উপজাতি সমাজ: বৈশিষ্ট্য ও পরিচয়

১১১ পঠিত ... ১৭:৪০, জানুয়ারি ১৮, ২০২৫

25 (1)

বাংলাদেশে বিভিন্ন রকম উপজাতির বসবাস।  নিম্নে বিভিন্ন উপজাতি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

আওয়ামী উপজাতি: গোপালগঞ্জে এই উপজাতির উদ্ভব ঘটে। এই উপজাতি ইতিহাস রচনা করতে খুব পছন্দ করে। কেবল ইতিহাস রচনার মাধ্যমে জীবন নির্বাহের মডেল তৈরি করেছে এই উপজাতি। এর প্রধান বৈশিষ্ট্য ‘অপরকে ছোট করার মাধ্যমে নিজেকে সম্ভ্রান্ত দাবি।’  একে গান্ধা কইরা দেওয়া ডকট্রিনও বলা হয়। তাইতো এই উপজাতির লোকেরা এক একজন চলিষ্ণু ট্যাগিং কল্প দ্রুম। বারো মাসে তেরো পার্বণ উদযাপন, নিজেদের রচিত ইতিহাস পাঠ, গোত্রপ্রধানের মূর্তিতে পুষ্প অর্পণসহ একটি রঙ্গিন ট্রাইবাল জীবন রয়েছে এদের। এই উপজাতির বৈশিষ্ট্য হলো, মানুষ হত্যা ও সংগীত চর্চার বিপ্রতীপ বৈশিষ্ট্য রয়েছে তাদের। এই উপজাতি প্রণব মুখার্জি দর্শনের অনুসারী। এরা পশ্চিমা দেশে অভিবাসী হলেও আন্তর্জাতিক মিডিয়া তাদের দুর্নীতির প্রতি অনুরাগের পথরেখা খুঁজে ঠিকই গোপালগঞ্জের আওয়ামী পল্লীতে পৌঁছে যায়।

বিএনপি উপজাতি: বগুড়ায় এই উপজাতির উদ্ভব। এই উপজাতি ইতিহাস রচনায় অদক্ষ হওয়ায় নিদারুণ কষ্ট সহ্য করে চলে। আওয়ামী উপজাতির বয়ান তৈরি ও গান্ধা কইরা দেয়া মডেল ও প্রণব মুখার্জি দর্শনের মাধ্যমে আধিপত্য বিস্তারের ক্ষমতার পাশে এই বিএনপি উপজাতি নিতান্ত শিশু ট্রাইবাল গোষ্ঠী। জিয়াউর রহমানের ‘আই উইল মেইক পলিটিক্স ডিফিকাল্ট’ দর্শনের অনুসারী হলেও এই উপজাতি নিজেই ডিফিকাল্ট পলিটিক্সের শিকার হয়ে ঘুরপাক খেতে থাকে। এরা জন্মদিনে কেক কাটা, কারাগার থেকে ট্রাইবম্যানের মুক্তিতে পুষ্পবৃষ্টি, নির্বাসন থেকে দেশে ফিরলে মোটর শোভাযাত্রা, চিকিতসার জন্য বিদেশে গেলে পথের ধারে রুদালি অশ্রুপাত ইত্যাদি ট্রাইবাল রিচুয়াল পালন করে। এই উপজাতি ট্রাইবমেনের চাঁদাবাজির ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে ব্যর্থ হয়। পশ্চিমা দেশে অভিবাসী হলেও গোত্রপ্রধানের হাত থেকে টিফিন বাটি ছোঁ মেরে নিয়ে ভক্তি প্রদর্শন করে ট্রাইবমেন। এই ভক্তির ধরণ ঠিকই বগুড়ার বিএনপি পল্লীর পরিচয় তুলে ধরে।

বাম উপজাতি: এই উপজাতি বঙ্গভঙ্গের কারণে বৃটিশের ওপর রেগে গিয়ে জমিদারপন্থা থেকে সাম্যবাদে ব্রতী জমিদারপুত্র থেকে উদ্ভুত বলে; এরা পরিপাটি করে সেজে থাকে। এই উপজাতি কিছু কঠিন কঠিন বই পড়ে অত্যন্ত কঠিন করে কথা বলায় সাধারণ মানুষ এদের কথা কম বুঝতে পারে। কিন্তু এরা যেহেতু পরিপাটি সাজ গোজ ও কথাবার্তায় পটু, তাই আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত উপজাতি মুখপাত্র নিয়োগে এই বাম উপজাতির সাহায্য নেয়। আওয়ামী উপজাতিকে রুপস্থাপনা করতে এই বাম উপজাতির সবিশেষ ভূমিকা রয়েছে। তবে দরিদ্র মানুষের দাবি উপস্থাপনে বাম উপজাতি সদা সক্রিয় থাকে। বাম উপজাতির ছেলেমেয়েরা অল্পবয়সে একটু অগোছালো দেখালেও; বয়স হতেই তারা এমন সুশ্রী পোশাক পরে ও নিটোল করে চুল আঁচড়ায়; যা দেখলে মনে হয়; এক্ষুণি শোকেস থেকে বের করা নিটোল পুতুল।

জামায়াত উপজাতি: দাড়ি-টুপি ও আলখাল্লায় সজ্জিত এই উপজাতি বৃটিশ, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ সবকালেই সেনাবাহিনীকে ভালোবেসেছে। এরা হিসাব বিজ্ঞানে এতো ভালো যে আওয়ামী উপজাতি ও বিএনপি উপজাতি তাদের হিসাব রক্ষক হিসেবে একজন জামায়াতি উপজাতির লোকের ওপর আস্থা রাখে। এই উপজাতির লোকের আওয়ামী উপজাতির লোকের মতো ইতিহাস রচনার বিরাট ক্ষমতা রয়েছে।  খুন ও কোরান তেলওয়াতের বিপ্রতীপ ক্ষমতা জামায়াত উপজাতির মাঝে রয়েছে। এরা এতো সুশৃংখল উপজাতি যে প্রতিটি ট্রাইবাল রিচুয়ালে সবাই একযোগে অংশগ্রহণ করে। ফলে তাদের উপস্থিতিকে অন্যান্য উপজাতির চেয়ে ঘন মনে হয়।

আমলা উপজাতি: বিসিএস গাইড বুক মুখস্থ করার মাঝ দিয়ে এই উপজাতির উদ্ভব ঘটে। এরা প্রত্যাশা করে সাধারণ মানুষ তাদের স্যার বলে ডাকবে। এই উপজাতির দুর্নীতির চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত রয়েছে। লোকজন আওয়ামী ও বিএনপি উপজাতিকে যখন দুর্নীতির জন্য বকাঝকা করে; তখন শৈল্পিক নৈপুণ্যে দুর্নীতি করতে থাকে আমলা উপজাতি। এদের আচরণ রুক্ষ; জনগণ তাদের কাছে সেবা নিতে গিয়ে ধমক খেয়ে চলে আসে। আরো বেশি মেজাজ তিরিক্ষি আমলা উপজাতির স্ত্রী ও সন্তানাদির। এই উপজাতি দেশিয় খৃস্টানদের মতো স্যুট টাই পরতে খুব ভালোবাসে। বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া মাত্র এই উপজাতি সম্ভ্রান্ত হবার স্বপ্ন সফল হয়েছে ভেবে ক্রমশ গম্ভীর হয়ে যায়।

সাংবাদিক উপজাতি: এরা আওয়ামী, বিএনপি ও জামায়াত উপজাতিকে তেলাঞ্জলি দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। তাই ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য রেখে সাংবাদিক উপজাতির বিকাশ এদেশে ঘটেনি। কারো ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য টের পেলেই তেলাঞ্জলি নির্ভর সাংবাদিক উপজাতির লোকেরা তাকে গোত্রচ্যুত করে। এরা বাতাবি বনে প্লট, পদক, পদবী সংগ্রহের জন্য কাজ করে। এরা টকশোতে ক্ষমতাকে তেল দেয়; অথবা আওয়ামী-বিএনপি-জামায়াত উপজাতির পক্ষে ওকালতি করে। ফলে জনগণের পক্ষে কথা বলার যে মহান ব্রত; তা অপেক্ষাকৃত তরুণ সাংবাদিকের মাঝে অক্ষুণ্ণ থাকলেও; বয়স চল্লিশ হতেই চলে আসে প্লট-পদক-পদবী কেন্দ্রিক ট্রাইবাল জার্নালিজমের ঝোঁক।

সংস্কৃতি উপজাতি: সংস্কৃতি শব্দটি যেহেতু সংস্কৃত শব্দের কাছাকাছি; তাই এই উপজাতির সাজ পোশাক সংস্কৃত পণ্ডিতদের মতো হয়। এরা আওয়ামী উপজাতির পৃষ্ঠপোষকতায় বেড়ে ওঠে। ফলে আওয়ামী উপজাতির শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার না করলেই সংস্কৃতি উপজাতির গোত্রচ্যুত হয় ট্রাইবের লোকেরা। এই প্রবণতার কারণে এই উপজাতির মাঝে সত্যিকারের সংগীত, নৃত্য, অভিনয়, চিত্রকলা জানা লোক আর বিশেষ নেই। চর্বিত চর্বনই কালচারাল এক্টিভিটিজ হিসেবে প্রচলিত এখন। এই সংস্কৃতি উপজাতির গোত্র পিতা ও মাতারা কারো গান শুনে বলেন, গান তো ভালো তো হয়েছে; কিন্তু গায়কতো আমাদের লাইনের লোক নয়। ব্যাস সে গায়কের গায়ে গোত্রচ্যুতির সিল পড়ে গেলো। এইভাবে সংস্কৃতি উপজাতির লাইনে আর কোন সুর নেই। আছে অসুরের কোলাহল।

বুদ্ধিজীবী উপজাতি: বাংলাদেশে একুশে বইমেলায় সর্বোচ্চ সংখ্যক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। সেদিক থেকে বিচার করলে, বুদ্ধিজীবী উপজাতি সবচেয়ে বিকশিত উপজাতি। এই উপজাতির মধ্যে ১০১ জন বিশিষ্ট নাগরিক, ৫২ জন বিশিষ্ট নাগরিক আছে। এই উপজাতির প্রধান প্রার্থনা মন্দির প্রথম আলো। কিন্তু ইন্টারনেট বিকশিত হবার পর বুদ্ধিজীবীদের উপাসনার প্রধান কেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়েছে ফেসবুক। এই উপজাতির বৈশিষ্ট্য হলো এরা ‘সূর্য পূর্ব দিকে ওঠে’ এই বাক্যটি এভাবে লেখে, উত্তর-দক্ষিণ-পশ্চিম দিগন্তে চোখ মেলে দেখলাম, মেলেনি উত্তর; তবু একথা তো ঠিক আকাশে একটি সূর্য রয়েছে, তবে কোথা হতে এলো এটি। কোপারনিকাসের শরণ নিয়ে বলি, পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘুরছে। তাই তো বুদ্ধিজীবী উপজাতি নিয়ে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন, অনেক কথা যাও যে বলি কোন কথা না বলি, তোমার ভাষা বোঝার আশা দিয়াছি জলাঞ্জলি।

কাজের কথাটা চট করে বলতে না পারাটাই বুদ্ধিজীবী উপজাতির প্রধান বৈশিষ্ট্য।

১১১ পঠিত ... ১৭:৪০, জানুয়ারি ১৮, ২০২৫

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top