ঢাকার নিউমার্কেট অঞ্চলে পরিবর্তনের সঙ্গে আরও একদিকে সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয়। নওয়াবপুর রোডের শেষ মাথায় গুলিস্তান সিনেমা হল তৈরির আগে ছিল 'ব্রিটানিয়া' নামে একটা সিনেমা হল। এখানেই ছিল শহরের শেষ প্রান্ত। পরে এই অঞ্চলের পাশ থেকে চারপাশে পরিবর্তনের স্পর্শ লাগে। গাছ কেটে নতুন রাস্তা তৈরি হয়। নির্মিত হয় ঢাকা স্টেডিয়াম ও গুলিস্তানের পাশের রাস্তা। আস্তে আস্তে গোপীবাগে বাড়ি তৈরি হতে থাকে। গোপীবাগের অদূরে যে জমিদার বাড়িতে এক সময় ফিল্মের শুটিং হতো, তার আশপাশে ছিল জঙ্গল। দিনের বেলা ছাড়া এই অঞ্চলে কেউ যেতে সাহস করতেন না।
উনিশশ সাতচল্লিশ সালের পর ঢাকার বিভিন্ন দেয়ালে মহিলাদের সিনেমায় যাওয়ার বিপক্ষে ছোট ছোট পোস্টার লাগানো থাকতো। এই মানসিকতা দূর হতে খুব বেশি সময় লাগেনি। ঢাকায় রক্ষণশীল মানুষ সিনেমার বিপক্ষে প্রচারণা চালালেও পুরনো ঢাকায় সিনেমা হলের সংখ্যা একেবারে কম ছিল না। চকবাজারে সিনেমা হল ছিল তাজমহল, আরমানিটোলার 'নিউ পিকচার হাউস', ইসলামপুরে 'লায়ন', ওয়াইজঘাটে 'মায়া' (বর্তমানে 'স্টার'), বংশাল রোডে 'মানসী' (পরে নিশাত), সদরঘাটে 'রূপমহল', নবাবপুরে 'মুকুল' (নাম পরিবর্তিত), জনসন রোডে 'নাগরমহল' (বর্তমান চিত্রামহল)। ঢাকা জেলখানা থেকে একটু সামনে আরও একটি পুরনো সিনেমা হল সবচেয়ে আগে বন্ধ হয়ে যায়। ঢাকার ওয়াইজঘাটে পরে 'মুন' নামে একটি আধুনিক সিনেমা হল নির্মিত হলেও বাংলাদেশ সময়ে তা বন্ধ হয়ে যায়। এটাই ছিল ঢাকায় নির্মিত প্রথম ৭৫ মিলিমিটার স্ক্রিনের সিনেমা হল। ঢাকার সিনেমা হলগুলোর মধ্যে রূপমহলে সব সময় বাংলা চলচ্চিত্র দেখানো হতো, পরে ঢাকায় নির্মিত হয় 'গুলিস্তান', 'বলাকা' আর 'মুন'- এই তিনটি প্রেক্ষাগৃহ। নিউ পিকচার হাউসে প্রায়ই বিদেশী ফিল্ম দেখানো হতো। গুলিস্তান তৈরির পর তার ওপরে আর একটি একতলা প্রেক্ষাগৃহ ‘নাজে’ শুধু ইংরেজি ফিল্ম দেখানো হতো। আর এখানকার অধিকাংশ দর্শক ছিলেন ছাত্র ও শিক্ষিত শ্রেণী। গুলিস্তানে দর্শকদের প্রবেশের ব্যাপারে বেশ কড়াকড়ি ছিল এবং লুঙ্গি পরা কাউকে হলে ঢুকতে দেয়া হতো না।
ঢাকার সব সিনেমা হলেই বাংলা, ইংরেজি ও হিন্দি ফিল্ম দেখানো হতো। বাংলা ও হিন্দি ফিল্ম আসতো ভারত থেকে। তখন ভারতীয় চলচ্চিত্রের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা ছিল না। ঢাকার দর্শকরা উত্তম-সুচিত্রা জুটির অনেক ছবি দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন। হিন্দি ফিল্মের দিলীপ কুমার, রাজকাপুর, প্রেমনাথ, সুরাইয়া, মধুবালা, নার্গিস, কামিনী কৌশল, নিদি, গীতাবালী, দেবানন্দ অভিনীত অনেক চলচ্চিত্র নিয়মিত প্রদর্শিত হতো। মাদ্রাজের 'চন্দ্রলেখা' এদেশের সর্বত্র বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে।
তথ্যসূত্র: স্মৃতির ঢাকা, কাজল ঘোষ সম্পাদিত
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন