রুহামনামা ৫ : অন মানে অন, অন না মানে অফ, অনন্যা আবার কেমন নাম?

১৪২৫ পঠিত ... ১৭:৩৮, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৯

[ছড়াকার রোমেন রায়হানের এগারো বছর বয়সী একমাত্র সন্তান রুহাম। একমাত্র হওয়ার কারণে রুহামের সারাদিনের গল্প, স্কুলের গল্প, বন্ধুদের গল্প সবই তার বাবা-মায়ের সাথে। হুট করে একদিন রুহামের বাবা খেয়াল করলেন, ছেলের কার্যকলাপ কিংবা কথাবার্তা তো বেশ মজার! তবে সমস্যা একটাই, রুহামের প্রতিদিনের মজার কর্মকান্ড দিন না ফুরোতেই তিনি ভুলে যাচ্ছেন। তাই পাঁচ বছর আগে হঠাৎ করেই একদিন সিদ্ধান্ত নিলেন, রুহামের পাকামি, বোকামি, দুষ্টুমিগুলো লিখে রাখার। রুহামকেন্দ্রিক সেই রচনাগুলো নিয়েই 'রুহামনামা'। যা পড়লে আপনি কখনো হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়বেন, নিজের ছোটবেলার কথা মনে পড়বে, অবাক হবেন বা কখনো মমতায় আপনার হৃদয় আর্দ্র হয়ে উঠবে। --সম্পাদক] 

 

ছড়ার মিল

এবার আমি জাপানে ছিলাম ১৫ দিন। ভাইবারে প্রায় প্রতিদিন আমার সাথে রুহামের কথা হতো। একদিন বলল-

রুহাম: বাবা, নানাভাইকে নিয়ে আমি একটা ছড়া বানিয়েছি
আমি: কী বানিয়েছিস?
রুহাম: নিজাম উদ্দিন! আমাকে একটু দুধ দিন (উল্লেখ্য রুহামের নানার নাম নিজাম উদ্দিন)
আমি: দুধ দিন কেন? নানাভাই যে তোকে প্রায়ই মিটবল এনে খাওয়ায়!
রুহাম: ‘মাংস দিন’ বলতে পারতাম। কিন্তু তাহলে তো মিলতো না।
আমি: হুম, তা তো ঠিকই।

 


মুড়িঘণ্ট

ডাইনিং টেবিলে আমি আর রুহাম খেতে বসেছি। আমি রুহামের প্লেটে মুড়িঘণ্ট তুলে দিচ্ছি

রুহাম: এটা কী বাবা?
আমি: খা, এটা হলো মুড়িঘণ্ট।
রুহাম: (ডাইনিং টেবিলের উল্টোদিকের দেয়ালে রাখা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে) মুড়িঘণ্ট নাকি মুড়িঘণ্টা?
আমি: ঘণ্টা নারে, ঘণ্ট ঘণ্ট...
রুহাম ‘অ’ বলে খেতে শুরু করল।
রুহাম: (হঠাৎ হাতে শক্ত কিছু একটা লাগায় সেটা ধরে আমাকে দেখিয়ে) মুড়িঘণ্টতে এটা কী বাবা?
আমি: (দেখেই বোঝা গেল মাছের কাঁটা) কাঁটা, এটা কাঁটা।
রুহাম: এই জন্যই তো বলেছিলাম এটা মুড়িঘণ্ট না মুড়িঘণ্টা। (আরেকবার ঘড়ির দিকে চিকনে তাকিয়ে) এই তো দেখলে এটাতে ঘণ্টার কাঁটা আছে।

 

 

রোমেন হাজবেন্ড

রুহামের আম্মু: রোমেন, আজকে তুলিকে (আমার বন্ধু নাভিদের স্ত্রী) ফোন দিয়েছিলাম। বলেছি শুক্রবার সকাল সকাল চলে আসতে।
আমি: কী বলল ভাবী?
রুহামের আম্মু: বলল, দেখি আমার সাহেবকে জিজ্ঞেস করে।

‘দেখছ! নাভিদটাও সাহেব হয়ে গেল। আমিই কিছু হতে পারলাম না’ বলে একটা কৃত্রিম দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম। আলোচনায় রুহাম ঢুকে পড়ল

রুহাম: বাবা!
আমি: বল।
রুহামঃ আম্মু তোমার থেকে ছোট। তাই না?
আমিঃ হু।
রুহাম: আম্মু তাহলে তোমাকে ‘রোমেন’ ডাকে কেন?
রুহামের আম্মু: (হেসে) তাহলে কী ডাকব? ‘রোমেন ভাই’?
রুহাম: (একটু ভেবে) ‘রোমেন হাজবেন্ড’ ডাকতে পারো!

 

 

অনন্যা

ল্যাপটপের সিডি ড্রাইভে অনেক দিন ধরেই অনন্যার গাওয়া নজরুলের গান ‘প্রেম যমুনার তীরে’ ঢোকানো আছে। মাঝে মাঝেই এটা থেকে গান শুনি। আজকেও শুনছিলাম। বললাম

আমি: আহা, মেয়েটা কী সুন্দর গান করে!
রুহাম: বাবা, মেয়েটার নাম কী?
আমি: ওর নাম ‘অনন্যা’।
রুহাম: অ-ন-অ-ন-না! ওর নাম এরকম কেন?
আমি: কী রকম?
রুহাম: এই যে ‘অন’ আবার ‘অন না’। ‘অন’ মানে তো ‘অন’ আর ‘অন না’ মানে ‘অফ’। ‘অন অফ’ কারো নাম হয়!

আমি ‘চুপ কর’ বলে ধমক দিয়ে ‘অফ’ করালাম এই ইঁচড়ে পাকাকে।

 

 

মানব সৃষ্টির কার্যকারণ

রাতে ঘুমানোর আগে বিছানায় শুয়ে শুয়ে আমি আর রুহাম গল্প করছি-

রুহাম: ...বুঝেছ বাবা, আল্লাহ পৃথিবী চালানোর জন্য প্রথমে ডাইনোসর বানিয়েছিল।

আমি: তারপর?

রুহাম: তারপর দেখলো নাহ ডাইনোসরের তো বুদ্ধি কম।

আমি: তাই নাকি?

রুহাম: হু, আল্লাহ যখন বুঝলো ডাইনোসর দিয়ে পৃথিবী চালানো যাবে না তখন ডাইনোসরের রি-প্রডিওশান বন্ধ করে দিল।

আমি: রি-প্রডিওশান বন্ধ করে দিল মানে কী?

রুহাম: রি-প্রডিওশিান বন্ধ করে দিল মানে হলো ডাইনোসরের ডিম পাড়া বন্ধ করে দিল।

আমি: ও!

রুহাম: আল্লাহ তারপর ওখান থেকে মানুষ বানিয়েছে।

আমি: ওখান থেকে মানে ডাইনোসরের ডিম থেকে?

রুহাম: আরে নাহ। আল্লাহ মাটি থেকে অ্যাডাম আর ইভকে বানিয়েছে পৃথিবী চালানোর জন্য।

আমি: মানুষের বুদ্ধি কি ডাইনোসরের চেয়ে বেশি?

রুহাম: কত্ত বেশি!

আমি: তাই নাকি?

রুহাম: তাই তো। দেখ না মানুষ বিল্ডিং বানাতে পারে। ডাইনোসর কি বিল্ডিং বানাতে পারতো?

আমি: না রে, পারতো না।

রুহাম: এইজন্যই তো।

মানব সৃষ্টির এই কার্যকারণ ইতিহাস রুহাম কোত্থেকে পেল জানতে হবে।

 

[রুহামের সর্বমোট ৮০টি নানা ধরণের কর্মকান্ডের গল্প নিয়ে চন্দ্রাবতী প্রকাশনী থেকে এবারের বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে বই 'রুহামনামা'। ঘরে বসে পেতে চাইলে কিনতে পারেন রকমারি ডটকম থেকে।]  

আরও পড়ুন-

রুহামনামা ১ : চায়নার ধুলা গড়িয়ে এসে আমাদের দেশে পড়ে বলেই কি বাংলাদেশে এত ধুলা?

রুহামনামা ২ : ওবাকের বাচ্চারা যখন মেঘের উপর গোসল করে, তখন যে পানি গড়িয়ে পড়ে ওটাই বৃষ্টি

রুহামনামা ৩ : ওয়াইফ অ্যান্টটাকে খেয়ে ফেললে হাজবেন্ড অ্যান্টটা অ্যাংরি হল কেন?

রুহামনামা ৪ : ইংরেজি যদি না শিখি, ‘ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ’ হলে ইন্টারভিউ দেব কীভাবে?

১৪২৫ পঠিত ... ১৭:৩৮, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৯

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top