মীর্জা গালিব মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। তখন মুসল্লীরা তাকে বাধা দিল। বলল, মসজিদ আল্লাহর ঘর। মদ্যপানের জায়গা নয়।
গালিব তাকালেন মুসল্লীদের দিকে। তারপর আরেক চুমুক খেয়ে আওড়ালেন উপস্থিত শের,
'শরাব পিনে দে
মসজিদ মে ব্যায়ঠ কার,
ইয়া ও জাগা বাতা
যাঁহা খুদা নেহি।'
মুসল্লীরা লা জবাব। কী জবাব দেবেন। খোদা নাই এমন জায়গার কথা বলা শক্ত বইকি।
তবে জবাব দিলেন আল্লামা ইকবাল। বহু বছর পর। তার শের দিয়ে। তখন মীর্জা আর বেঁচে নেই।
'ইয়া গালিব, মসজিদ খুদা কা ঘর হ্যায়
পিনে কি জাগা নেহি,
কাফির কে দিলমে যা
ওঁয়াহা খুদা নেহি।'
কাফের মানে অবিশ্বাসী। তার অন্তরে খুদার জায়গা নাই। তাই গালিবকে সেখানে গিয়ে মদ্যপান করতে বলা হয়েছে৷
আহমদ ফারাজ নামের আরেকজন কবি এর প্রতিউত্তরে লিখলেন-
'কাফির কে দিল সে
আয়া হু দেখ কার
খুদা মওজুদ হ্যায় ওঁয়াহা
উসসে পাতা নেহি।'
(কাফিরের মনে উঁকি দিয়ে এসেছি দেখে
সেখানেও খুদা আছে, কিন্তু সে জানেই না।)
তার জবাবে কবি ওয়াসি লিখলেন-
'খুদা তো মওজুদ
দুনিয়া মে হার জাগা
তু জান্নাত মে যা
ওঁয়াহা পিনে সে মানা নেহি।'
(খুদা তো দুনিয়ার সবখানেই উপস্থিত আছে
তুমি জান্নাতে যাও, ওখানে মদ খেতে বাধা নেই)
কবি ওয়াসি এখানে 'শরাবান তহুরা'র কথা বলেছেন। যেটা জান্নাতবাসীরা যত ইচ্ছা খেতে পারবে। কিন্তু মাতাল হবে না। জান্নাতের মধ্যে হারাম-হালালের মাসয়ালা আসবে না। সব বিধিনিষেধ শুধু দুনিয়ার জন্যই প্রযোজ্য।
এরপরে সাকি লিখলেন-
'পীতা হুঁ সাকি
গাম-এ-দুনিয়া ভুলানে কে লিয়ে
জান্নাত মে কৌন সা গাম হ্যায়,
ইস লিয়ে ওঁয়াহা মাজা নেহি।'
সাকি বলতে চাইছেন, জান্নাতে তো দুনিয়াবি দুঃখ-কষ্ট থাকবে না। ওখানে কষ্ট ভোলার জন্য মদ গেলার সেই মজা পাওয়া যাবে কি?
এই গল্পের মানে হচ্ছে প্যাঁচ, তার পরে প্যাঁচ, এর পরে আরও বেশি প্যাঁচ। সবশেষে জিলাপি থেকে আমিত্তি হয়ে প্যান্টের পকেটে থাকা ইয়ারফোনের তারের মত কঠিন প্যাঁচ। কোনদিক থেকে কিভাবে প্যাঁচ লেগে গেল কেউ ঠাহরই করতে পারবে না।
পৃথিবীতে শিক্ষিত ব্যক্তিরাই সবচেয়ে বেশি কনফিউজড। কম জানা লোকের মনে সন্দেহ থাকে না।
লেখা: শরীফ হাসান
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন