নায়ক রিভিউ: ওমর সানী
জনরা: রোমান্স, ট্র্যাজেডি, হিউমিলিয়েশন
পার্সোনাল রেটিং: ৯/১০
আমার ছোটবেলার এক বড় হিরো হচ্ছে ওমর সানী, যার ইংরেজি নাম ইমমর্টাল সানী। বর্তমান যুগের সিঙ্গেল ছেলেরা যেখানে ফেসবুকে শত শত ডেটিং গ্রুপে জয়েন দিয়েও একটা গার্লফ্রেন্ড জোটাতে পারছে না, সেখানে ওমর সানী বনে-জঙ্গলে সময় অসময়ে বাঁশি বাজিয়েই অনেক সুন্দরী মেয়ে পটিয়েছিলেন। বাঁশি তিনি বনে-জঙ্গলে বাজালেও কোনো এক অদ্ভুত কারণে এসব বাঁশির সুরে সবসময় সাড়া দিতো শহরের পাড়া জাগানো চৌধুরী পরিবারের মেয়েগুলো! বনে-জঙ্গলে কাঠ কেটে বেড়ানো পিএসসিতে এ প্লাস না পাওয়া একটা ছেলের বাঁশির সুরে চৌধুরী পরিবারের মেয়েগুলোর সাড়া দেওয়ার বিষয়টা এখনো একটা অমীমাংসিত রহস্য বটে!
তবে সানী ভাইয়ের কপালটা এত উজ্জ্বল ছিলো না! তার গার্লফ্রেন্ডগুলো যত সহজে সাড়া দিতো, তত সহজে কিন্তু বিয়ে করে সংসার করতে রাজি হতো না। চৌধুরী সাহেবের মেয়েগুলো অকারণেই সানী ভাইকে প্রচুর নির্যাতন করতো। জাস্ট খুশিতে ঠ্যালায় ঘোরতে তারা সানী ভাইয়ের ওপর চাবুক চালাতো। আমি এই চাবুক জিনিসটা প্রথম চিনেছি উনার মার খাওয়ার কল্যাণেই। বোধহয় চাবুক জিনিসটা তৈরিই হয়েছিল সানী ভাইয়ের পিঠে পড়বে বলে। ছোটবেলায় এসব চাবুককে যখন জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, 'তোমার জীবনের লক্ষ্য কী?' তখন এরা উত্তর দিয়েছিল, 'আমার জীবনের লক্ষ্য ওমর সানীর পিঠে চাড়া!' কী সাংঘাতিক রে বাবা!
তবে এই নায়িকারা শুধু চাবুক মারাতেই ক্ষান্ত ছিলো না। একবার তো একজনকে দেখেছি ঘোড়ার উপর থেকে নামার জন্য সানী ভাইয়ের পিঠকে স্ট্যান্ড হিসেবে ব্যবহার করতে। ঐ জায়গাটাতে বর্তমান জেনারেশনের কেউ থাকলে নির্ঘাত ব্রেকাপ করে চলে আসতো। প্রেমিকার কথায় বড় জোর বাবুর্চি হওয়া যায়, কিন্তু ঘোড়া থেকে নামার স্ট্যান্ড হওয়া যায় না! তবে একক প্রেমে বিশ্বাসী সানী ভাই তা করেননি। বরং নায়িকা আর নায়িকাদের বাবার শত অত্যাচার চোখের জল ফেলে ফেলে মেনে নিয়েছিলেন। এই যুগে এরকম প্রেম এখন আর দেখা যায় না।
অপরদিকে এরকম সর্বত্যাগী প্রেমিককে নায়িকারা সবসময় ভুল বুঝতো। আর পরিণামে সানী ভাই আরও কয়েক মিলি লিটার চোখের জল বিসর্জন দিতেন। 'মানুষের চোখ একটা গরম নোনা পানির সমুদ্র'- বিজ্ঞানীরা এই থিওরিটার প্রমাণ পেয়েছিলেন সানী ভাইয়ের সিনেমা দেখেই।
অনেকেই হয়তো ভাবছেন, নারীদের হাতে এত নির্যাতিত হওয়ার পরও সানী ভাই কেন কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা নেননি- তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, দেশে নারী নির্যাতন আইন থাকলেও পুরুষ নির্যাতন আইন না থাকায় সানী ভাই নায়িকাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেননি। অবশ্য ব্যবস্থা না নেওয়ার পেছনে আরও একটা কারণও ছিলো। 'ব্যবস্থা নিলে যদি রিলেশন ভেঙে যায়?'- এই ভয় থেকেই সানী ভাই সব মুখ বুঝে সহ্য করতেন।
আজকের যুগের মেয়েরা কেমন বয়ফ্রেন্ড চায়, সেই লিস্টে হাজারটা ক্রাইটেরিয়া যুক্ত না করে চাইলে এক কথাতেই সব বলে দিতে পারে- 'আমি ওমর সানীর মতো কাউকে চাই!'
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন