যদি বলা হয় বর্তমান ঢাকার সবচেয়ে আধুনিক এলাকা গুলশান একসময় ছিল দ্বীপের মাঝে থাকা এক গ্রাম, বিশ্বাস হবে? বিশাল সব ঝাঁ চকচকে দালান আর অত্যাধুনিক সব সুযোগ সুবিধাসম্পন্ন এই এলাকাটিকে দেখলে কারোই বিশ্বাস হবে না একসময় এটি পরিচিত ছিলো ভোলাগ্রাম নামে। এই নাম হওয়ার মূল কারণ ছিলো এই গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দাই ছিলেন ভোলা থেকে আগত এবং এদের বেশিরভাগই জড়িত ছিলেন কৃষিকাজের সাথে। এমনকি এলাকাটি ঢাকা জেলারও অন্তর্গত ছিলো না, ছিল না এখনকার মতো বড় কোনো দালান। কৃষিপ্রধান এই এলাকাটিতে সন্ধ্যা হলেই শোনা যেতো শেয়ালের ডাক, এমনকি মাঝেমধ্যে দেখা মিলত মেছোবাঘেরও।
মূলত, পাকিস্তান আমলে এই এলাকাটির উপর নজর পড়ে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী এবং সৌখিন ধনাঢ্য মানুষদের। পাকিস্তানের করাচির অভিজাত এলাকা গুলশানের আদলে একটি আবাসিক এলাকা গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেন ঢাকা ইম্প্রুভমেন্ট ট্রাস্ট (ডিআইটির) চেয়ারম্যান পাকিস্তানি আমলা জি এ মাদানি। ১৯৬১ সালে জমি অধিগ্রহণ করে শুরু হয় কাজ কিন্তু সমস্যা বাধে নামকরণে, গ্রামের নাম না হয় ভোলাগ্রাম ছিলো কিন্তু একটি অভিজাত আবাসিক এলাকার নাম কীভাবে ভোলাগ্রাম হয়, তখনই এর করাচির গুলশানের মতো এর নামও গুলশান রাখা হয়, উর্দুতে যার আভিধানিক অর্থ হচ্ছে ‘ফুলের বাগান।’
ধীরে ধীরে অন্যন্য প্রভাবশালী লোকজনও ধীরে ধীরে জমি কিনে বাড়ি বানাতে শুরু করে, মুছে যেতে থাকে পূর্বের ভোলাগ্রাম নামটিও। তবে শুধু নাম নয়, মুছে দেওয়া হয় এখানকার বাসিন্দাদের নাম নিশানাও। একপ্রকার জোর করেই তাদের কাছ থেকে জমি অধিগ্রহণ করেছিল তৎকালীন পাকিস্তান সরকার, কিন্তু এর বিনিময়ে তাদের কিছুই দেওয়া হয়নি। উল্টো তাদেরই বিতাড়িত করা হয়েছে নিজেদের এলাকা থেকে। কালের বিবর্তনে ধীরে ধীরে আরও অনেক উন্নয়নই সাধন করা হয়েছে এলাকাটিতে, প্রথমে ইউনিয়ন এরপর পৌরসভা এবং দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে আশপাশের এলাকা নিয়ে এটিকে একটি থানায় পরিণত করা হয় এবং এরও দশ বছর পর ১৯৮২ সালে গুলশান ঢাকা পৌরসভার একটি ওয়ার্ড হিসেবেও অন্তর্ভুক্তি লাভ করে।
দেশে স্বাধীনের পরেও অনেকগুলো বছর পর্যন্ত গুলশান মোটামুটি ছিমছাম ছিল, কিন্তু আশির দশকের পর থেকে গুলশান আর তার ছিমছাম রূপ ধরে রাখতে পারিনি। বর্তমানে সু-উচ্চ দালান সমৃদ্ধ যে গুলশানকে আমরা চিনি সেটি মূলত আশির দশক থেকেই পরিবর্তন হতে শুরু করেছিল।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন