিজ্ঞেসই করে ফেললাম ‘ভারতবর্ষে ব্লাউজের যে ইতিহাস আমরা জানতাম, তাতে আপনার নামই সবসময় শুনে এসেছি। কিন্তু এখন আমরা শুনছি অন্য এক ঘটনা! আপনি কিছু জানেন?’
জ্ঞানদা দেবী খানিকটা অবাক হয়ে জানতে চাইলেন, কী ঘটনা? আমরা তাকে অঞ্জনার ব্লাউজের ইতিবৃত্ত সম্পর্কিত সংলাপটির ভিডিও দেখালাম। জ্ঞানদা দেবী ভিডিওটি দেখেই কিছুটা আবেগি হয়ে পড়লেন। ধরা গলায় বলতে লাগলেন, ‘বয়স হয়েছে তো, সবই ভুলে যাই। অঞ্জনা ভুল কিছু বলেনি, অঞ্জনাও যুবলীগে আমার কলিগ ছিল। আওয়ামীলীগে যোগ দিয়েই আমি ব্লাউজ পরেছি প্রথম। এটাই সত্যি ইতিহাস!’।
eআরকি: আপনি কি তবে বলতে চাচ্ছেন আপনি আওয়ামীলীগে ছিলেন?
জ্ঞানদা দেবী: আজ্ঞে হ্যাঁ। আমি আসলে খুব একটা রাজনীতি পছন্দ করতাম না। আই হেইট পলিটিক্স টাইপ ব্যাপার আর কি। পরে যখন ১৯০৬ সালে রবি ‘নৌকাডুবি’ উপন্যাসটি লিখল তখন বেশ সমালোচনার শিকার হতে হয়েছিল ওর।
eআরকি: হ্যাঁ, সম্প্রতি বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভীও দাবি করলেন, রবি ঠাকুর বিএনপি করতেন।
জ্ঞানদা দেবী: আরে, তখনো তো রবি বিপথগামী ছিল। এরপরেই ১৯২৮ সালে সে ‘সোনার তরী’ কবিটাটি লিখে ফেলল। তার কিছুদিন পর সে আওয়ামীলীগে যোগ দিয়েছিল। যুবলীগের কলকাতা উত্তরের সভাপতিও হয়ে গিয়েছিল রবি।
eআরকি: কিন্তু আপনার আওয়ামীলীগে যোগ দেওয়ার বিষয়টা…
জ্ঞানদা দেবী: আমি যখন বিলেত ছিলাম তখন সেখানকার আওয়ামী মহিলা লীগের লন্ডন শাখার নিমন্ত্রণে বেশ অনেকবার গিয়েছিলাম। তখন সেখানকার সিলটি প্রবাসী মেয়েদের দেখতাম, কী সুন্দর শাড়ির সাথে ব্লাউজ পড়ছে। আমি বেশ অবাক হয়েছিলাম। এতো রুচিশীল নারী আর তাদের এই রুচিশীল পোশাক কোথা থেকে এলো!
eআরকি: তার মানে, ইংল্যান্ডে আওয়ামীলীগ সদস্যদের কাছ থেকেই আপনি প্রথম ব্লাউজের ব্যাপারটি জানতে পেরেছিলেন?
জ্ঞানদা দেবী: তা না হলে কোথা থেকে জানব? এই ব্লাউজ আমাদের কে দিয়েছে? তোমরাই বলো! আওয়ামীলীগের এমন অবদান জানতে পেরে আমি আসলে পলিটিক্সকে একটু একটু ভালোবাসতে শুরু করেছিলাম তখন। পরে রবি যখন যুবলীগে যোগ দিল, তখন তো আমি আর কলকাতায় থাকি না। তখন আমাদের মাঝে চিঠিতে কথাবার্তা হতো। আমি জানতে পেরে তৎক্ষণাৎ রাঁচিতেই আওয়ামীলীগের একটা শাখা খুলে ফেললাম। নিজেই হয়ে গেলাম সেখানকার নেত্রী। আর বাকিটা তো ইতিহাস!
হ্যাঁ, বাকিটা সত্যিই ইতিহাস। eআরকি সাক্ষাৎকারকি দলটি বিষণ্ণ মনে বেরিয়ে আসে ঠাকুরবাড়ি থেকে। উত্তর কলকাতার রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে ভাবতে থাকে, ব্লাউজের, থুক্কু, ইতিহাসের ভাজে ভাজে কতই না অজানা কিছু লুকিয়ে থাকে…
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন