'আপনি কি সেলেব্রিটিদের ব্যক্তিগত জীবনকে নিজের সম্পত্তি মনে করেন?'
—এই শিরোনামের ১টা ভিডিও আছে; সেলেব্রিটি কন্টেন্ট ক্রিয়েটর সাকিব বিন রশিদের। প্রচুর শেয়ার হইছে বলে চোখে পড়লো। অন্যথায়, আমি সাকিবের কন্টেন্টের ভোক্তা না।
কিন্তু তার ভিডিওর মূল বক্তব্যকে সাবস্ক্রাইব করে এমন মার্জিত ভদ্রলোক আছে প্রচুর। সেলেবদের লাইফ নিয়া পাব্লিকের 'অযাচিত কৌতুহল' তারা খারাপ চোখে দেখে।
বিশাল এই জনগোষ্ঠীর চাওয়া/বাসনা ও ওয়ারর্ল্ড ভিউ বুঝতে আমি আগ্রহী। বলা ভালো, তাদের আগ্রহ বুঝতে আমি আগ্রহী।
এরা হয়তো মার্জিত, পলিশড ১টা কালচারাল-স্ফিয়ার প্রত্যাশা করেন, যেখানে সেলেবদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়া পাবলিক অতিকৌতুহলী হবে না। ব্যক্তিগত জীবনে তাদের মতামতের বিচ্ছিরি নাকগুলা গলাবে না।
এই চাওয়াটা আপাতভাবে ভালোই। সুন্দর। এপলিটিক্যাল।
কিন্তু ভায়া, এই চাওয়া সম্পূর্ণ বাস্তবতাবর্জিত, ইউটোপিয়ান ও বায়বীয় ১ চাওয়া।
তারা ভুলে যান, পাব্লিক পারসোনার পূর্বশর্তই এই যে—পাব্লিকের অন্তহীন আগ্রহ থাকবে পাব্লিক ফিগারদের ব্যক্তিগত/পাব্লিক লাইফ নিয়া।
সেলেব কি খায়, কোথায় হাগে, টয়লেটে কোন টিস্যু ইউজ করে সবকিছুতে তাদের সীমাহীন কৌতূহল থাকবে।
এবং সেলেবদের পারসোনাল লাইফ নিয়া নিরন্তর স্ক্রুটিনি করতে থাকবে।
এর ব্যত্যয় সম্ভব না ২টা কারণে—
১.
বর্তমান দুনিয়ার অর্থনৈতিক ব্যবস্থাটা প্রলোভনের উপরে দাঁড়ানো।
[ :ভাবি, আপনার ছেলে (বা মেয়ে) এত্তো ভালো রেজাল্ট করে! রহস্য কী?
: ও তো প্রতিদিন কমপ্ল্যান খায়, ভাবি। ]
এই যে লাইফস্টাল/এক্সপেরিয়েন্স- এইটার প্রলোভন ছাড়া পুজিবাদী ব্যবস্থাটা ঠিকমতো কাজ করে না।
আর এই প্রলোভনের অর্থনীতির সাইকেলে গুরুত্বপূর্ণ ও অবিচ্ছেদ্য অংশ, সেলেব, সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার, লাইফস্টাইল ব্লগার, ইন্টারনেট তারকাসহ বিনোদন জগতের ট্রাডিশনাল তারকারা।
প্রাইভেট লাইফসহ সেলেবের যাবতীয় বিষয়ে পাব্লিকের কৌতূহল, অন্তহীন আগ্রহই মূলত সেলেবের কালচারাল ক্যাপিটাল, যা এ্যাডভার্টাইজার, ব্র্যান্ড ও মিডিয়াবাহিত হয়া শেষপর্যন্ত ফিন্যানশিয়াল ক্যাপিটালে রূপান্তরিত হয়।
স্বভাবতই সেলেবের ব্যক্তিগত জীবন নিয়া, মতামত ও রুচি নিয়া পাবলিক নাক গলাবে: অনিবার্য এই বাস্তবতা।
২.
ফ্যান বা ফলোয়াররা সেলেবের আর্টওয়ার্ক /প্রফেশনাল কাজের ভোক্তামাত্র না। তারা সেলেবের লাইফস্টাইলের ভোক্তাও। আবার ফলোয়ার/ফ্যান লাইফস্টাইলের ভোক্তা বলেই সেলেবরা এডভার্টাইজারদের কাছে আকর্ষনীয়।
আপনারে-আমারে কোনো ব্র্যান্ড তাদের ব্র্যান্ড এ্যাম্বাসেডর বানাবে না, বিজ্ঞাপনের মডেল বানাবে না। কারণ আমার লাইফস্টাইল, কেমন, কি খাই, কী পরি, কার সাথে প্রেম করি, ইত্যাদি বিষয়ে পাবলিকের আগ্রহ বা কৌতুহল নাই।
ফলে, আপনারা যতই কষ্ট পান, মার্জিত-ভদ্রস্থ সংস্কৃতমনা ভক্ত আশা করেন,—কোনো লাভ নাই। কারণ প্রলোভনের এই সিস্টেম ও বাজার প্রতিনিয়ত ফ্যানকে ফ্যানাটিক হইতে প্রলুব্ধ করে, উষ্কায়।
আপনি সেলেবদের প্রলুব্ধকর লাইফস্টাইল ফ্যান/ভক্তদের কাছে বেচবেন– আর বেচার জন্যেই ফ্যান ও ফ্যানাটিক উৎপাদন করবেন– এবং লাইফস্টাইলের মারফতে প্রডাক্ট বেচবেন; যার বড় অংশই আসলে অদরকারী, যা চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়া বেচতে হয়—আর সেলেবদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়া ভক্তরা নাক গলাবে না?—এটা কীভাবে প্রত্যাশা করেন?
এই প্রত্যাশা নেইভ, বেকুবি এবং কোন কোনো ক্ষেত্রে, হিপোক্রেসিও।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন