প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির একজন আন্ডারগ্র্যাড স্টুডেন্ট ১৯৭৬ সালে তার ফাইনাল ইয়ার থিসিস জমা দিয়েছিল, 'কিভাবে কম খরচে নিউক্লিয়ার বোমা তৈরি করবেন' শিরোনামে।
ছাত্রটির নাম ছিল জন এরিস্টটল ফিলিপস। এমনিতে তার রেজাল্ট ভালো ছিল না। ভার্সিটিতে কেউ তাকে সেভাবে চিনতোও না। অনেকগুলো কোর্সে সে ল্যাগ খেয়েছিল অলরেডি। সে প্রিন্সটনে ফিজিক্সে পড়লেও তার বাবা ছিলেন ইয়েল ইউনিভার্সিটির মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রফেসর।
তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এমন কিছু করবার যেন সবার 'তাক' লেগে যায়। সেই থেকেই 'কম খরচে নিজের একটা বোমা'র মত অভিনব কিছু করার চিন্তা তার মাথায় আসে। নাগাসাকিকে যেই 'ফ্যাটম্যান' বোমা ফেলা হয়েছিল, তিনি সেটারই একটা রেপ্লিকা বানানোর উদ্যোগ নেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে আমেরিকার সরকার অনুধাবন করতে পেরেছিল যে নিউক্লিয়ার এনার্জির উপরে তাদের শক্ত নিয়ন্ত্রণ দরকার৷ এই বিপুল পরিমাণ শক্তিকে বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহার করার জন্য ভেতরে ভেতরে একটা আন্দোলন দানা বাঁধছিল। ১৯৪৬ সালে প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান অ্যাটমিক এনার্জি কমিশন স্থাপন করেন এবং এই অ্যাক্টকে ল'তে পরিণত করেন।
জন ফিলিপস প্রিন্সটনের আগে দুইবছর ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলে'তে কাটিয়ে এসেছিলেন এবং পড়াশোনায় মনোযোগের অভাবে যথারীতি এখানেও খাবি খাচ্ছিলেন।
অথচ এই তিনিই মাত্র চার মাস কাজ করে সস্তায় এটম বোমা তৈরি করার থিওরি দাঁড় করিয়েছিলেন। ২০০০ ডলার খরচ করে কিভাবে এটম বোমা তৈরি করা যায় সেটা জানিয়েছিলেন। সত্যিকারের বোমা অবশ্য তিনি বানাননি।
তিনি হাতেকলমে প্রমাণ করে দিয়েছিলেন যে এভেইলেবল ইনফরমেশন ও সদিচ্ছা থাকলে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা আর জনবল না থাকলেও স্পেশাল কিছু করা সম্ভব।
নিউক্লিয়ার ফিজিক্সের টেক্সটবুক এবং সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত দুইটি সরকারি গবেষণা পত্র ছিল তার পেপারের রেফারেন্স। জন বোঝাতে চেয়েছিলেন, কিভাবে কোনও ধরনের ক্লাসিফায়েড তথ্য ব্যবহার না করেও শত্রুদেশ বা যেকোনো সন্ত্রাসী গ্রুপ এই বোমা বানিয়ে ফেলতে পারে।
জন ঠিকই সর্বোচ্চ গ্রেড 'এ' পেয়েছিলেন। এবং তার উদ্দেশ্য সফল হয়েছিল। তিনি রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে গেছিলেন। কিছুদিন পরে নিউইয়র্ক টাইমস তাকে নিয়ে একটা স্টোরি বের করে। মিডিয়া তার নাম দেয়, ‘The A-Bomb Kid’.
তবে এর পরের বছর, অর্থাৎ ১৯৭৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানি দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা তার সাথে দেখা করে সেই থিওরি কেনার জন্য দেনদরবার শুরু করে৷
এই খবর পেয়ে ফেডারেল গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই ফিলিপসের থেকে তার মূল থিসিস পেপারটা সিজ করে নিয়ে যায়। পরে সেটা আর ফেরত পাওয়া যায় নাই। এমনকি হোস্টেলে তার রুমে থাকা বোমার ডামি মডেলটাও তারা বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে যায়। পরে আলবার্ট আইনস্টাইনের মত তিনিও 'অ্যান্টি নিউক্লিয়ার এক্টিভিটি' শুরু করেন।
৬৬ বছর বয়সী জন ফিলিপস এখন রাজনীতি করেন।পাশাপাশি তিনি এখন একজন উদ্যোক্তা, অন্ট্রাপ্রেনার। তার ব্যবসা পলিটিক্যাল ডাটা মাইনিং-এর। ভোটারদের যাবতীয় বিবরণ এবং খুঁটিনাটি সংগ্রহ করে তিনি রাজনীতিবিদদের কাছে সরবরাহ করেন।
এন্টি নিউক্লিয়ার এক্টিভিজম থেকে পাওয়া অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি ডেমোক্রেটিক পার্টির একজন সদস্য হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। কয়েকবার নির্বাচনে অংশগ্রহণও করেছেন। যদিও এখন পর্যন্ত কোনোটায় জিততে পারেন নাই।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন