মহাত্মা গান্ধী যেহেতু ছাগল পুষতেন তাই ছাগলানুভূতি সম্পর্কে জানতে তার শরণাপন্ন হতে হলো। এই সাক্ষাতকারে গান্ধীজী তুলে ধরেছেন ভারতীয় উপমহাদেশের ছাগলানুভূতি সম্পর্কে তাঁর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার কথা।
eআরকি : ছাগলানুভূতিতে আঘাতের কারণে ৫৭ ধারায় একটি মামলা হবার কারণেই আমাদের মনে প্রশ্ন জাগলো কী এই ছাগলানুভূতি? আপনার কী মনে হয়?
গান্ধীজি : সন্তান স্নেহে ছাগল পোষার অভিজ্ঞতা থেকে বুঝেছি; মানুষের মস্তিষ্কে যে কোন বিষয়ে যে অতি-অনুভূতির সঞ্চার ঘটে; এর সঙ্গে ছাগলের মস্তিষ্কের অতি-অনুভূতির অনেক সাদৃশ্য রয়েছে। যেমন পার্টি কর্মীরা যখন আমার সঙ্গে কোনো বিষয়ে বিতর্ক করতো; তখন সবচেয়ে ক্ষিপ্ত হতো আমার ছাগলটি। আমি তাকে অনেক বুঝিয়েছি; তুমি আমাকে অনেক ভক্তি করো ভালো কথা; তাই বলে সেটি অতিভক্তি হয়ে তুমি যদি এভাবে শিং বাগিয়ে সহিংস হয়ে ওঠো; তাহলে তো তুমি আমার অহিংস আদর্শ থেকে ছিটকে গেলে। ছাগলটি তখন রেগে দেয়ালের সঙ্গে তার শিং ঘষতো।
সে সময়ের অনেক নেতাকেই কুকুর পুষতে দেখা যেতো; কিন্তু আপনি ছাগলকে কেন বেছে নিলেন পোষার জন্য?
সামন্ত-মনষ্ক নেতারা কুকুর পুষতেন; তারা এ কারণে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। ছাগলকে বুঝতে পারলে জনমানসটা বোঝা এতো সহজ হয়ে যায় যে তখন রাজনীতি করতে আর কোন সমস্যা হয় না। এর কারণ আমি চিন্তা করে দেখেছি কী রাজতন্ত্র, কী সমাজতন্ত্র, কী সামরিকতন্ত্র, কী গণতন্ত্র; মানুষ যদি ছাগলের মতো না হতো; কতিপয় মানুষ কী করে সংখ্যাগরিষ্ঠের ওপর এভাবে ছড়ি ঘোরাতে পারে!
ছাগল কতটা বিশ্বাস প্রবণ দেখো, তাকে ঘাস-পাতা খাওয়ালেই সে অন্ধভাবে বিশ্বাস করে; অথচ সে বুঝতেও পারে না; তাকে বলি ও কুরবানী বা এমনি জবাই করে খাওয়ার জন্য তাদেরকে ঘাস-পাতা খাওয়ানো হচ্ছে। যখন তাকে জবাই দিতে নিয়ে যাওয়া হয়; সেই শেষ মুহূর্তে এসে সে বুঝতে পারে তাকে কীভাবে বোকা বানানো হয়েছে। ততক্ষণে দেরী হয়ে গেছে। এই কারণে কাউকে বোকা বানানোকে 'বাকরা' বানানো বলা হয়।
ছাগল আর কোন কোন ক্ষেত্রে আপনার সহায়ক হয়েছে?
আমি তো অনেক মানুষের সঙ্গে মিশতাম। টু দ্য পয়েন্ট কথা না বলে অধিকাংশ মানুষই না বুঝে ব্যা ব্যা করতো। বাড়িতে ছাগলের ব্যা ব্যা শুনে অভ্যস্ত থাকায় আমার জন্য মানুষের এই ব্যা ব্যা খুবই সহনীয় হতো। আবার বুদ্ধি করে মাঝে মাঝে নীরবতাব্রত পালন করতাম। এতে সুবিধা হতো যে যতোই ব্যা ব্যা করুক; আমি সেটা উপেক্ষা করে মেন্টাল হলিডে বা ভাবনার ছুটি কাটাতাম।
আপনি কী কেবল শাসিত প্রজার মাঝেই ছাগলের মনোজগতের সাদৃশ্য পেয়েছেন; না কী শাসকের মনোজগতেও ছাগল রয়েছে?
শাসকের মস্তিষ্ক কাজ করে রামছাগলের মতো; সেটা আরও ভয়ংকর। সে ছাগলের ভক্তি লাভের জন্য ছাগলের সামনে নিজেকে সুপিরিয়র প্রমাণের জন্য কতই যে অতি-কসরত বা রামছাগলগিরি করে! ছাগলের নির্বাচিত প্রতিনিধি তো ছাগলই হয়। আধুনিক গণতন্ত্রেও সেটাই বাস্তবতা। শাসক হয়েই যখন কেউ ক্রমশ স্বৈরশাসক হয়ে পড়ে তার আচার-আচরণ রামছাগলের সঙ্গে খুবই সাদৃশ্যপূর্ণ দেখায়।
আধুনিক সময়ে ছাগলানুভূতির উপস্থিতি কতটা লক্ষ্য করেন?
এ যুগে তো মানুষের ছাগলসত্ত্বা বহুধা বিভক্ত। নির্বোধের মতো কট্টরপন্থী ধর্মবাদী, উগ্র জাতীয়তাবাদী এমনকি কট্টর প্রগতিবাদী হয়ে ওঠা ঐ ছাগলের মস্তিষ্কের 'অতি' প্রবণতা থেকেই এসেছে। সবাইকে দেখি অসহিষ্ণু হয়ে আমার ছাগলটির মতো ফেসবুকের দেয়ালে শিং ঘষছে। আসলে নানারকমের ইজমের অতিরিক্ত প্রয়োগ হচ্ছে ছাগলের মতো শিং ঘষাঘষিবাদ।
গোট সেন্টিমেন্ট সিনড্রোম কী কেবল ভারতবর্ষেই।
বিশ্বায়নের যুগে ছাগলানুভূতি ব্যাপারটা বিশ্বায়িত হয়েছে; খুবই জনপ্রিয় এই সেন্টিমেন্ট। আরও ছোট খাট সাদৃশ্য চোখে পড়ে; আমার ছাগলটি আমার সঙ্গে ছবি তুলতে খুব পছন্দ করতো। আজকাল দেখছি এটাকে সেলফি প্রবণতা বলে। সেলিব্রেটির সঙ্গে সেলফি তোলার প্রচলন আমার ছাগলটিই করেছিলো।
ছাগলানুভূতি সংরক্ষণের কোন প্রয়োজনীয়তা আপনি বোধ করেন?
আমি না চাইলেও এটি সংরক্ষিত হবে। ছাগলানুভূতি রক্ষার জন্য আইনের নানারকম ধারা প্রণীত হয়েছে। রামছাগলের সঙ্গে ছাগলের প্রভু-ভৃত্য সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। ফলে প্রভুর প্রতি অতিভক্তি থেকে ছাগলেরা নিজেরাই ছাগলানুভূতি রক্ষায় মামলা দিয়ে আসে; কোথাও প্রভুকে নিয়ে যে কোন মন্তব্য বা কাজ ছাগলের চোখে প্রভুর জন্য মানহানিকর মনে হলে। কারণ ছাগল খুব ভাবমূর্তি সচেতন হয়। আমার নিজের ইমেজ নিয়ে আমি কখনো ভাবিনি; অথচ আমার ইমেজের চিন্তায় আমার ছাগল ঘুমাতে পারতো না; সারারাত ব্যা ব্যা করতো। আমার ছাগলটি চুরি করে দুষ্টু লোকেরা খেয়ে ফেলায় আজ আমার ইমেজ রক্ষার জন্য আর কেউ নেই। এটা আমার জন্য ভালো হয়েছে কী মন্দ হয়েছে তা আপনারাই ভালো বুঝবেন।
সাক্ষাৎকারটি কাল্পনিক
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন