দুনিয়াজুড়ে ঘোরা বেস্ট সেলার এই বইটির বুক রিভিউ, মতান্তরে ফেসবুক রিভিউ লেখার আগে শুধু এটুকু জানাতে চাই, এমন বইটি কোথাও আমি পড়িনি আগে। পত্রিকায় ছাপা ম্যারাডোনার কলামগুলো যিনি লেখেন, হয়তো এই বইটিও তিনিই লিখেছেন। নাহলে নেইমারের মতো দুর্দান্ত অভিনেতা কী করে এত দারুণ লিখতে পারেন, তা আমার বোধগম্য হয় না! অক্ষরগুলো যেন সবুজ মাঠের ভেতর ছটফট করছে, আর একটু পরপর একবার চড়াই একবার উতরাইয়ে পড়ছে। শব্দগুলোর লক্ষ্যই যেন দৌড়ানো, আর তারপর পড়ে যাওয়া! বিশ্বসাহিত্যে এমন পতনোন্মুখ লেখা দ্বিতীয় দেখি নাই।
বইয়ের প্রথমেই নেইমার ব্রাজিল সমর্থক বাংলাদেশি ফেসবুকারদের কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। সারা বিশ্বে যখন আলোচনা চলছে নেইমারের অভিনয় নিয়ে, তখনও শুধু ব্রাজিল সমর্থন করার কারণে নেইমারকে নিয়ে করা বিভিন্ন রসিকতায় আমাদের ফেসবুকাররা ট্রল পেজের এডমিনদের মনের আনন্দে গালাগাল করেছেন! মুগ্ধ নেইমার লিখেছেন, ব্রাজিলের প্রতি এমন সমর্থন বিশ্বের ইতিহাসে বিরল!
বইয়ের প্রায় গোটা অংশেই বারবার গড়িয়ে গড়িয়ে এসেছে মাঠে গড়ানোর গল্প। সান্তোসের মাঠ থেকে রাশিয়ার মাঠে কী করে গড়িয়ে এলেন সেসব গল্প বাদেও এসেছে নেইমারের নানান আর্তনাদ, পাওয়া এবং না পাওয়া নানান পেনাল্টির গল্প। এই বইয়ের অনিন্দ্যসুন্দর লেখনীশিল্প এমনই, গল্প কিছুদূর এগোতেই বারবার যেন পড়ে যায়। এরপর কিছুদূর গড়ায়, আবারও দৌড়ায়, আবারও কিছু সামনে গিয়ে ঘটে গল্পের পতন। বইটি পড়ার সময় যেন পাঠক নিজেই রেফারি বনে যায়।
তরুণ যেসব ফুটবলাররা ডাইভ করতে চান, কিন্তু কী করে নিখুঁতভাবে ডাইভ করতে চান তা জানেন না, তাদের জন্য বিভিন্ন পরামর্শও দিয়েছেন নেইমার।
এ বইয়ে নেইমার জেমস ক্যামেরনের সাথে কাজের অভিজ্ঞতাও শেয়ার করেছেন। জানিয়েছেন অ্যাভাটার টু-এর বদলে এই সাবেক ট্রাক ড্রাইভার তাকে নিয়ে 'দ্য ফল' নামে একটি সিনেমায় ব্যস্ত আছেন। খুব শীঘ্রই সিনেমাটি মুক্তি পাবে। তবে অনেকেই নাকি এই সিনেমার নাম ট্রল করে বলছে 'দ্য ফলস'!
ট্রলের ব্যাপারে নেইমারের দারুণ ইতিবাচক অবস্থান। তিনি এই বইয়ের মাধ্যমেই জানান, ট্রলে সব সত্য কথা বলা হয়। মানুষের ভেতরের যে মেধা তা ট্রলের মাধ্যমেই বেরিয়ে আসে। লেখকের ভাষায়- 'আমি যে অভিনেতা তা তো আমি আমাকে করা ট্রল দেখেই জানতে পেরেছি। আমাকে এখন দেখুন-- পেটের দায়ে এখন আমাকে বার্সার মতো মেসিময় দলে খেলতে হয় না। মেসি রোনালদোরা যখন মাঠে ঘাম ঝরায় তখন আমি নায়িকার সাথে সমুদ্র পাড়ে গান গাই। আজ ঢাকা তো কাল মুম্বাই আর পরশু হলিউড করি। আমার রক্তে অভিনয়... অনেকে যে আমাকে জাত অভিনেতা বলে তা তো আর এমনি এমনি বলে না।'
সবাইকে আমি বইটি পড়ার আহবান জানাচ্ছি। কারণ এই বইটি পড়লে আরো জানতে পারবেন... না থাক, বাকিটা না হয় আপনারাই পড়ে জানিয়ে দিন।
তবে বইটির শেষে নেইমার ভক্তদের জন্য রেখেছেন একটি আশার বাণী। জানিয়েছেন, 'ফ্রম নাম্বার টেন টু হিরো নাম্বার ওয়ান' নামে আরো একটি জীবনকাহিনী লিখছেন। অস্কার পেলে তিনি বইটি প্রকাশ করবেন!
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন