'A comparative study between two songs, Babu khaiso and Tumpa, a single observer experience.'
by Aniirban Ghosh
গত দুই মাসে বাঙালির হৃদয় এবং কোমর দুলে উঠেছে যে দুই সঙ্গীতে, তা হল 'বাবু খাইছো' এবং 'টুম্পা'। প্রথমটির জন্ম বাংলাদেশে, দ্বিতীয়টির পশ্চিমবঙ্গে। এই দুটো গানই আমার মনের মধ্যে এখন সর্বদা একই কম্পাঙ্কে আন্দোলিত হয়ে চলেছে। আমি স্ত্রীকে মেসেজে লিখছি, বাবু খাইসো? মেয়েকে বলছি 'বেটু সোনা দুটো হাম্পি দে না'। এই দুই গানকে নিয়েই স্থায়ী দাম্পত্যে খুশি ছিলাম আমি।
কিন্তু গত কয়েক দিনে মনের মধ্যে অশান্তি শুরু করেছে দুই সতীনে মিলে। প্রশ্নটা হলো,
কোন গানটা বেশি ভাল?
এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য এই লেখাটার অবতারণা। একে একটি বৈজ্ঞানিক মনের অনুসন্ধিৎসা হিসাবেই গ্রহণ করবেন প্লিজ।
কোন গানের ভাল মন্দ কীভাবে বিচার করা যায় তা জানার জন্য আমি দ্বারস্থ হয়েছিলাম Quora-র। সেখান থেকে প্রভূত জ্ঞান অর্জন করার পরেই এই লেখাটি শুরু করলাম।
এই ধরণের তুলনামূলক সাহিত্যে প্রথমেই আমাকে এমন একটি গান বেছে নিতে হত যাকে স্ট্যান্ডার্ড ধরে আমি উপরোক্ত গান দুটির বিচার করতে পারব। আমি এক্ষেত্রে বেছে নিয়েছি একটি নয়, দুটি গান। এরাই এই জনরার পিতা এবং মাতা। এরা হল- ১. দয়াল বাবা ২. টুনির মা।
তিন নম্বরে অবশ্যম্ভাবী ছিল বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না এবং কলকাতার রসগোল্লা। কিন্তু এতগুলো ভেরিয়েবলকে একা সামলাতে পারব না ভেবে শুধু বাবা-মাদের সামনে রেখেই দুই সদ্যোজাত সন্তানের বিচার করতে বসলাম।
দুটি গানের প্রাথমিক পরিচিতি
বাবু খাইছো
জনরা- পার্টিতে ফ্রিস্টাইলে নাচার গান। র্যাপ প্রধান।
প্রকাশকাল- দু'মাস আগে।
ইউটিউব ভিউ- ১৮ মিলিয়ন।
গীতিকার এবং গায়ক- ডিজে মারুফ।
সঙ্গীত পরিচালক- মীর ভ্রাতৃবৃন্দ।
রানটাইম- ৪ মিনিট ১৯ সেকেন্ড।
<
টুম্পা
জনরা- বাংলা ভাসানগীতি। মূলত ঝিঙ্কু সঙ্গীত।
প্রকাশকাল- এক মাস আগে।
ইউটিউব ভিউ- ৭ মিলিয়ন।
গীতিকার- আরোব।
সঙ্গীত পরিচালক- অভিষেক সাহা।
রানটাইম- ৩ মিনিট ১৩ সেকেন্ড।
এবার নিজের মনকে যতটা সম্ভব স্থির রেখে দুটো গানের তুল্যমূল্য বিচার শুরু করি।
১# লিরিক্স
বাবু খাইছো: র্যাপ হিসাবে আমার লিরিক্স খুব ভাল লেগেছে, ছোট ছোট বাক্যে ভাঙা। তাদের বেশ কিছুটা ছন্দেও মেলে। তবে একই লিরিক্স কিছু জায়গায় ঘুরে ঘুরে এসেছে। এটা র্যাপের স্বার্থেই শিল্পী করেছেন হয়ত।
যে কথাগুলো সেরা লেগেছে- ভালোটালো যতভালো ভালবাসা মহাকালো।
যে জায়গাটা খাজা লেগেছে- পাখি পাখি পকপক প্রোফাইলটা লকলক।
টুম্পা: টুম্পার লিরিক্সে বেশিরভাগ জায়গায় আমি নতুন কিছু পাইনি। তবে যেহেতু ঝিঙ্কু সঙ্গীত তাই এর লিরিক্স চমকে দেওয়ার মতো না হলেও চলে।
যে জায়গাটা সেরা লেগেছে: মাঝের র্যাপটা বেশ ভাল। বিশেষ করে- আমি হেরে যাওয়ার আগেই উলটে নেব তাস। (এই লাইনটা কি দীপাংশুরই লেখা? আনক্রেডিটেড?)
যে জায়গাটা খাজা লেগেছে: সামনের ভাদ্র মাসে, ছাদনা তলায় বসে…
যাই হোক, আমার মতে সব মিলিয়ে লিরিক্সে বাবু খাইসো এগিয়ে থাকবে।
২# মিউজিক
বাবু খাইছো: র্যাপ প্রধান হওয়ার কারণে মিউজিকের আধিক্য তেমন নেই। তবে বেশ একটা ইয়ো ইয়ো টাইপের গ্রুভি ব্যাপার আছে। জানি না ব্যাপারটা বোঝাতে পারলাম কি না। ভেবে নিন আমি দুই হাতের বুড়ো আঙুল আর কড়ে আঙুল বার করে আর বাকি আঙুলগুলোকে ভাঁজ করে ঘাড় বেঁকিয়ে বলছি- ইয়ো ইয়ো, ওইরকম।
টুম্পা: টুম্পার মিউজিক বেশ ঝিনচ্যাক। ভাসানগীতির জন্য আদর্শ। রিকশার ওপরে সিন্থেসাইজার রেখে দিব্যি বাজানো যাবে বলে আমার বিশ্বাস।
মিউজিকের দিক থেকে আমি টুম্পাকে এগিয়ে রাখব। বেশ নাচতে ইচ্ছা করে শুনলে। আমি আয়নার সামনে নাচতে চেষ্টাও করেছিলাম... আয়না বললো, 'why me?' তাই বন্ধ করতে হয়েছিল। তবে বাথরুমে শাওয়ারের নিচে নাচটা বেটার হচ্ছে।
৩# ভিডিওগ্রাফি
বাবু খাইছো: আমার খুব স্মার্ট লেগেছে। কী সুন্দর তিনজনে নাচছিল। ছেলেদুটো যদিও একটু নড়বড়ে, কিন্তু সামনের মেয়েটা ফাটিয়ে দিয়েছে।
তবে এই নাচ দেখতে যতটা ভাল লাগে, ততটাই কঠিন মুভগুলোকে রপ্ত করা। আমি চেষ্টা করে দেখিনি। কেউ করে থাকলে আমাকে জানাবেন।
টুম্পা: টুম্পার ভিডিওগ্রাফি আরো স্মার্ট। খুবই ভাল এডিটিং৷ প্রচুর প্রপসের ব্যবহার করেছেন ডিরেক্টর। কালো কুকুর ছানাটাও কেমন মিষ্টি হয়ে বসে ছিল। যেহেতু ক্যাওড়ামিটাই এই গানের মূল লক্ষ্য তাই তার ব্যবহারে কোন খামতি দেখিনি।
টুম্পার নাচ যে কেউ নাচতে পারে। আগেই জানিয়েছি, আমিও নাচছি, হেবি লাগছে।
এই সেগমেন্টে আমি টুম্পাকে এগিয়ে রাখব।
৪# গানের মূল বক্তব্য
বাবু খাইছো: বর্তমান সময়ের জন্য ভীষণ ভাবে রেলেভেন্ট। এখানে পলিগ্যামিকে কাটাছেঁড়া করা হয়েছে। তবে আদর্শ প্রেমের রস না নিতে পারার জন্য যে নিহিলিজমের জন্ম গীতিকার দিয়েছেন তা আমার ভাল লাগেনি।
টুম্পা: টুম্পাও খুবই প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে কথা বলে। তবে এই গান আশার আলো দেখায়। বউ ভেগে গেলেও টুম্পা আমাকে ভেগান হতে দেবে না এই ভেবে শ্রোতা আনন্দ পান। এই অপটিমিজমের জন্য টুম্পা এগিয়ে থাকবে।
৫# সামাজিক বার্তা
দুটি গানই একই রকমের সেক্সিস্ট এবং অবদমিত মিসোজিনিকে প্রশ্রয় দেয়। যাদের অফেন্ডেড হওয়ার থ্রেশহোল্ড কম তারা অবশ্যই রেগে যান এবং প্রতিবাদ করুন। এটা নিয়ে ফেসবুকে এখনও অব্দি ন্যারেটিভের অভাব আছে।
৬# রিপিটেবিলিটি
এই জায়গায় কিন্তু আমি বাবু খাইছোকে এগিয়ে রাখতে বাধ্য হচ্ছি। আহা আস্ক করোনা, আস্ক করোনা… এই শব্দগুচ্ছের স্রষ্টাকে আমার শতকোটি প্রণাম। ওই জায়গাটুকু বারবার গাইতে খুব ভাল লাগছে। নিজে কিছু ভুলে গিয়ে স্ত্রীকে এই সুরে জিজ্ঞাসা করুন- আহা আস্ক করোনা, আস্ক করোনা। আমার বাংলাদেশি বন্ধুদের কথায় বলি- 'খুব মজা আছে এতে!'
৭# কালজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা
এইটা খুব কঠিন একটা ব্যাপার। এই দুটো গানের একটিও কি দয়াল বাবা কলা খাবা... অথবা ও টুনির মা তুমি টুনিরে বোঝাও না…র মতো বাঙালির মননে চিরস্থায়ী জায়গা করে নেবে? আমার মনে হয় এর যোগ্য বিচারক সময়ই। তবে আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয় বাবু খাইছোর অমর হওয়ার সম্ভাবনা একটু বেশি। গানের শুরুতেই গায়ক 'কী? হেলমেট টেলমেট পরে রেডি তো নাকি?' বলে আমাদের বুঝিয়ে দেন যে একটা দারুণ কিছু হতে চলেছে। অন্যদিকে টুম্পার শুরুর আগেই একে ভাসানগীতি নাম দেওয়ায় জনসংযোগের সুযোগটা কি একটু ন্যারো হয়ে গেল না?
জীবনের একটি ঘন্টা আমি ব্যয় করলাম এই জ্ঞানগর্ভ এবং চিন্তাশীল বক্তব্যে। আপনিও আপনার সময় একইভাবে নষ্ট করে আমাকে জানান কোন গানটি বেশি ভাল লাগে আপনার? বাঙালি ডিলেমা বেশি পছন্দ করে না। তাকে এই দোলাচল থেকে মুক্তি দিন।
লেখা: অনির্বাণ ঘোষ
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন