সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত সাড়া জাগানো সিনেমা 'হাওয়া'। সিনেমাটি দেখার পর আমার মনে হয়েছে সত্যিকার অর্থে 'হাওয়া' কোনো সিনেমা নয়, এটি একটি অনুভূতি যা সৃষ্টি করে পরাবাস্তব ঘোরের মতো কিছু মুহুর্ত। যে মুহুর্তগুলোতে প্রবেশ করা সহজ, কিন্তু বের হবার রাস্তা অপ্রতুল। যে কোনো সিনেমা মুক্তির পরপরই বাংলার সিনেমাবাদীরা প্রশ্ন তোলেন 'এই সিনেমা থেকে আমরা কী শিখলাম?' এই প্রশ্নটি একটি সিনেমার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
চলুন দেখে আসি 'হাওয়া' থেকে আমরা সত্যিই কী শিখতে পারলাম..
১# ‘হাওয়া' একটি জীবনমুখী সিনেমা। আমাদের অনেকেই বাতাসের ভেতর সিগারেট ধরাতে হিমশিম খান। এই সমস্যার সমাধান আছে 'হাওয়া' সিনেমায়। এখানে দেখানো হয়েছে প্রচন্ড বাতাসে কীভাবে গেঞ্জির ভিতর লাইটার ও সিগারেট ঢুকিয়ে সিগারেট ধরাতে হয়। এতে করে ইউটিউবে বাতাসে সিগারেট ধরানোর টিউটোরিয়াল খুঁজে এক্সট্রা এমবিও নষ্ট হবে না, আবার সিনেমাও দেখা হবে।
২# অনেকেই ভেবে থাকেন মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় অনেক বেশি কথা বলে। এর সাথে সহমত জ্ঞাপন করেছে বিভিন্ন রিসার্চও। বিবিসির তথ্যমতে একজন নারী দিনে গড়ে ২০,০০০ শব্দ উচ্চারণ করেন যেখানে পুরুষের ক্ষেত্রে এ সংখ্যা মাত্র ৭০০০!
তবে এমন মুখরোচক ধারণা ভেঙে দিয়ে 'হাওয়া'তে আমাদের সামনে গুলতি চরিত্রে হাজির হয়েছেন
নাজিফা তুষি। প্রথম কয়েকদিন নৌকায় গুলতির আচরণ দেখে তাকে সবাই বোবা ধরে নিয়েছিলো।
আশা করি এ সিনেমা দেখার পর মেয়েদের সম্পর্কে এমন বিভ্রান্তিকর তথ্যের সমাপ্তি ঘটবে।
৩# খাদ্য বেঁচে থাকার জন্য সবচেয়ে জরুরি জিনিস হলেও অনেকেই খাবার নিয়ে ছোঁকছোঁক করেন। 'হাওয়া' সিনেমাটি দেখলে আপনি সাঁ করে শিখতে পারবেন 'হাউ টু ডিল উইথ হাঙ্গার'। সিনেমার একটি দৃশ্যে ক্ষুধার তাড়নায় মাছের বরফ খেতে দেখা যায়। এর আগে কোনো নাটক সিনেমায় এতো তৃপ্তি করে বরফ খেতে দেখা যায়নি। বলা যায় ইতিহাসে এবারই প্রথম। এ দৃশ্য আমাদের মনে করিয়ে দেয় ক্ষুধার রাজ্যে গদ্যময় পৃথিবীর কথা।
সিনেমাটি দেখার পর ক্ষুধায় দুমড়ে মুচড়ে শেষ হয়ে যাবার আগে এই দুই জেলের মতো হাতের কাছে যা থাকবে তা দিয়ে পেট চালানোর স্পৃহা খুঁজে পাবেন। মূলকথা, সিনেমাটি আমাদের খারাপ সময়েও বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা দেয়।
৪# এই সিনেমাটি সাগরকেন্দ্রিক হলেও মূলত নারী ক্ষমতায়নের প্রতীক। বেদের মেয়ে হলেও গুলতির ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে সে ছোটবেলায় কারাতে কিংবা মার্শাল আর্টের কোর্স করেছিলো। বিপদে আত্মরক্ষার সময় কাকে, কোথায়, কীভাবে মারতে হয় এটি তার নখদর্পনে। নারীকে যারা দুর্বল ভাবেন, এবং যেসব নারীরা নিজেদের দুর্বল ভাবেন তাদের এই সিনেমাটি দেখা অত্যন্ত জরুরি।
৫# অত্যন্ত ফ্যাশন সচেতন ও শাড়ি লাভার মেয়েদের গুলতি চরিত্রটির কাছে থেকে শেখার মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি এলিমেন্ট আছে। গুলতি যতদিন বোটে ছিলো ততদিন সে একটি শাড়িই পড়ে ছিলো। চাইলেই সে ব্যাক আপ শাড়ি নিয়ে দরিয়ায় ঝাপ দিতে পারতো, কিন্তু দেয়নি। এদিকে এখনের শাড়িপ্রেমী মেয়েরা এক শাড়ি দু'বার পড়ে না, প্রতি অকেশনে নতুন শাড়ি চায়। আমাদের সবার গুলতির কাছ থেকে মিনিমালিস্ট জীবন যাপন শেখা উচিৎ।
৬# হাওয়া সিনেমার বেশ কয়েকটি জায়গায় আমরা মাছ রান্নার রেসিপি পাই। যারা রান্না শেখায় জটিলতার সম্মুখীন হচ্ছেন, তাদের জন্য এ সিনেমাটি হতে পারে একটি চমৎকার মাধ্যম। শুধু তাই নয়, কীভাবে চিকেন ফ্রাইয়ের মতো পাখি ফ্রাই করা যায়, এর বেসিকটুকুও সিনেমা থেকে শিখতে পারবেন।
৭# সোশ্যাল মিডিয়ায় বন্ধু/এক্স প্রেমিক-প্রেমিকাকে রূপক অর্থে সাপ বলার একটি ট্রেন্ড বহু আগ থেকেই চলে আসছে। এক্ষেত্রেও 'হাওয়া' একটি ব্যতিক্রমধর্মী। সাপ যে সবসময় বন্ধু না হয়েও বন্ধুর চেয়ে বেশি কিছু হতে পারে তার শিক্ষাই রয়েছে এই সিনেমায়।
৮# আগুন এবং পানি একে অপরের শত্রু হলেও এই সিনেমার একটি চরিত্রে তাদের বন্ধু বানিয়েছে। এই চরিত্রকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে একটি অসাধারণ 'বিড়ি ট্রিক' আমরা শিখতে পারি।
একটি দৃশ্যে তিনি জ্বলন্ত বিড়ি মুখে নিয়ে অনেকক্ষণ পানিতে ডুবে আবার সেই বিড়িই টেনেছেন। স্মোকাররা এই ট্রিক ব্যবহার করে মানুষকে চমকে,কিছু ক্ষেত্রে ইমপ্রেসও করতে পারেন।
৯# যাদের টাট্টিখানা নিয়ে বিশেষ খুঁতখুঁতানি আছে, যারা টাঙ্গুয়ার হাওড়ে নৌকার টাট্টিখানা নিয়ে অভিযোগ করেন, কিংবা যারা পাবলিক টয়লেটেও যেতে চান না, তাদের জন্য বিরাট একটি শিক্ষা হতে পারে 'হাওয়া' সিনেমাটি। নির্জলা প্রকৃতি আমাদের যখন ডাকে তখন সাড়া দেওয়াই আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। আজকের কাজ আগামীদিনের জন্য ফেলে রাখবেন না।
১০# সিনেমার একটি দৃশ্যে পিথাগোরাসের উপপাদ্য মুখস্ত করার একটি সহজ তরিকা দেখানো হয়েছে।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন