গুহামানব ব্যাপারটা আমাদের কাছে অপরিচিত নয়। প্রাচীনকালে হোমো সেপিয়েন্সদের পূর্বপুরুষ নিয়ান্ডারথাল প্রজাতিরা গুহাবাসী ছিলেন।
তারা পাথরে ঠোকাঠুকি করে আগুন জ্বালাতেন, গুহার ভেতরের দেয়ালে চিত্র আঁকতেন। এইগুলা আমরা জানি।
হুমায়ূন আহমেদ স্যার তার অনেক লেখায় নিজেকে 'গুহামানব' বলে সম্বোধন করতেন। নিজের পরিচিত বাসাবাড়ি ছাড়া অন্য কোথাও যাওয়া বা থাকতে অপছন্দ করা, বা একেবারে থাকতেই না পারা ছিলো তার ভাষায় গুহামানবের বৈশিষ্ট্য।
তবে এই আধুনিক যুগেও অনেকেই সত্যিকার গুহায় থাকেন। বিন লাদেনের মতো সন্ত্রাসীরা লুকিয়ে থাকতেন তোরাবোরা গুহায়। তুরস্কের কাপাদোশিয়া অঞ্চলে পাহাড়ের গা কেটে ঘরবাড়ি বানিয়ে দেদারসে ট্যুরিজম ব্যবসা চলে।
তবে বিন লাদেনই শুধু নয়, অনেক সাধারণ মানুষও শহর থেকে দূরে, যান্ত্রিক যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে চলে যান পাহাড়ে। একটা গান আছে না, ‘কবে যাব পাহাড়ে? আহা রে!’
চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমের সিচুয়ান প্রদেশের নেইজিয়াং জেলাটা পাহাড়ি। সেইসব পাহাড়ে ঘুরতে গিয়েছিলেন একদল পর্যটক। হঠাৎ করেই তারা দেখতে পান পাহাড়ের একটা গুহায় একজন জ্বলজ্যান্ত মানুষ বাস করেন।
তারা দেখেন গুহায় বসে ৪০ বছর বয়সী লোকটা সিগারেট টানছেন আর বই পড়ছেন। বই পড়তে পড়তে কি যেন নোট-ও নিচ্ছেন। তার সাথে বেশি কিছু নেই। টুকটাক হাল্কা জিনিসপত্র। ভিডিও বেশ ছড়িয়েছে এই ঘটনার।
তারা লক্ষ্য করে দেখেন, এই ব্যক্তি স্বেচ্ছায়, লোকালয় থেকে দূরে থাকেন। সামান্য কিছু আহার করেন, প্যারা নাই চিল মুডে থাকেন। তিনি আধুনিক 'গুহামানব'।
এই ভদ্রলোক একা নন। চীন সহ আরও অনেক দেশেই এরকম গুহাবাসী লোকজন আছেন। একসময়ের চীনের শীর্ষ নেতা শি জিনপিং-ও নাকি দীর্ঘদিন গুহায় ছিলেন।
লস এঞ্জেলেস টাইমস তাদের এক প্রতিবেদনে জানায়,
চীনে এরকম অনেক গুহা আছে। বেশিরভাগ গুহাই সানঝি প্রদেশে অবস্থিত। কিছু গুহা আবার প্রাইভেট প্রপার্টি। ওগুলোর মালিকানা প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে হস্তান্তরিত হয়েছে।
আর গুহাগুলোর ভেতরের পরিবেশও সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে বদলেছে। বর্তমানে অনেক গুহাতেই কারেন্ট, পানি, টেলিফোনসহ সব আধুনিক নাগরিক সুবিধাই বিদ্যমান।
ইউরোপের দেশ সার্বিয়ার স্টারা প্লানিয়া পর্বতের গুহায় প্রায় ২০ বছর ধরে থাকেন পান্টা প্যাট্রিক। তিনি মাঝেমধ্যে লোকালয়ে যান। মালসামান কেনেন।
৭০ বছর বয়সী প্যাট্রিক গুহায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করার আগে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। এখন দিনের বেশিরভাগ সময় পাহাড়ি নদীতে মাছ ধরেন আর পাহাড়ে জন্মানো মাশরুম সংগ্রহ করেন।
অর্থকে তিনি অভিশাপ মনে করেন। তার মতে, অর্থ মানুষকে নষ্ট করে দেয়।
বছরখানেক আগে তিনি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে একটি সুপার মার্কেটে গিয়ে করোনা সম্পর্কে জানতে পারেন।
গুহায় একা একা বাস করলেও করোনা মহামারী সম্পর্কে জানামাত্র তিনি করোনার টিকা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
সব ধরনের জনসমাগম সফলভাবে এড়িয়ে চললেও করোনা টিকা নেওয়ার পর তিনি এএফপিকে বলেন, করোনার তো কোনো বাছ-বিচার নেই। আমার গুহাতেও যেকোনো সময় চলে আসতে পারে।
বুড়ো প্যাট্রিকের কথা শুনে একটা পুরনো প্রবাদ মনে পড়লো,
পাগলে পাগলামি করে কিন্তু মরিচ খায় না আর কারফিউর রাতে বাইরে যায় না...
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন