১৯৬৯ সালে সফল চন্দ্রঅভিযানের মূল কারিগর তিন নভোচারীর একজন মাইকেল কলিন্স চিরতরে পৃথিবীর মায়া কাটিয়েছেন। পৃথিবীর জন্য ঐতিহাসিক সেই ক্ষণে কলিন্সের অন্য দুই সহকর্মী নীল আর্মস্ট্রং ও বাজ অলড্রিন চাঁদে নামলেও কলিন্সের নামা হয়নি। মাইকেল কলিন্স তখন মূল যানে থেকে অভিযানের এক অংশ নিয়ন্ত্রণ করছিলেন। চলুন জেনে নেয়া যাক এই চন্দ্রবিজয়ী সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য।
১# নিল আর্মস্ট্রং ও বাজ অলড্রিন যখন চাঁদে অবস্থান করছিলেন, সারা বিশ্বের টিভি উপস্থাপকরা তখন মাইকেল কলিন্সকে এই মহাবিশ্বের সবচেয়ে ‘একাকী’ হিসেবে বর্ণনা করছিলেন, কারণ কলিন্স তখন চাঁদ থেকে ৬৯ মাইল দূরে কমান্ড মডিউল ‘কলাম্বিয়া’য় অবস্থান করছিলেন। তবে পৃথিবীর অনেকেই কলিন্সকে সেসময় সবচেয়ে একাকী মানুষ হিসেবে ভেবে থাকলেও, তিনি নিজে তা ভাবেননি। বরং তাঁর যে কিছু সময় একাকী ওভাবে থাকতে হবে, তার জন্য তিনি আগে থেকেই সব ধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিলেন এবং পরবর্তীতে তার বইতে লিখেছেন, সে সময়কার অনুভূতি ছিল দারুণ এবং তিনি তা খুব অনুভব করেছেন।
২# চাঁদের বুকে প্রথম পা রাখেন নিল আর্মস্ট্রং। চাঁদে পা রেখে তার বলা ‘That's one small step for man, one giant leap for mankind’ কথাটি এখনো বিখ্যাত হয়ে আছে। পৃথিবীর ৬০০ কোটি মানুষ সরাসরি আর্মস্ট্রংয়ের সেই বিখ্যাত ঘোষণা শুনলেও মাইকেল কলিন্স সেটি শুনতে পাননি, কারণ তিনি তখন কমান্ড মডিউলে অবস্থান করছিলেন, যেটি চাঁদ থেকে বেশ দূরে অবস্থান করায় তার রেডিও কমিউনিকেশন বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। কলিন্স যখন আবার রেডিও কমিউনিকেশন স্থাপন করতে সক্ষম হন, ততক্ষনে বাজ অলড্রিন এবং নিল আর্মস্ট্রং চাঁদের বুকে মার্কিন পতাকা উড়িয়ে দিয়েছেন এবং বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি মানুষ সেটি সরাসরি টিভিতে দেখছিল।
৩# চাঁদ থেকে পৃথিবীতে ফিরে আসার পর হনলুলু বিমানবন্দরের কাস্টমস ফরম পূরণ করতে হয়েছিল অ্যাপোলা ১১ এর তিন নভোচারীর সবাইকে। মাইকেল কলিন্স, নিল আর্মস্ট্রং এবং বাজ অলড্রিন তখন কাস্টমস ফরমে কী লিখেছিলেন? তা অবশ্য আমাদেরও জানা নেই।
৪# চাঁদ থেকে একা একা ফেরার বিষয়ে ভয় ছিল মাইকেল কলিন্সের। এটা আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল যে, আর্মস্ট্রং ও অলড্রিন প্রথম চাঁদের বুকে অবতরণ করবেন এবং কলিন্স তখন কমান্ড মডিউলে থাকবেন। কলিন্স ভয় পাচ্ছিলেন যে, যদি বাজ অলড্রিন এবং নিল আর্মস্ট্রং মারা যান, তাহলে তাকে একা একা পৃথিবীতে ফিরতে হবে এবং সঙ্গী হারানোর যন্ত্রণায় কাতর হতে হবে।
নিজের বই Carrying the Fire তে কলিন্স লিখেছেন, ‘চন্দ্র অভিযান প্রস্তুতির শেষ ছয় মাসে আমাকে একটি গোপন ভয় পেয়ে বসেছিল যে, আমাকে মনে হয় পৃথিবীতে একা ফেরত আসতে হতে পারে। যদি তারা চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ করতে ব্যর্থ হয় বা তাদের যান ক্র্যাশ করে, আমি তো সাথে সাথে সুইসাইড করব না। আমি পৃথিবীতে ফিরে আসব, কিন্তু সারাটা জীবন আমাদের একটা আক্ষেপ তাড়া করে ফিরবে।’
৫# এটা একটা বিখ্যাত ছবি। ১৯৬৯ সালে অ্যাপলো ১১ এর চন্দ্র অভিযানের সময় তোলা এটি। এই একটি ছবিতে পৃথিবীর সবাই আছে, একমাত্র মাইকেল কলিন্স ছাড়া। ছবিটি তুলেছেন কলিন্স এবং এতে চন্দ্রযান (যেটিতে নিল আর্মস্ট্রং এবং বাজ অলড্রিন ছিলেন) এবং আমাদের পৃথিবী গ্রহটি দেখা যাচ্ছে। অর্থাৎ, সেই মুহূর্তে জীবিত প্রতিটি প্রাণীই এ ছবির ফ্রেমে আছে। শুধু নেই মাইকেল কলিন্স।
৬# একটি স্পেস মিশনে একাধিকবার ‘স্পেসওয়াক’ করা প্রথম নভোচারী ছিলেন মাইকেল কলিন্স।
৭# অ্যাপোলা ১১ এর নভোচারীরা যখন তাদের অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখনই নাসা মাইকেল কলিন্সকে পরবর্তী চন্দ্রঅভিযানে অংশ নেওয়ার অনুরোধ করেছিল। এমনকি নাসা এই প্রস্তুাবও দিয়েছিল যে, কলিন্স যদি পরবর্তী চন্দ্র অভিযানে অংশ নেন, তাহলে শুধু চাঁদের অরবিটে না থেকে তাঁকে চাঁদের বুকে হাঁটার সুযোগও করে দেওয়া হবে। কিন্তু কলিন্স সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, কারণ তিনি ঠিক করেছিলেন অ্যাপোলা ১১-ই হবে তার শেষ চন্দ্র মিশন।
৮# মাইকেল কলিন্স এলিয়েনে বিশ্বাসী ছিলেন। ১৯৯৯ সালে নিউ ইয়র্ক ডেইলি নিউজের সঙ্গে এক আলাপচারিতায় তিনি বলেছিলেন এটা মনে করা বোকামি যে আমাদের পুরো মিল্কি ওয়েতে শুধু পৃথিবীতেই বুদ্ধিমান প্রাণী আছে!
৯# অ্যাপোলা ১১ এর মিশন এনব্লেমও ডিজাইন করেছিলেন মাইকেল কলিন্স।
১০# কলিন্স কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করেননি। তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন ইতালির রোম শহরে, ৩১ অক্টোবর। এ দিনটিতে বিশ্বের মানুষ হ্যালোইন উৎসব পালন করে।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন