সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান একবার এই কিংবদন্তীর সাথে দেখা হলে বলেছিলেন, ‘আমি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান। আপনার পরিচয় দেয়ার কিছু নেই। পেলে কে, তা দুনিয়ার সবাই জানে।‘ এই কুশলী খেলোয়াড়ের রয়েছে ফুটবল ও ফুটবলের বাইরে নানা কীর্তি। তারই দশটি তুলে আনা হলো eআরকি পাঠকের জন্য।
১# পেলের নাম রাখা হয়েছিলো আবিস্কারক থমাস এডিসন এর নামে
পেলে যখন জন্মগ্রহণ করেন সে সময় তার শহরে প্রথমবারের মতন ইলেক্ট্রিসিটি আসে। আর কে না জানে ইলেক্ট্রিসিটির অন্যতম আবিষ্করক থমাস আলভা এডিসনের কথা। এডিসনের সাথে নাম মিলিয়ে পেলের বাবা ছেলের নাম রাখেন এডসন আরান্তেস দো নাসিমেন্তো।
পেলে নিজের ডাকনাম 'পেলে' একেবারেই পছন্দ করেন না। ২০০৬ সালে গার্ডিয়ান পত্রিকার এক আর্টিকেলে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে মনে হতো পেলে নামটা খুবই অপ্রীতিকর লাগে। এটা একটা ফালতু নাম। এডসন নামটা বরং বেশ গুরুত্ব বহন করে।’
২# বাবার কাছে প্রতিজ্ঞা
মারাকানায় ১৯৫০ সালে একবার নিস্তব্ধতা নেমে এসেছিলো। সেই নীরবতার একমাত্র কারণ ছিলো ব্রাজিলের হার। নিশ্চিত বিজয়ের দুয়ার থেকে পরাজয়ের মুখোমুখি হবার বাস্তবতা মেনে নিতে পারেননি অনেক ব্রাজিলিয়ান। সহজ ভাবে নিতে পারেননি পেলের বানা দোনদিনহোও। কাঁদছিলেন তিনি। ঠিক তখনই ১০ বছর বয়সী পেলে বলে উঠেন, ‘কেঁদো না বাবা, আমি বিশ্বকাপ নিয়ে আসবো।’
নিজের বাবার কাছে করা প্রতিজ্ঞা রেখেছিলেন পেলে। ব্রাজিলকে তিনটি বিশ্বকাপ জেতাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি৷
৩# মুভি থিয়েটারের সামনে বাদাম ভাজা
ছোটবেলায় পেলের জীবন কেটেছে খুব দারিদ্র্যের মধ্য দিয়ে। ৬ বছর বয়সে পেলে জুতা পালিশ করতেন এবং মুভি থিয়েটারের সামনে বাদাম ভেজে বিক্রি করতেন। তার পরিবারের কাছে ফুটবল কেনার সামর্থ্য ছিলো না বলে তিনি মোজার ভেতরে ময়লা কাপড় ভরে তা দিয়ে ফুটবল খেলতেন।
৪# জুতোবিহীন একাদশ
দারিদ্র্যের কারণে একসময় পেলে খালি পায়েই খেলতেন। যারা খালি পায়ে খেলে তাদের নিয়ে একটা টিমও গঠন করেন। তিনি এদের নাম দেন, ‘দ্যা শু-লেস ওয়ান।’
ব্রাজিলে এখনও অনেকেই খোলা একটু জায়গা পেলেই সেখানে খালি পায়ে ফুটবল খেলা শুরু করে, যাকে ব্রাজিলের লোকজন বলে 'পেলাদা'। ধারণা করা হয় পেলে থেকেই পেলাদা শব্দটির উৎপত্তি হয়।
৫# প্রথম কন্ট্র্যাক্ট, মূল্য ১০ ডলার
বিশ্বাস করা কষ্ট, যাকে ফুটবলের রাজা বলা হয় সেই পেলের সাথে ক্লাব সান্তোসের প্রথম চুক্তি হয় মাত্র মাসিক ১০ ডলারে। ১৯৫৬ সালে চুক্তি সাক্ষরিত হবার সময় পেলের বয়স ছিলো ১৫ বছর। প্রথম মাসের বেতন দিয়ে নিজের পরিবারের জন্য একটি গ্যাস স্টোভ কিনেছিলেন তিনি।
১৯ বছর পরে যখন আমেরিকান কোম্পানি নিউইয়র্ক কসমস এর সাথে পেলের ৭ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি সম্পন্ন হয় তখন তা ছিলো রেকর্ড ব্রেকিং। এই চুক্তির ফলে সে সময় তিনি হয়ে যান পৃথিবীর সর্বোচ্চ ফি প্রাপ্ত এথলেট।
৬# পিসমেকার
ইংরেজি বিভিন্ন মুভিতে প্রায়ই এমন চরিত্র দেখা যাবে যে কিনা দু পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতা করে। এদেরকে বলা হয় পিসমেকার। কিন্তু বাস্তবের দুনিয়াতেও এমন লোক আছে যিনি কিনা মানুষে মানুষে যুদ্ধ বন্ধ করতে পারেন। সেরকমই একজন মানুষ পেলে। নাইজেরিয়াতে চলতে থাকা ১৯৬৭ সালের গৃহ যুদ্ধে রেবেল এবং ফেডারেল পক্ষের মধ্যে একটি যুদ্ধ বিরতি ঘোষণা করা হয়। কারণ, সেদিন সেখানে পেলে ফুটবল খেলেছিলেন।
৭# সবার জন্যে পেলের জার্সি
পেলে তখন খেলেন নিউ ইয়র্ক এর ক্লাব কসমস এর হয়ে, এ সময় ক্লাবটিকে প্রত্যেক ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষের প্রতি খেলোয়াড়ের জন্য একটা করে পেলের জার্সি বানাতে হতো। এমন ছিলো তার জনপ্রিয়তা৷ ক্লাব ম্যানেজমেন্ট এর ভাষ্যমতে তারা প্রতি ম্যাচে ২৫/৩০টি জার্সি বানাতেন, এছাড়া তারা স্টেডিয়াম থেকে বেরই হতে পারতেন না।
৮# কখনও পাওয়া হয় নি ব্যালন ডি'অর
যাকে বলা হয় ফুটবলের রাজা, সেই পেলেরি নেই কোন ব্যালন ডি’অর। এর কারণ, ১৯৯৫ এর আগে শুধুমাত্র ইউরোপিয়ান খেলোয়াড়রাই এই পুরস্কারের দাবিদার ছিলেন। ২০১৪ সালে পেলেকে অবশ্য ফিফা অনারারি ব্যালন ডি'অর পুরস্কার প্রদান করে।
৯# পেলে দিবস
১৯৬৯ সালের ১৯ নভেম্বর, মারাকানার অজস্র দর্শকরে সামনে সান্তোসের হয়ে আর্চ রাইভাল ভাস্কো ডা গামার এগেইন্সটে গোল করলেন পেলে, হয়ে গেলো এক হাজার গোলের মাইলফলক। আধ ঘণ্টার জন্যে বন্ধ হয়ে গেলো ফুটবল, রাজাকে একবার ছুঁয়ে দেখার জন্য মাঠে নেমে এল হাজার হাজার দর্শক।
এরপর থেকে ১৯ নভেম্বর ব্রাজিলে প্রতিবছর 'পেলে দিবস' হিসেবে উদযাপিত হয়।
১০# পেলে ল
ব্রাজিলের ফুটবলে দুর্নীতি রোধের জন্য একটি বিশেষ আইন আছে। পেলের নামের সাথে মিলিয়ে আইনটি নামও রাখা হয় ‘পেলে ল।‘
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন