গণি মিয়া একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের বড় পদে চাকরি করে। তার স্ত্রী সালমাও একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের এক্সিকিউটিভ৷ নারী অধিকার, নারী ক্ষমতায়নের পক্ষে শক্ত অবস্থান গণি মিয়ার৷
ফেসবুকে ঢুকে গণি একটা ছবি দেখলো। 'হাতাকাটা জামা পরলে আর টিএসসিতে সিগারেট ফুকলেই নারীর ক্ষমতায়ন হয় না, এটাই প্রকৃত নারীর ক্ষমতায়ন' এই ক্যাপশনে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের ছবির সেই পোস্টটিতে লাভ রিঅ্যাক্ট দিলো গণি। লাভ ইমোজি দিয়ে নিজের প্রোফাইলে শেয়ারও দিলো। এরপর শোয়া থেকে উঠে ডাইনিংয়ের দিকে হাঁটা দিলো, বেশ ক্ষুধা লেগেছে। সালমা নিশ্চয়ই এতক্ষণে রান্নাবান্না সেরে টেবিলে সাজিয়ে রেখেছে। টেবিলের সামনে গিয়ে দেখেন, আসলেই তাই।
কিন্তু তরকারি মুখে নেয়ার পরই মেজাজটা বিগড়ে গেল গণির। সালমা ভালো করেই জানে, তার স্বামী একটু ঝাল ঝাল তরকারি খায়৷ তাও সে আজকে তরকারিতে এত কম ঝাল কেন দিলো! সালমাকে ডেকে জিজ্ঞেস করতেই সালমা বললো, 'প্রতিদিন তো বেশি ঝাল দিয়েই রাঁধি, আমার খেতে কষ্ট হয়। তুমি তো জানো আমি কম ঝাল খাই। তাই আজকে...'
কথাটা শেষ করতে পারলো না সালমা। 'তোমার ইচ্ছামতো কি সংসার চলবে নাকি? বলে চেচিয়ে উঠলো গণি মিয়া। সালমা আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল, মুখ খুলতেই আবারও গণি মিয়ার চিৎকার, 'মেয়ে মানুষ মেয়ে মানুষের মত থাকবা, মুখে মুখে তর্ক করবা না।' বলেই হাত ধুয়ে উঠে গেল গণি৷ সালমা কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। তারপর নিঃশব্দে তরকারিতে ঝাল বাড়িয়ে ভাত বেড়ে গণি মিয়ার জন্য রুমে নিয়ে যায়।
খেয়ে দেয়ে শোয়ার সময় সালমা গণিকে বলে, 'শোনো না, অনেকদিনের শখ একটা গাড়ি কিনবো। লোনের ব্যাপারেও কথা হচ্ছে। স্যালারি এখন যা তা থেকে লোনের টাকা ম্যানেজ করা যাবে।'
কথাটা শুনে গণির খুব রাগ হলো। মেয়ে মানুষের শুধুই আরামের চিন্তা। রাগত স্বরে সালমাকে বললো, 'এইসব গাড়ি টাড়ির চিন্তা বাদ। গ্রামের বাড়িতে আমার নামে একটা জমি কিনতেছি, ওটার জন্য টাকা লাগবে। কালকে তোমার বেতনের পুরো টাকাটা আমার একাউন্টে পাঠিয়ে দিও। হাত খরচের টাকা আমার কাছ থেকে নিয়ে নিবা। তোমার কিইবা এমন টাকা লাগে!'
অন্য পাশ ফিরে শুয়ে ফেসবুকে ঢুকলো গণি। শেয়ার করা ছবিটায় ৪২টা লাভ আর ১৬টা কমেন্ট পড়েছে। সবগুলার রিপ্লাই দিতে হবে।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন