ধানমন্ডি লেক এখন প্রচুর সাহায্য প্রার্থী দিয়ে ভরা থাকে!
লেকে এখন আড্ডা দিতে বসলেই কেউ না কেউ এসে হাজির হয় সাহায্যের জন্য। কেউ পথ শিশুদের জন্য সাহায্য চায়, কেউ খাবারের জন্য, কেউ কেউ আবার নেশার জন্যও যে আসে বোঝা যায়! একজন দুইজনকে সাহায্য দেয়া গেলেও সবাইকে কিন্তু আর সব সময় সাহায্য করা হয় না। এর মধ্যে এক মহিলা তো সাহায্য না করলে ডাইরেক্ট আল্লাহর কাছে বিচার দেয়, অভিশাপ দেয়! আজকেও লেকে বন্ধুর জন্য অপেক্ষা করতে করতে উনি এসে সাহায্য চাইলে মাফ করেন বলতেই অভিশাপ দিতে দিতে সামনে চলে গেলো, তার পেছন পেছন দুই শিশু বন্ধু আসলো সাহায্য চাইতে। দুইটার সাইজ বড়জোর আমার এক হাত হবে!
একজন আরেকজনের কাঁধে হাত রেখে কোমর বাঁকা করে আমার সামনে এসে বলল, পাঁচ টাকা দেন!
বললাম, তোমগো ঘটনা কী?
-পাঁচ টাকা দেন!
-ব্যাটা পাঁচ টাকার সাইজতো তোগো দুইটার চেয়েও বড় হইবো! পাঁচ টাকার ওজন নিতে পারবি?
-পাঁচ টাকা দেন!!
কিছুক্ষণ এদের দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘দুইটা মারামারি কর! যে জিতবে সে পাঁচ টাকা পাবে!’
আমার কথা শেষ করতে মাত্র দেরি, সঙ্গে সঙ্গে আমার সামনে একটা রণক্ষেত্র সৃষ্টি হলো! কানের পাশে হাতি ঘোড়ার ডাক, চিৎকার চেঁচামেচি তীর ধ্নুক গোলা বারুদের শব্দ আসতে লাগলো। অবস্থা খারাপ দেখে চেয়ার থেকে উঠে দুইটাকে থামাতে বললাম, ‘স্টপ! স্টপ! হ্যান্ডস আপ! ম্যাচ ড্র!! এই নে পাঁচ টাকা, আড়াই-আড়াই করে ভাগ করে নিবি... কেমনে ভাগ করবি তোগো ব্যাপার! ভাগ এখন!’
টাকা পেয়ে দুই বন্ধুর একটা চুল আরেকটা প্যান্ট ঝাড়া দিতে দিতে আবার একটা আরেকটার কাঁধে হাত রেখে রওনা দিলো সামনে দিকে। এর মধ্যে এক তরুণী এসে বলল, ‘আপনি কি মানুষ?’
কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘কেন আপনাদের গ্রামে মানুষ দেখতে কেমন?’
-বাচ্চা দুইটা ছেলে দিয়ে এভাবে মারামারি করালেন? এত ছোট মন আপনার? ছিঃ! সাহায্য চেয়েছে, না পারলে দিতেন না! কিন্তু এদের দিয়ে এভাবে মারামারি করাবেন? আপনি জানেন এই মারামারির ফলে তাদের কী রকম মানসিক সমস্যা হতে পারে? মাথায় কী রকম চাপ পরতে পারে?
-ও আচ্ছা, এই কথা! তারা মারামারি কই করলো! তারা কাজ করে টাকা নিছে। এমনে এমনে ফাও টাকা পেলে তাদের কি খুব মানসিক বিকাশ হইতো?
-মারামারির মধ্যে আপনি কাজের কী দেখলেন?
-ডব্লিউ ডব্লিউ ই, ডব্লিউ ডব্লিউ এফ দেখেন নাই কখনও? খেলোয়াড়রা মারামারি করে আর মানুষজন টিকেট কেটে তাদের খেলা দেখে, সেই টিকেটের টাকা থেকেই দি রক, তিনটা এইচের বেতন হয়!
-আপনার এই দুই বাচ্চারে কোনদিন দিয়ে রক মনে হইলো? আর তিনটা এইচ কি?
-ট্রিপল এইচ। খালি দুই নাম্বারি করতো! চেনেন না? আর পিচ্চিদের একটারে আপনি দেখছেন? ওইটা পুরাই দি রক! ডাইকা দেখেন, আমি শিওর সে রকের মত ভুরু নাড়াইতে পারবে! কাজ করে দুইটা বাচ্চা টাকা উপার্জন করছে, আপনার ভালো লাগলো না... তাদেরকে ভিক্ষা দিলে আপনি খুশি হইতেন! ছিঃ!
তরুণী আমার বাজে যুক্তিতে বিরক্ত হয়ে গজ গজ করতে করতে নাক ফুলিয়ে হাটা দিলো! ঠিক তখন আমার খেয়াল হলো, ‘রাগে নাক ফোলা মেয়ে দেখতে এত সুন্দর হয়?’ বাহ! ওই দুই পিচ্চির মাথায় চাপ পড়তে পারে কিনা জানি না, কিন্তু এই মেয়ের ফোলা নাক আমার বুকে ঠিক চাপ ফেলে গেলো!
করুণাময়ের ইশারা কিংবা একটা প্রেমের গল্প সৃষ্টি হবে এই জন্যেই মনে হয় তরুণীর সাথে আমার আবার দেখা হয় আজিজ মার্কেটের সামনে।
হাঁটতে হাঁটতে এই মেয়ের সাথেই যে ধাক্কা খাবো, এটা মনে হয় পূর্বনির্ধারিত ছিল! উপর থেকে কেউ একজন নজর রাখছে আমাদের দিকে, একটা ইতিহাস নিশ্চয় সৃষ্টি হবে আমাদের দিয়ে, আমি শিওর!
আমার ধাক্কায় বালিকা রাস্তায় পড়তে পড়তে রক্ষা পেলে তার মুখ দেখে প্রথমেই যা বললাম, ‘আপনি আমার এত বড় ক্ষতি কেমনে করলেন?’
বালিকা রাগে গজ গজ করতে বলল, ‘ধাক্কা দিয়ে রাস্তায় ফেললেন আমাকে, আর বলেন, আমি আপনার ক্ষতি করছি?’
-ক্ষতিই তো করছেন! আপনার সাথে আমার তো এখন প্রেম হয়ে যাবে! আমার এত বড় সর্বনাশ আপনি কীভাবে করলেন?
-ফাইজলামি কথা বার্তা বলেন? আপনার সাথে আমার প্রেম হবে কোন দুঃখে?
-কেন, সিনেমাতে দেখেন নাই, নায়ক নায়িকা ধাক্কা খেলে তাদের মধ্যে প্রেম হয়?
-আপনি নায়ক? পাঠার মতো শরীর নিয়া আপনারে কোন অ্যাঙ্গেলে নায়ক লাগে দেখতে? এই শরীর নিয়া রাস্তায় বের হন কেন আপনি? আপনি রাস্তায় হাঁটেন, আমার তো রাস্তাটার জন্য মায়া হয়! ধরিত্রী আপনার ওজন নেয় কেমনে?
এই অপমানের পর এদের মধ্যে প্রেম হওয়ার কোন সুযোগ আছে? আছে! বললাম না কেউ একজন নজর রাখছে তাদের উপরে... তবে সেই গল্প আরেকদিন হবে! পেটে খিদা নিয়া প্রেমের গল্প হয় না!
লিখতে লিখতে লাঞ্চের সময় হয়ে গেছে খেয়ালও করিনি। বউয়ের ফোনও দেখি এখনও আসে নাই! প্রতিদিনই তো লাঞ্চের সময় ফোন দেয়। আজ এখনও কেন ফোন আসছে না কেন ভাবতে ভাবতেই বউ ফোন দিলো...
-কী করো? খাইছো?
-নাহ! খাইতে যাবো আর তুমি ফোন দিলা!
-আজকে খাইতে এত দেরি কেন?
-লিখতেছিলাম!
-অফিসের কাজ ফেলে লেখালেখি? তোমারে অফিসে রাখছে কেন? তো কি লিখতেছিলা?
-একটা প্রেমের গল্প!
-লিখো, লিখো! হাজার হাজার প্রেমের গল্প লখো... কিন্তু আমাদের গল্পই আর তোমারে দিয়ে লিখাইতে পারলাম না... হাহ!
-ধানমণ্ডি লেকে পিচ্চিদের মারামারি নিয়ে তোমার আমার ঝগড়া, আজিজ মার্কেটে ধাক্কা! তোমার পেছন পেছন তোমার বাসায় যাওয়া, তোমার বাড়ির কুত্তার দৌড়ানি খাওয়া এগুলা কোনো গল্প হইলো?
-দেখো কুত্তা বলবা না, ওর নাম মিঃ বিগ ম্যান!
-হ! মিঃ বিগ ম্যান!! আমার শালাতুল্য!
-বাজে কথা বলবা না, তো গল্প শেষ করছো?
-নাহ!
-কখন শেষ করবা?
-করবো না!
-কেন?
-তোমার আমার গল্প চলতেই থাকুক! তোমার আমার গল্প শেষ করতে ইচ্ছে করছে না!
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন