রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাইয়ের জাহাজ ব্যবসা ও ওয়ালটন নামে আমাদের 'দেশী' পন্য

৫১৭৯ পঠিত ... ২২:০২, মে ০৪, ২০১৭

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাই জ্যোতিন্দ্রনাথ ঠিক করলেন লঞ্চ পরিবহন ব্যবসায় নামবেন। তখন স্বদেশি আন্দোলনের যুগ। মায়ের দেয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে নে না ভাই, দিন দুখিনী মা যে তোদের এর বেশি আর সাধ্য নাই-এর আবেগ। ব্রিটিশদের কারখানার কাপড় ছেড়ে দেশি তাঁতিদের তৈরি খাদি কাপড় পরার হুজুগ। স্বদেশি পণ্য, কিনে হও ধন্য।

জমিদারপুত্র জ্যোতি আরও বড় স্বপ্ন দেখলেন। তিনি ব্রিটিশদের টক্কর দিতে চান লঞ্চ পরিবহন ব্যবসায়। সেকালে কলকাতা থেকে বরিশাল পর্যন্ত সরাসরি লঞ্চ চলত।

কোনো বাঙালির জাহাজ থাকতে পারে, এটাই তখন কল্পনাতীত ছিল। সেই জাহাজে প্রথম দিনে উপচে পড়া ভিড়। মুহূর্তের মধ্যেই টিকিট শেষ। ব্রিটিশদের মাথায় হাত। আর সাদা সাহেবদের মুখে এমন কষে চড় মারার জন্য জ্যোতিন্দ্রনাথ পেলেন বাহবা। বরিশালে ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে সেই জাহাজ বরণ করে নেওয়া হলো।

বাঙালির যদি থাকে আবেগ, ব্রিটিশদের আছে বুদ্ধির জোর। এই বুদ্ধি দিয়েই ইউরোপের ছোট্ট একটা দেশ পৃথিবীর প্রায় অর্ধেকটার মালিকানা নিয়ে ফেলেছিল। বাঙালি বাবুর জাহাজের ব্যবসা ঠেকাতে তারা আঁটল বুদ্ধি। ভারতেই তাদের অজস্র জাহাজ চলে আরও অনেক রাজ্যে। অন্য আরও দেশেও। ফলে এক জায়গায় ব্যবসার ক্ষতি অন্যখান থেকে তারা পুষিয়ে নিতে পারবে। বাঙালি বাবু তো তা পারবে না।

চট করে ব্রিটিশরা ১ টাকা থেকে টিকিটের দাম করে দিল আট আনা। একদম অর্ধেক ভাড়া।

মুহূর্তেই জ্যোতির জাহাজ ফাঁকা। সব ভিড় এবার ব্রিটিশদের জাহাজে। বাঙালির আবেগ অবশ্যই আছে, কিন্তু টাকার প্রতি মায়াও তো কম নয়।

ঋণ নিয়ে জাহাজের ব্যবসায় নামা জ্যোতি চোখে অন্ধকার দেখলেন। কিন্তু তিনিও হাল ছাড়ার পাত্র নন। অনেক লস হবে জেনেও তিনি ভাড়া করে দিলেন ২৫ পয়সা। এবার জ্যোতির জাহাজ মানুষের ভিড়ে ডোবে ডোবে অবস্থা।

ব্রিটিশদের তরফ থেকে পাল্টা জবাব এল। তারা এবার ভাড়া করে দিল ফ্রি। বরিশাল-কলকাতা ঘুরে আসুন। টাকা লাগবে না।

দুই কোম্পানির এই ব্যবসার প্রতিযোগিতার শেষ লড়াইটা ছিল এমন, বাঙালি বাবুর জাহাজে চড়লে ভাড়া ফ্রি। সঙ্গে দুই বেলা খাওয়াও ফ্রি। সঙ্গে একটি গামছাও!

জ্যোতি আবেগের লড়াইয়ে জিততে চেয়েছিলেন, পুঁজি বিনিয়োগের টাকার লড়াইয়ে হেরেছেন। সর্বস্বান্ত হয়েছেন। ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। ব্রিটিশরাই জ্যোতির জাহাজটা কিনে নিয়েছিল।

 

২.

ওয়ালটন ও দেশি পণ্য নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে আলোচনা-পাল্টা আলোচনা দেখছি। নিজ দেশের পণ্যের প্রতি আবেগ আমাদের অবশ্যই আছে। কিন্তু শুধু আবেগ দিয়ে পণ্য বা সেবা বিক্রি হয় না। জ্যোতির আমলে হয়নি, এখনকার মুক্তবাজারে আরও হবে না। পণ্যের গুণগত মান, দাম ও বিক্রয় পরবর্তী সেবা তিনটাই এখন খুব জরুরি।

আমাদের আরএফএল, আমাদের ওয়ালটন, আমাদের স্কয়ার টয়লেট্রিজের সামর্থ্য তৈরি হোক বিশ্বের বাজারে টেক্কা দেওয়ার।

৫১৭৯ পঠিত ... ২২:০২, মে ০৪, ২০১৭

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top