হীরক রাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে জরুরি ডাক পড়েছে ভ্যাটমন্ত্রীর। যথাসময়ে উপস্থিত হয়ে মন্ত্রী দেখেন পরিস্থিতি বেশ থমথমে। প্রধানমন্ত্রী তাকে দেখেই হুংকার ছাড়লেন, 'ভ্যাটমন্ত্রী!!! তুমি বললা বাজেটের পর রাজস্ব আদায় বাড়বে। এখন তো অবস্থা আরও খারাপ হলো। গত বছরের চেয়েও তো কমে গেল!'
ভ্যাটমন্ত্রী বেশ অবাক হলেন। বললেন, 'অসম্ভব! এটা তো কিছুতেই হতে পারে না! এমন বাজেট দিয়েছি, জনগণ ভ্যাট না দিয়ে যাবে কই! নিশ্চয় এইচবিআর কোনো ঘাপলা করেছে!'
হীরক রাজ্য’স বোর্ড অব রেভিনিউ (এইচবিআর)-এর মহাপরিচালক প্রতিবাদ করলেন সঙ্গে সঙ্গেই। বললেন, 'না মাননীয় মন্ত্রী, এখানে এইচবিআরের কোনো দোষ নেই।'
'তাহলে?' ভ্যাটমন্ত্রী জানতে চান, 'রাজস্ব আদায় কমে গেল কেন?'
মহাপরিচালক বললেন, 'জনগণের বিনোদনমাধ্যমের ওপর ভ্যাট বাড়ানোর পর কেউ আর ঘুরতে যায় না। পরিবহন খাতে ভ্যাট দেওয়ায় কেউ গাড়িঘোড়ায় চড়ে না। খাবারের ওপর ভ্যাট বাড়ানোয় কেউ খাবার কেনে না। খাবারই যেখানে কেনে না, বুঝতেই পারছেন কেউ আসবাবপত্র, ল্যাপটপ, মোবাইল কিছুই কেনে না। আগে মুঠোফোনে কথা বলত, এখন তাও বলে না!'
তারপর প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে মহাপরিচালক বললেন, 'জনগণ যখন কিছু কেনে না, ব্যবহার করে না, কোনো সেবাই নেয় না, তখন ভ্যাটটা আমি আদায় করব কীভাবে, ম্যাডাম?'
প্রধানমন্ত্রী বললেন, 'আমি কিছু জানি না। তোমাদের বেতন হয় জনগণের টাকায়। জনগণের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করতে না পারলে বেতন বন্ধ।'
ভ্যাটমন্ত্রী বললেন, 'আচ্ছা মহাপরিচালক, জনগণ যদি না খায়, গাড়িঘোড়ায় না চড়ে, ঘুরতেও না যায়, তারা সারাদিন করেটা কী!'
'ঘরে বসে থাকে, স্যার।' মহাপরিচালক উত্তর দেন।
'ইউরেকা!' লাফিয়ে ওঠেন ভ্যাটমন্ত্রী। বলেন, 'মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি কোনো চিন্তা করবেন না। আজ থেকে দিনের বেলা মানুষের ঘরে থাকার ওপর ভ্যাট বসানো হলো! কেউ যদি দিনের বেলা ঘরে থাকে, তাকে ঘণ্টা প্রতি এক শ টাকা চার্জ এবং ২৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে!'
প্রস্তাবটা উপস্থিত সবার বেশ পছন্দ হলো। ভ্যাটমন্ত্রী বললেন, 'আজই প্রজ্ঞাপন জারি করে দিচ্ছি। জনগণ ভ্যাট না দিয়ে যাবে কই!'
পরদিন ভ্যাটমন্ত্রী অফিস যাওয়ার সময় দেখলেন, রাস্তার চারপাশে নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ সবাই বসে বসে কাঁদছে। মন্ত্রী গাড়ি থেকে নামলেন। অবাক হয়ে বললেন, 'আমার দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য এত বড় বড় ফ্লাইওভার করলাম, সেতু বানালাম, স্যাটেলাইট পাঠালাম, তারপরও তারা রাস্তায় বসে কাঁদে কেন!'
এক বৃদ্ধা উত্তর দিলেন, 'আগে ঘরে বইসা কাঁদতাম গো স্যার, আপনে ঘরে থাকনের ওপর ভ্যাট বসানোর পর রাস্তায় বইসা কান্দি!'
মন্ত্রী দেখলেন, সমস্যা তো আসলে ঘরে বা বাইরে না, সমস্যা তো চোখের পানিতে। এটাই তো সবচেয়ে বড় খাত! সঙ্গে সঙ্গে তিনি ঘোষণা দিলেন, 'এখন থেকে কান্নার ওপর শতকরা ৫০ ভাগ ভ্যাট আরোপ করা হলো! চোখে পানি আসুক বা না আসুক, কেউ কাঁদলেই ভ্যাটসহ চার্জ দিতে হবে।'
মন্ত্রীর কথা শুনে জনগণ হো হো করে হেসে উঠল। তাদের হাসি আর থামেই না।
মন্ত্রী তার পিএসকে বললেন, 'এরা হাসে কেন? পাগল হয়ে গেল নাকি!'
পিএস বললেন, 'হতে পারে স্যার, যে দেশের শাসনকর্তারা যেমন, জনগণ তো তেমনই হবে!'
মন্ত্রী বললেন, 'মানে! কী বলতে চাও তুমি?'
পিএস মুখে তার চিরায়ত তেলতেলে হাসি ফুটিয়ে বললেন, 'সুখে হাসে স্যার, সুখে! আপনি সুখী মানুষ, আপনার জনগণও তাই সুখী।'
কথা শুনে মন্ত্রী আবেগী হয়ে গেলেন। বললেন, 'মানুষের মুখে হাসি ফোটাব বলে, তাদের সুখী দেখব বলে সারাজীবন রাজনীতি করেছি। আজ আমার জনগণ সুখী, আজ আমি সফল।'
আবেগে ভ্যাটমন্ত্রীর চোখে পানি চলে এল। তার আজ অনেক কাঁদতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু বেশি কাঁদলে আবার বেশি ভ্যাট দিতে হবে বলে দ্রুতই তিনি চোখের পানি আড়াল করে নিলেন।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন