এবারের ইদে আলোচিত নাটকগুলোর তালিকায় এ কয়দিনে যোগ হওয়া শেষ নামটি 'বড় ছেলে।' এই নাটক নিয়ে হয়েছে অনেক আলোচনা, সমালোচনা, কান্নাকাটি এবং কথা কাটাকাটি। এই নাটকে আমরা পরিবারের বড় ছেলের জীবনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জানতে পারি। বড় ছেলেদের জীবনের এক অনবদ্য ছবি আঁকা হয়েছে এই ছোট পর্দার মাস্টারপিসে। শুধু মিডলক্লাস সেন্টিমেন্ট ধরাই নাটকটির মূল কীর্তি নয়, এর পাশাপাশি আমরা শিখতে পারি অনেক কিছুই। শিক্ষণীয় ব্যাপারগুলো চিহ্নিত করেছে eআরকির শিক্ষা বিশেষজ্ঞ দল।
১। আপনি কি আপনার সন্তানের জন্যে গৃহ শিক্ষক খুঁজছেন? আপনার বাচ্চা হয়তো ক্লাস ফাইভে পড়ে কিন্তু আপনার এমন কোন শিক্ষক দরকার যে ভার্সিটি শেষ করে ফেলেছে! তাহলে আপনার অবশ্যই দরকার কোন ঘরের বড় ছেলেকে। কারণ আমরা বড় ছেলে নাটকে দেখেছি একজন বড় ছেলে ভার্সিটির ক্লাস শেষ হওয়া মাত্র আর কিচ্ছু না, সোজা বাচ্চাদের পড়াতে চলে যায়। আবার তারা মাত্র দুইটি টিউশনি করালেও রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়ার পর বাসায় ফিরে। তার মানে তারা ছাত্রদের অনেক সময় দেয়।
২। মূলত এই নাটকটি আমাদের সমাজের অনেক সমস্যার মূলে কুঠারাঘাত এনেছে। এই যে আমাদের দেশে এত শিক্ষিত বেকার, তার সম্যক একটা দৃশ্য দেখানো হয়েছে এই নাটকের শ্রেষ্ঠাংশে থাকা অপূর্ব-এর অভিনয়ে। তার রেজাল্ট অনেক ভাল হবার পরেও সে কোন চাকরি পায় না। আপনি হয়তো এখানে বিরোধিতা করতে পারেন, কারণ আপনার পরিচিত ভাল রেজাল্ট করা সবাই চাকরি পেয়ে যায়। কিন্তু চাকরির জন্যে হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়ানো অপূর্ব এত ভাল রেজাল্ট দিয়েও কেন কীভাবে কোন চাকরি পেলেন না, তা আমরা জানি না। যাই হোক, এখানে আমাদের সমাজের সমস্যাটা দৃশ্যমান সেটাই মূল বিষয়।
৩। এই নাটকটিতে দেখতে পাই, নাটকের নায়ক রাশেদ, আগে জানতেন না তিনি বাড়ির বড় ছেলে, তার অনেক দায়িত্ব নিতে হবে পরিবারের, তাই তিনি নায়িকার সাথে প্রেম চালিয়ে যান। কিন্তু যখন পাশ করে বের হবার পর দু বছর তিনি বেকার আর ওদিকে নায়িকার বাবা তাকে বিয়ের চাপ দিচ্ছেন অনেক, তখন তিনি হুট করে বুঝতে পারেন, তার অনেক দায়িত্ব। তাই তিনি তখন মেহজাবিনকে বলে দেন তাকে ছেড়ে চলে যেতে, কারণ তার অনেক দায়িত্ব। এখানে হয়তো নায়কের হঠাৎ বোধোদয় হয় পরিবেশের কারণে। যাই হোক, এটা আমাদের জন্যে অনেক বড় শিক্ষা। বাপের বড় ছেলে হয়ে থাকলে প্রেম করাটাই মুশকিল!
৪। আপনি যদি বড় ছেলে হয়ে কারও সাথে প্রেম করতে যান, তাহলে পকেটে সব সময় টিস্যু রাখবেন। কারণ আপনার প্রেমিকা যখন তখন কেঁদে উঠতে পারে।
৫। আমরা এই নাটকে দেখতে পাই মেহজাবিনের বাবা তাকে বিয়ের জন্যে চাপ দিতে থাকলে মেহজাবিন আপত্তি করেন, তখন তার বাবা প্রশ্ন করেন এতদিন মেহজাবিন বলেছিলেন তিনি পড়ালেখা শেষ করতে চান, কিন্তু এখন কী বলবেন? তখন মেহজাবিন কিছু বলতে পারেন না। অথচ পড়ালেখা করার পর তিনি চাইলে চাকরি করতে চাইতে পারতেন। কিন্তু তিনি তেমন কিছু বলেন না। তাহলে তিনি কেন পড়ালেখা শেষ করলেন? কেবল বিয়ে আটকে রাখার জন্যে?
৬। মিডল ক্লাস সেন্টিমেন্ট মানে মধ্যবিত্তদের নিয়ে একটি ব্যবসা এবং ইমোশনসফল নাটক বানাতে হলে আপনাকে অবশ্যই মধ্যবিত্ত জীবনের সব রকম পসিবল সমস্যা দেখাতে হবে। আপনি চাইলে সমস্যাগুলো বিচ্ছিন্নভাবে একের পর এক ও দেখাতে পারেন। খেয়াল করে দেখুন-
বাবা রিটায়ার্ড, পেনশনের টাকায় চলছে না, আপনি চাকরি পাচ্ছেন না, আপনার বোন ডিভোর্সি, তাকেও আপনার পালতে হচ্ছে, ছোট ভাইয়ের লেখাপড়ার খরচ আপনার। এবং সবশেষে সবচাইতে বড় সমস্যা, আপনার প্রেমিকা একজন বড় লোক বাবার মেয়ে যার বাবা তাকে বিয়ের জন্যে চাপ দিচ্ছে। এই নাটকে সবগুলো সমস্যাই একটা প্যাকেটের মাঝে ঢুকিয়ে আমাদের সামনে পরিবেশন করা হয়েছে, এবং আমরা খেয়েছি। তাই মধ্যবিত্ত জীবনের কোনো সমস্যাই একটি সফল মিডল ক্লাস নাটক বানাতে বাদ দেয়া যাবে না!
ডিজাইন: মুবতাসিম আলভী
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন