গত একশ বছরে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারের মূল কারিগর ছিল জাপান। যেমন- ওয়াকম্যান, ডিজিটাল ক্যামেরা, বুলেট ট্রেন, জ্বালানী সাশ্রয়ী গাড়ি ইত্যাদি। কিন্তু ২০০০ সালে ডিসেম্বরে এক জরিপে বিংশ শতাব্দীর সেরা জাপানি আবিষ্কারের স্বীকৃতি পেয়েছিল ইন্সট্যান্ট নুডুলস (রামেন)। জিনিসটা শুনতে তুচ্ছ মনে হলেও বাস্তবে এর প্রভাব ছিল সীমাহীন!
ইন্সট্যান্ট রামেনের আবিস্কারক মমফুকু আনদো। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে এই খাবারটি একটি গতানুগতিক কনজ্যুমার প্রোডাক্ট, কিন্তু এটি দুর্ভিক্ষের সময় লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন বাঁচিয়েছিল।
১৯৪৫ সালের ১৪ আগস্ট দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রশক্তির কাছে জাপানে আত্মসমর্পন করে। তার একদিন পর আনদো ওসাকা শহরে যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি দেখতে বের হন। হিরোশিমা ও নাগাসাকির মতো এই শহরে পরমাণু বোমা ফেলা হয়নি, কিন্তু পুরো যুদ্ধ চলার সময় শহরটি অসংখ্য বোমার আঘাতে ছিল একেবারে বিধ্বস্ত। হাঁটতে হাঁটতে তিনি একটি ট্রেন স্টেশনের পেছনে একদল মানুষকে কিছু খাবারের জন্য অপেক্ষারত অবস্থায় দেখতে পান। ওই মানুষেরা একটি মেকশিফট রামেনের দোকানের সামনে অপেক্ষা করছিল। আনদো মনে মনে ভাবলেন মানুষ কতটা ক্ষুধার্ত হলে একটু খাবারের জন্য এত দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে পারে!
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পরেও অনেক বছর জাপাতে দুর্ভিক্ষ চলেছিল এবং আনদো তখন দেখলেন খাবারের সমস্যাটাই তখনকার জাপানে সবচেয়ে বড় সমস্যা। তিনি চিন্তা করলেন যে মানুষের খাবারের নিশ্চয়তা ছাড়া শান্তি সম্ভব নয়। তিনি পুরো জাপানের ক্ষুধার্থ মানুষের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন।
এমন একটা প্রকল্পের জন্য তিনি যে আদর্শ ব্যক্তি ছিলেন না, এটা তিনি নিজেও জানতেন। তারপরও সাহস করে কাজে নেমে পড়েন। খাবারটির ব্যাপারে প্রথমে যে যে বিষয়গুলো তিনি মাথায় রেখেছিলেন-
- সুস্বাদু
- সহজে পঁচে না
- তিন মিনিটেরও কম সময়ের মধ্যে প্রস্তুতযোগ্য
- সাশ্রয়ী
- নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যকর
একমাত্র রামেনই এ সবগুলো শর্ত পূরণ করতে পারে। জাপানিরা যেহেতু রামেনের সঙ্গে বহুল পরিচিত, তাই আনদো নিজেও রামেনের দিকেই ঝুঁকেছেন। এক বছর ধরে তিনি এই রামেন নিয়েই নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়েছেন। কিন্তু দ্রুততম সময়ের মধ্যে রান্না ও দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করে রাখার ব্যাপারে কিছুতেই সফল হচ্ছিলেন না। কথিত আছে যে একদিন আনদোর স্ত্রী রাতের খাবার রান্না করার জন্য তেল গরম করছিলেন। আনদো হঠাৎ করে সেই তেলের মধ্যে কিছু নুডুলস ছেড়ে দেন। তিনি দেখলেন গরম তেল নুডুলসকে ডিহাইড্রেট করার পাশাপাশি দ্রুত রান্না করতেও সাহায্য করে। সেখান থেকেই ইন্সট্যান্ট নুডুলসের জন্ম।
আনদোর এই যুগান্তকারী আবিস্কার যে শুধু যুদ্ধপরবর্তী ক্ষুধার্ত জাপানিজদের কাজে এসেছে, তা-ই নয়, দেশটিতে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগেও পীড়ীত মানুষদের সাহায্যার্থে ইন্সট্যান্ট নুডুলস বা ইন্সট্যান্ট রামেন ব্যবহৃত হয়।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন