সারাদিন অফিসের নানা ধকল সামলাতে গিয়ে যখন আর পারছিলেন না; তখন গুলশানের গিয়াস সাহেব নিজেকে এই বলে উজ্জ্বীবিত করেছিলেন যে আজ অফিস থেকে বেরিয়ে প্রথমেই শিঙারা খাবেন। তাও যেন-তেন শিঙারা না, গরম তেলে ভাজা আলুর শিঙারা। যেই ভাবা সেই কাজ। সারা দিনের ক্লান্তি ঘোঁচাতে গিয়েছিলেন অফিস পাড়ার সবচেয়ে বড় সিঙারার দোকানে। কিন্তু বিধি বাম। ক্লান্তি ঘোচানো তো দূর শিঙারায় কামড় দেয়ার পর মেজাজ চড়েছে সপ্তমে। কারণ শিঙারায় আলু নেই। আলুর বদলে আছে কলিজা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অন্যান্য দিনের চেয়ে ফাঁকাই ছিল দোকানটি। শুনশান পরিবেশে গিয়াস সাহেব এসেই শিঙারার অর্ডার দিলেন। একটু তাড়াহুড়া করছিলেন। শিঙারার জন্য। তবে সেটিও খুব অস্বাভাবিক নেই। কিন্তু যখন তিনি শিঙারায় কামড় দিলেন; কেমন যেন একটূ উদ্ভ্রান্ত মনে হলো তাকে। তার এমন চেহারা আমরা আগে দেখি নি। তিনি তার পুরো শিঙারাই ভেঙে তাতে কিছু খুঁজছিলো। পরে জানা যায় আলু খুজছে। আলু না পেয়ে তার প্লেট না দোকানের বাইরে ছুঁড়ে মারে।
দোকানের প্রধান বাবুর্চি হাজী মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন, ‘গিয়াস সাহেব আমাদের নিয়মিত কাস্টমার। তার ক্ষোভের কারণ আমি বুঝি। তিনি সেদিন যেভাবে ভাংচুর করেছেন তাতে আমাদের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, কিন্তু আমাদেরই বা কী করার আছে। আলুর যা দাম; এই দামে শিঙারায় আলুর চেয়ে কলিজার পুর দেয়া শস্তা। আমরা কাচ্চিতে খাসি দুই পিসের জায়গায় তিন পিস দেই। কিন্তু আলু দেই না। আলুর স্পেশাল কাচ্চি আলাদা তৈরী করি। তাও ২ দিন আগে অ্যাডভান্স পেমেন্টসহ অর্ডার করতে হয়।
গিয়াস সাহেবের অফিসে সরেরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তিনি খুবই বিমর্ষ। কোনো কাজ করতে তার সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন, কী আর বলবো ভাই। বেশী কিছু তো চাই নাই। শিঙারার মধ্যে একটু আলু চাইছিলাম। কপালে সেটাও জুটলো না। কিসের জন্য এত পরিশ্রম করি, টাকা কামাই। পুরো বাজারে শিঙারায় আলু দিতে চাচ্ছে না। অফিসে এত পরিশ্রম করে মনের মত যদি একটা শিঙারা না পাই...। গিয়াস সাহেবে র সহকর্মীরা জানান, তিনি আর আগের মত কর্মোদ্যম নিয়ে কাজ করছেন না। আমরা তাকে নিয়ে চিন্তিত।
শিঙারার দোকান-মালিককে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি কথা বলতে অপারগতা জানান।