‘পৃথিবীর উপর থেকে তো সেদিনই বিশ্বাস উঠে গেছে, যেদিন শুনলাম আইসল্যান্ড সবুজে ঢাকা একটা দেশ আর গ্রীনল্যান্ড বরফাচ্ছাদিত দেশ’- এই রকম একটা কৌতুক হয়তো অনেকেই শুনে থাকবেন। আসলেই তো! আইসল্যান্ডে যদি বরফই না থাকে, তাহলে দেশটার নাম এমন হলো কেন? আবার গ্রীনল্যান্ডে যদি সবুজই না থাকে, তাহলে এর নামের সঙ্গে ‘গ্রীন’ আসলো কীভাবে?
বর্তমানে গ্রীনল্যান্ড দেশটির ৮০ ভাগেরও বেশি অংশ বরফাচ্ছাদিত। কিন্তু ৯৮২ খ্রিষ্টাব্দের দিকে এই দেশটি সম্ভবত বেশ সবুজই ছিল, যখন এরিক দ্য রেড নামের একজন অভিযাত্রী দ্বীপ দেশটির দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে পৌঁছান। এই এলাকায় তখন আলুর ভালো ফলন হতো এবং অনেক গাধার খামারও ছিল।
আইসল্যান্ডের সমুদ্রের পৃষ্ঠদেশের তাপমাত্রাও প্রতিবেশি গ্রীনল্যান্ডের চেয়ে ১০ ডিগ্রি ফাইরেনহাইট উষ্ণ। হালকা আবহাওয়ার কারণে গ্রীষ্মে আইসল্যান্ড দেশটি সবুজে সুশোভিত হয়ে যায়, যদিও দেশটির ১১ শতাংশ এখনো ভারী বরফে ঢাকা। Vatnajökull হচ্ছে আইসল্যান্ডের সীমানায় অবস্থিত একটি বিশাল বরফখন্ড, যেটি ইউরোপের সর্ববৃহৎ গ্লেসিয়ার এবং আয়তনের দিক থেকে এটি পুয়োর্তো রিকোর সমান।
আইসল্যান্ডের বর্তমান নামটি এসেছে সম্ভবত ভাইকিংসের কাছ থেকে। ভাইকিংসদের মধ্যে একটি প্রবণতা ছিল এমন যে কোনো কিছুর নামকরণের জন্য তারা জিনিসটি দেখতে কেমন, তার উপর অনেকখানি নির্ভর করতো। ৮০০-১৩০০ সাল পর্যন্ত গ্রীনল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চল এখনকার তুলনায় অনেকখানিই উষ্ণ ছিল। তার মানে ভাইকিংসরা যখন সেখানে পৌঁছায়, তখন এর নামকরণ ‘গ্রীনল্যান্ড’ করাটা যুক্তিযুক্তই ছিল। কিন্তু চতুর্দশ শতকের দিকে এসে গ্রীনল্যান্ডের তাপমাত্রা আকস্মিকভাবে কমতে থাকে। কম তাপমাত্রা মানে কম ফসল এবং সাগরে বেশি বরফ। ফলে গ্রীনল্যান্ডে বসবাসকারী মানুষজন তাদের আবাস ছাড়তে বাধ্য হন।
নর্স পুরাণ অনুযায়ী (স্ক্যান্ডিনেভিয়া অঞ্চলের লোককাহিনী) Naddador হচ্ছেন প্রথম অভিযাত্রী যিনি আইসল্যান্ডে এসে পৌঁছান। তিনি এ দেশটির নাম রাখেন Snæland বা ‘Snow Land', কারণ সেখানে তখন বরফ পড়ছিল। Naddador এর পর এখানে আসেন সুইডিশ ভাইকিং Garðar Svavarosson, এই কারণে এই দ্বীপটিকে তখন ডাকা হতো Garðarshólmur (Garðar এর দ্বীপ) নামে। এরপর এখানে আসেন আরেক ভাইকিং Flóki Vilgerðarson. দ্বীপে আসার সময় Flók এর কন্যা সমুদ্রে ডুবে মারা যায় এবং তার সব পশুগুলো খাবারের অভাবে মারা যায়, কারণ তার কিছুদিন পরই শীত শুরু হয়েছিল। বিষণ্ণ ও ক্ষুদ্ধ Flóki এক পাহাড়চূড়ায় উঠে সমুদ্রে এক বিশাল বরফখণ্ড দেখতে পান এবং সেখান থেকেই আইসল্যান্ড নামের সূত্রপাত। এই নামটি ভাইকিং ওয়ার্ল্ডে খুব দ্রুতই জনপ্রিয়তা লাভ করে।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন