যেভাবে অফিসে একটি সফল 'টিমওয়ার্ক' করবেন

১৭৪৩ পঠিত ... ০৩:৫০, ডিসেম্বর ০৮, ২০১৭

১.
আমাদের অফিসের বস ইমরান ভাই। তাঁর একটি বিশেষ গুণ হলো, তিনি টিমওয়ার্ক খুব পছন্দ করেন। ইমরান ভাইকে আমরা সবাই বস মানলেও তিনি তা মানতে একদম নারাজ। তার ভাষ্যমতে, ‘তোমরাও চাকরি করো, আমিও চাকরি করি। আমাদের মধ্যে কোনো বস নেই, আমরা একটা টিম হয়ে কাজ করে ডিপার্টমেন্টের উন্নতি করবো, টিম মানে বুঝলা তো? দল হয়ে কাজ করবা।'

অলংকরণ: মাহাতাব রশীদ

আমরা ভাগ্যবান। ভাগ্য সুপ্রসন্ন বলেই আমরা ইমরান ভাইয়ের মতো একজন বস পেয়েছি। কাজের চাপেও আমরা উৎসাহ নিয়ে কাজ করি, ইমরান ভাইকে কাজ শেষ করে দেখাই। চাকরিজীবনে ইমরান ভাইয়ের একটাই দর্শন, 'টিমওয়ার্ক ছাড়া তোমরা কেউ জীবনে উন্নতি করতে পারবে না।' অফিসে এসে ইমরান ভাই আমাদের প্রায়ই বলেন,
: শোনো, টিমওয়ার্ক ছাড়া জীবনে উন্নতি করা যাবেনা। আমি যেভাবে বলি, ওভাবে কাজ করে যাও, দেখবা কী হয়।
: ওকে ভাই।
: প্রতিটা কাজের আগে আমাকে জিজ্ঞেস করে তারপর কাজে হাত দিবা।
: জি ভাই।
: অফিসে এসে কাজ নেই বলে বসে থাকা যাবে না কিন্তু। টিমওয়ার্কে মনোযোগী হও।
: জি ভাই, আলোচনা করেই সব করবো।
: অবশ্যই! আলোচনা করার আগে আমাকে জিজ্ঞেস করে নিবা। আমি যেভাবে দেখাবো ওভাবে কাজটা শেষ করবা।
: জি ভাই, নইলে টিমওয়ার্ক হবে না।
: এইতো বুঝেছো। যাও নিজের কাজে মন দাও।
নিজের কাজে মন দিতে যেয়ে শুনলাম, গতকালের কাজটি নিয়ে ইমরান ভাই ভীষণ অসন্তুষ্ট। কাল তো সবাই মিলেই কাজটা করলাম। টিমের সবার কথা অনুযায়ী ফাইলটা রেডি করলাম, তাহলে সমস্যা কোথায়?
সমস্যা শুনলাম। সর্বসম্মতিক্রমে ফাইলে একটা ছবি যুক্ত করা হয়েছিল। ইমরান ভাইয়ের ভাষ্যমতে সেটা কোনো কাজই হয়নি।
: ছবিটার ব্যাকগ্রাউন্ডে সাদা থাকবেনা, লাল করে দাও।
: জি ভাই।
: ফন্টের কালার কালো থেকে নীল করে দাও।
: ঠিক আছে ভাই।
: ফন্টটা একটু চেঞ্জ করে দাও। বৃন্দা ফন্ট চেনো না? ওইটা দাও।
: পুরো ছবিটাই তো বদলে গেলো ভাই!
: যা বলি তা শোনো, টিমে কাজ করা শেখো।
: ভাই এটা টিমের সবাই মিলেই করেছি।
: কিচ্ছু হয়নি। আমি যেভাবে দেখিয়ে দিই, সেভাবে করো।
অতঃপর ইমরান ভাইয়ের কথামতো পুরো ছবিটাই বদলে ফেলে আমরা একটি সফল টিমওয়ার্ক করলাম। ইমরান ভাই খুশি মনে আমাদেরকে আরেকটি কাজ দিলেন। বিজ্ঞাপনী আইডিয়ার কাজ। আমি অতি উৎসাহী হয়ে ভাইকে জানালাম, ‘ভাই আমার কাছে আইডিয়া আছে। আউট অফ দ্যা বক্স! দু’টা মেয়ে, তিনটা ছেলে। সবসময় একটা ছেলে দেখেন, এবার তিনটা!’
গোমড়ামুখো হয়ে ইমরান ভাই বললেন, ‘তোমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবেনা। যাও সবার সাথে আলোচনা করো, আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নাও’।
কিছুক্ষণ পর প্রেজেন্টেশন রেডি করে ইমরান ভাইকে আমাদের টিম ওয়ার্ক দেখালাম।
: ভাই সবার সিদ্ধান্ত মোতাবেক এই কাজে তিনটা মেয়ে রাখা লাগবে, মাঝবয়সী।
: না। চারটা মেয়ে। দু’টা কম বয়সী, দু’টা মাঝ বয়সী।
: ভাই তাহলে ছেলে তিনটা লাগবে।
: ছেলে একটা রাখবা, সোজাসাপ্টা ছেলে।
: ওকে ভাই। বিজ্ঞাপনটা হবে ঢাকায়।
: মোটেও না, কক্সবাজার কল্পনা করে আইডিয়া ভাবো।
: তাহলে ভাই আমরা সবাই কক্সবাজার যাচ্ছি? টিমওয়ার্কে?
: তোমরা কেন যাবা?

আমরা আর কিছু বলিনি। সমূহ ঝাড়ির আশংকায় আমরা রাজী হয়ে আমাদের সমস্ত আইডিয়া কেটে কেটে ইমরান ভাইয়ের আইডিয়াটাই ফাইনাল করলাম। ইমরান ভাই ভীষণ খুশি, টিমওয়ার্ক হচ্ছে।

২.
বিজ্ঞাপনের শ্যুটিং শেষ। ইমরান ভাই জানালেন, ফেসবুকের জন্য একটি পোষ্টার লাগবে, যেটাতে ব্র্যান্ডের নামে হৈচৈ পড়ে যায়। আমরা ভাবছি, দলে দলে ভাবছি। সবাই মিলে ভেবে একটা পোস্টার বানিয়ে দেখালাম বসকে।

: পোস্টারের ব্যাকগ্রাউন্ড লাল কেন? নীল করো।
: ভাই টিমের সবাই বলছিলো...
: সবাই বললেই তো আর হবে না। দ্রুত নোট নাও।
: বাকি সব ঠিক আছে না ভাই?
: না। কিচ্ছু ঠিক নেই। বাম পাশের মেয়ের ছবিটা ডান পাশে এনে আরও বড় করো।
: ব্যাপারটা ভালো দেখাবে না ভাই।
: তোমাদের শুধরাতে পারলাম না। নিজেদের মতকেই প্রাধান্য দাও শুধু। যাও চেঞ্জ করে নিয়ে এসো।
ভাইয়ের কথা মতো পোষ্টারটি আবার বানিয়ে দেখাতেই ভাই খুশি হলেন। আমাদের সবার দিকে তাকিয়ে বিজয়ীর ভঙ্গীতে বললেন, ‘দেখলে, টিমওয়ার্ক করলে সব কাজ কেমন ভালো হয়?'

৩.
অফিসে নতুন একজন ফ্রেশার জয়েন করেছে কিছুদিন আগে। প্রথম দিনই বস তাকে সব কলিগদের সঙ্গে মিলে টিমওয়ার্ক করে কাজ করতে বলেছেন। ফ্রেশার ছেলেটা আমাকে একটু ইতস্তত করে জিজ্ঞেস করলো, 'ভাই, বস তো সবার সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে বললো। আমি তো কাউকে তেমন চিনি না এখনও, কী করবো বুঝতে পারছি না।' আমি মুচকি হেসে বললাম, 'বস যা বলে, তাই করো। তাহলেই টিমওয়ার্ক হবে!'

১৭৪৩ পঠিত ... ০৩:৫০, ডিসেম্বর ০৮, ২০১৭

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top