বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে সবচে দুর্ভাগা লোকটা কে?
আমার মতে, সজনীকান্ত দাস।
'শনিবারের চিঠি'-তে জীবনানন্দের কিছু কঠিন সমালোচনা কইরা বেচারা সজনী মরার এত বছর পরেও সমানে
গালি খায়া যাইতেছেন।
অথচ, যতটুকু ইতিহাস পড়ছি, মনে হইছে, সজনীকান্ত বেশ সজ্জন ছিলেন। বিভুতিভূষণের 'পথের পাঁচালি' যখন কেউ পাব্লিশ করতে রাজি না, সজনীকান্ত প্রকাশকদের দরজায় ঘুরে ঘুরে বইটা প্রকাশের ব্যবস্থা করছেন। জীবনানন্দের ট্রাম দুর্ঘটনার পর যারা সবার আগে ছুটে গেছেন, তাদের ১জন সজনীকান্ত। বাংলা ভাষার দুর্দান্ত কিছু প্যারডির রচয়িতা তিনি। এবং শক্তিশালী প্যারোডি রচয়িতা ছিলেন বলেই হয়তো তার স্যাটায়ার ছিলো কামড় ও খামচি ধরনের ধারালো, যা গায়ে জ্বালা ধরায়ে দিতে পারে। মধ্যযুগের বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি বিষয়ে চমৎকার কিছু ভালো লেখা আছে তার। সবচে বড় কথা, সাহিত্যের প্রতি তার অকৃত্রিম আন্তরিকতা ও নিবেদন ছিলো।
হইতেই পারে যে, তার রুচির সাথে জীবনানন্দ বা অন্যান্যদের রুচি মেলে নাই। তার ভাল না লাগার কথা সে জানাইতেই পারে। ইতিহাসের কাল্ট ফিগারদের ভক্তা-ভক্তিরা এমনই জবরদস্ত যে তাদের প্রেমটা জাহির করতে হয় রিভার্স পদ্ধতিতে অর্থাৎ, জীবনানন্দের প্রতি আপনার প্রেমটা দেখাইতে হবে, সজনীকান্তরে গালি দিয়া। আপাতদৃষ্টে মনে হয় ১জনরে গালি না দিয়া অন্য জনের প্রশংসা করতে বাঙালির কষ্ট হয়।
এতদিন পরেও জীবনানন্দের ভক্তা-ভক্তিদের মধ্যে সজনীকান্তের উপ্রে যে তীব্র ক্ষোভ দেখি, অবাক লাগে।
আহা বেচারা, সজনীকান্ত! রুচিগত ভিন্নতার কারণে এবং ভাগ্যের ফেরে বাংলা সাহিত্যের মোটামুটি ১জন চিরস্থায়ী ভিলেন হয়ে গেলেন।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন