চিত্রনায়ক ফারুক এবারের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তিনি আওয়ামীলীগের হয়ে ঢাকা ১৭ আসনের মনোনয়নও পেয়েছেন। সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে, নির্বাচন কমিশনের হলফনামায় সম্পদের হিসাবে তিনি গাজীপুরের কালীগঞ্জে ৬০ বিঘা জমির দাম দেখিয়েছেন মাত্র আড়াই লাখ টাকা। এমন যুগান্তকারী সংবাদে বিস্মিত সকলেই। বিস্মিত eআরকিও! তাই এবার eআরকির বিস্মিত একটি দল গিয়েছিল এক সময়ের পর্দা কাঁপানো এই নায়কের এই কাল্পনিক সাক্ষাৎকার নিতে।
সুদৃশ্য বাড়িতে ঢুকতেই আমরা দেখলাম, উঠোনেই একটি নৌকা রাখা। আমরা এটাকে তার নির্বাচনী প্রচারণার অংশ ভাবতেই তিনি আমাদের জানালেন, এটিই সেই নৌকা যেটিতে করে তিনি তার সখীকে নদী পার করাতেন। প্রথম জীবনের পেশার (এবং প্রেমের) স্মারক হিসেবে তিনি এটা নিজের কাছে রেখেছেন। প্রাথমিক কুশলাদি বিনিময়ের পর কথা শুরু হলো নির্বাচন নিয়ে। আসন্ন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি জানালেন, গুলশান বনানী এলাকা নির্বাচনী আসন হিসেবে তার পছন্দের হলেও, ঐ এলাকায় পানি ওঠে না এবং নৌকা চালানোর কোনো সুযোগ নেই বলে তিনি কিছুটা আশাহত।
eআরকি: বাংলার আপামর জনতা তো আপনাকে মাঝিরূপে দেখেছে, পছন্দ করেছে। এই মাঝি ক্যারেক্টার কি আপনাকে নৌকার হয়ে লড়তে উদ্বুদ্ধ করেছে?
ফারুক: খানিকটা তো অবশ্যই। ছোটবেলা থেকেই আমার এইম ইন লাইফ ছিলো মাঝি হবার। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমি লড়েছি। জানেনই তো, লক্ষ্যহীন জীবন মাঝিহীন নৌকার মতো!
eআরকি: প্রথমবারের নমিনেশনেই গুলশান-বনানীর মতো এলাকার সাংসদ প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন! নির্বাচিত হলেও কি পারবেন আপনি সব সামলে নিতে?
ফারুক: দেখুন, আমি দীর্ঘদিন মাঝি ছিলাম। সমুদ্রের সারেং ছিলাম। আমি নদী পারাপারও করেছি। নদী পারাপার করতে গিয়েই তো আমার সখীর সাথে দেখা। সখী তার বান্ধবীদের নিয়ে আমার ঘাটে আসত। কিন্তু বান্ধবীগুলো ফিচকে ছিল খুব। তাদের সবাই ছিল অবস্থাপন্ন ঘরের। বড়লোকদের কী করে সামলাতে হয়, তা আমার জানা আছে!
eআরকি: কিন্তু বলুন তো, এই জনপ্রতি আনা আনা নিয়ে আড়াই লাখ টাকা জমালেন কী করে? তাছাড়া আমরা দেখেছি, আপনি ঝড়ের মুখে সব হারিয়েছিলেন। সেখান থেকে কী করে ঘুরে দাঁড়ালেন?
ফারুক: ভুলে যাবেন না, ঘুরে দাঁড়ানোটাই আমার মূল মন্ত্র। আপনারা আনা আনা পয়সার কথাটাই মনে রেখেছেন, কিন্তু আমি যে সখীর কাছ থেকে কানের সোনা অর্থাৎ কানের দুল নিতাম সেটা ভুলে যাচ্ছেন কেন?
eআরকি: তাহলে আপনি বলতে চাচ্ছেন, সোনার কানের দুল নিয়েই আপনি এতো টাকা জমিয়েছেন!
ফারুক: হ্যাঁ, এতে কি অবাক হবার কিছু আছে? ছোট-ছোট বালুকণা দিয়ে যদি মহাদেশ হতে পারে, কানের দুল বেচে এরকম কিছু টাকা জমানো কি তাহলে অসম্ভব কিছু?
eআরকি: হুমমম… নাউ ইট মেকস সেন্স! কিন্তু কিন্তু আমরা তো দেখেছি সখী আপনাকে কানের সোনা দিতে একদমই নারাজ ছিল। এ ব্যাপারে কী বলবেন?
ফারুক: যা দেখো, তা তা না! এইটা শুনেন নাই? আপনারা প্রথম দিনের ঘটনাটাই দেখেছেন, পরের সব দিন সখী কী করে নদী পার হয়েছে সেটা তো আমি জানি (বলেই অট্টহাসি হাসলেন এই চিরতরুণ অভিনেতা)!
eআরকি: কিন্তু এই উত্তর তো আরেকটা প্রশ্নের জন্ম দেয়। আড়াই তিন লাখ টাকা নাহয় আপনি সোনার দুল বিক্রি করে জমিয়ে ফেলতে পারবেন, স্বর্ণের যা দাম! কিন্তু পানির দামে এত জমি কিনলেন কী করে?
ফারুক: দেখুন, সখীর বাবা ছিলেন গ্রামের একজন মাতব্বর। উনার জায়গা জমির কোন অভাব নাই। গাজীপুরেই উনার কয়েকশ একর জমি ছিল। মেয়ের নামেই তো আসলে সব জমি! তো, সখী কয়দিন পর বুঝে গেল, এইভাবে কানের দুল দিয়ে দিয়ে সে আর সুবিধা করতে পারবে না! তখন থেকেই সে জমির বিনিময়ে নদী পার শুরু করল।
eআরকি: আপনি বলতে চাচ্ছেন, প্রতিবার নদী পার হবার সময় সখী আপনাকে জমি লিখে দিত? সিরিয়াসলি? হোয়াট দ্য… লাক!
ফারুক: হ্যাঁ, লাকই বলতে পারেন। লাক নয় তো কী!
eআরকি: আজ অনেক কথা হলো। আপনার সাথে অবশ্য অনেক কথা বাকি রয়েই যায়…
ফারুক: অবশ্যই, অনেক কথা থেকে যায়! ট্রাক চালাতে চালাতে আমিই তো বলেছিলাম, দিন যায় কথা থাকে (বলেই আবারও অট্টহাসি এই তারকার)!
কুশল বিনিময় শেষ করে, আসন্ন নির্বাচনের জন্য শুভকামনা জানিয়ে eআরকি দল বেরিয়ে আসল এই নায়ক ফারুকের বাসা থেকে। ততক্ষণে শীতের দিন শেষ হয়ে আসছে। তখনো বিস্ময়ের ঘোর কাটেনি কারো। শীতের সন্ধ্যার মশার মতো বিস্ময়ও ঝেঁকে ধরল আমাদের!
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন