আজকাল আর উন্নয়নের সরকারের বিশ্বজয়ের গল্প বলতে ইচ্ছা হয় না। জাপানের পরে এই যে আমরা এমেরিকা জয় করে এলাম; তা নিয়ে অনিচ্ছুক জাতির কোন উচ্ছ্বাস খুঁজে পাই না। তারা শুধু দুঃসংবাদ শুনতে পছন্দ করে। এদেশের ৫১ শতাংশ মেয়ের বাল্য বিবাহ হয়; এশিয়ায় শীর্ষে আমরা; এদেশ মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে ১৬৩ স্থান অধিকার করে দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষে; এসব খবরের নীচে সবাইকে যেমন আনন্দে হুটোপুটি খেতে দেখি; তেমন আনন্দ উদযাপন লক্ষ্য করি না; আমাদের জাপান কিংবা এমেরিকা বিজয়ের গল্প শুনে।
নিশীথ সূর্যের দেশ জাপান যে আর আমাদের নিশীথ ভোটের দেশ বলে কটূক্তি করবে না; এই গ্যারান্টি জিতে তবেই আমরা এমেরিকা যাত্রা করেছিলাম। এখন কণ্ঠ মেলান, ভারত-জাপান ভাই ভাই; মাতারবাড়িতে পৃথিবীর বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর চাই। উন্নয়নের সরকার; বারবার দরকার।
ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের গালে চপেটাঘাত করতে আমরা যখন পদ্মা সেতুর গর্বের ছবি দিলাম; তখন আপনারা বললেন, গেছেন তো ঋণ নিতে এতো ভাব দেখাইয়া লাভ কী!
আচ্ছা বলতে পারেন, আপনারা এতো হিংসুটে কেন! জন্মের সময় কী আপনাদের নানী-দাদীরা মুখে এক চামচ মধুও তুলে দেয়নি!
এমেরিকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র যখন বললেন, ভোটানন্দ আমাদের ঘরোয়া বিষয়; এই আনন্দ আমরা কীভাবে উদযাপন করবো সেটা আমাদের ব্যাপার!
আপনাদের মুখ শুকিয়ে গেলো তাই না! খুব তো ভেবেছিলেন, ওয়াশিংটন আপনার ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেবার চে গুয়েভারা হবে!
অতো সোজা নাহ। দেশ স্বাধীন করেছি আমরা। এই দেশের মালিক আমরা উন্নয়নের পক্ষের লোকেরা। আইদার ইউ আর উইদ আস অর এগেইন্সট আস। বেশি হাহা রিয়্যাক্ট দিলে কিন্তু লাফটার সিকিউরিটি অ্যাক্ট দিয়ে আপনাদের সুচিন্তাঘরে নিয়ে যাবো।
আমাদের এন্টোরাজ যখন এমেরিকার রাজপথ দিয়ে যাচ্ছিলো; তখন এমেরিকার হোমলেসদের চোখে আনন্দ-অশ্রু দেখেছি। তারা বলছিলো, আমাদের বাংলাদেশে নিয়ে চলো; ওখানে গৃহহীনকে গৃহ দেয়া হয়।
নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জের ব্রোকারেরা পথে এসে শ্লোগান ধরেছে, চলো চলো মতিঝিল চলো।
রিপাবলিকানরা আমাদের কাছে সাহায্য চেয়েছে, এমেরিকার স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি ডেমোক্রাটদের ক্ষমতা থেকে নামানোর ব্যাপারে!
আমরা বলেছি, তোমরা আমাদের থুসিডাইসিস, ইতিহাসের পিতা মুনতাসির মামুনের সঙ্গে কথা বলো, উনি শিখিয়ে দেবেন, কীভাবে এমেরিকার স্বাধীনতার কৃতিত্ব রিপাবলিকানরা খুব জোরেশোরে দাবি করতে পারে।
এমেরিকার ব্যবসায়ীরা আমাদের ব্যবসায়ী জনপ্রতিনিধিদের কাছে জানতে চেয়েছে; কীভাবে পার্টিকে পরোক্ষ চাঁদা না দিয়ে প্রত্যক্ষভাবে পার্টির মালিকানা হাসিল করে গর্বিত জনপ্রতিনিধি হওয়া যায়।
জাপান-এমেরিকার লোকেরা আমাদের কাছে শিখতে চায়; অথচ অনিচ্ছুক জাতি আমাদের মনীষাকে এতোটুকু পাত্তা দেয় না। এতো যে ডাণ্ডা খেলো; তবু ‘ঘর কা মুরগী ডাল বরাবর’ বলে অবজ্ঞা আর অবহেলাই করে গেলো।
এবার আমরা বৃটেন জয় করবো। রাজা চার্লসের করোনেশনে অন্য দেশ যোগ দেবে সামান্য গণতান্ত্রিক দেশের প্রতিনিধি হিসেবে। অথচ আমরা যোগ দেবো সমানে সমান হয়ে অতীন্দ্রিয় উন্নয়ন রাজ্যের যোগ্য বিদূষক হিসেবে।
এই যে চলার পথে আমাদের অনাবাসী দলীয় হাডুডু তারকারা; তারা আমাকে কতো বললো, চলেন ভাই, আপনাকে একটা সেকেন্ড হোম কিনে দিই। কিন্তু আমি রাজি হয়নি। আপনারা যদি পট করে আমাকে অলিগার্ক বলেন! উন্নয়নের সুফল কুড়িয়েছি বলে অপমান করেন।
আমি এই উন্নয়নের ক্যাসেল ইন দ্য এয়ারেই খুশী। আমাদের এই অশ্বমেধযজ্ঞে উন্নয়নের বিজয় নিশান উড়ছে ঐ!
(ছবিতে সফরকারী দলের এন্টোরাজের সামনে হোমলেসদের মিছিল)
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন