ক্যাপাসিটি চার্জের বোঝা এবং লোডশেডিং সমগ্র

১১১ পঠিত ... ১৯:১১, সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৪

29

বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাত নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ের সমালোচনার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হলো, ক্যাপাসিটি চার্জ। ক্যাপাসিটি চার্জ হলো বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য করা চুক্তির একটি শর্ত। যেখানে সরকার বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কিনুক বা না কিনুক, একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করতে বাধ্য থাকে। কারণ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ এবং পরিচালনার খরচ পুরোপুরি না হলেও অংশবিশেষ এভাবে পূরণ করা হয়।

আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা তৈরিতে, নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে বিনিয়োগ করা হয়েছিল। যার ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাঁচামালের জোগান নিশ্চিত না হলেও চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি উৎপাদন ক্ষমতা তৈরি হয়। যার ফলশ্রুতিতে বর্তমানে প্রকৃত বিদ্যুৎ উৎপাদনের চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষমতা থাকার কারণে, সরকারকে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হচ্ছে। যদিও বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো সম্পূর্ণভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে না, পুরো ব্যাপারটিই একদম ঋণ করে ঘি খাওয়ার মতো।

আদানি গ্রুপের সাথে অসম চুক্তি:

দেশে অনেক অপশন থাকলেও আমাদের বিগত সরকার প্রধান বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বেছে নেন আদানি গ্রুপকে। তবে আদানি গ্রুপের সাথে বাংলাদেশ সরকারের করা বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি ব্যাপকভাবে সমালোচিত। এই গ্রুপের সাথে চুক্তির সবচেয়ে বিতর্কিত দিক হলো, বিদ্যুতের মূল্য এবং শর্তাবলী, যা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্বার্থের বিরুদ্ধে গেছে বলে অনেকেই মনে করেন।

আদানি চুক্তির মূল বিষয়গুলো:

বিদ্যুৎ সরবরাহ মূল্য:

আদানি গ্রুপের সঙ্গে ২০১৭ সালে চুক্তি করা হয়, যেখানে বলা হয় আদানি তাদের গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। মূল সমালোচনা উঠে আসে চুক্তির মূল্যে। বলা হয়, আদানি বিদ্যুতের দাম অনেক বেশি নির্ধারণ করেছে, যা বাংলাদেশের সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচের তুলনায় বহুগুণ বেশি।

ক্যাপাসিটি চার্জ:

চুক্তির আরেকটি বিতর্কিত দিক হলো বিদ্যুৎ ব্যবহার করা না হলেও, শুধু উৎপাদন ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হবে বাংলাদেশকে। যেটি অর্থনৈতিক চাপ বৃদ্ধির আরেকটি কারণ।

বাংলাদেশের পক্ষে অসম চুক্তি:

সমালোচকরা মনে করেন, চুক্তির শর্তগুলো ভারসাম্যহীন এবং আদানি গ্রুপের পক্ষে বেশি সুবিধাজনক। এর ফলে বাংলাদেশের জনগণের অর্থ বিদেশি কর্পোরেট কোম্পানির লাভে ব্যবহৃত হচ্ছে, যা বাংলাদেশের স্বার্থের পরিপন্থী।

সামিট গ্রুপের সাথে চুক্তি:

সামিট গ্রুপ বাংলাদেশের অন্যতম বড় বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, যারা বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনা করে আসছে। সামিট গ্রুপের সাথে চুক্তিগুলো নিয়ে বিশেষভাবে আলোচনা হয় দ্রুত এবং সহজ বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য। তবে এগুলো নিয়েও সমালোচনা রয়েছে, বিশেষ করে ক্যাপাসিটি চার্জ বিষয়ক।

চুক্তির ধরন:

সামিট গ্রুপ বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে বেসরকারি বিনিয়োগের মাধ্যমে বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করেছে। আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো এই কেন্দ্রগুলোতেও ক্যাপাসিটি চার্জের শর্তটি আমরা দেখতে পাই।

মোটাদাগে এই দুটো গ্রুপের সাথে বিদ্যুৎ সংক্রান্ত চুক্তির জন্য বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ কেনার জন্য চাহিদার চেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে।

কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ফলে হওয়া ক্ষতি:

কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র হলো একটি অস্থায়ী সমাধান, যা ২০০৯ সালে বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলায় সরকার গ্রহণ করেছিল। এই কেন্দ্রগুলোকে কম সময়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, তবে এগুলো নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে, যেমন:

১#
কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো জ্বালানি তেলনির্ভর হওয়ায় এগুলোতে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ ছিল অত্যন্ত বেশি পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়ে গেলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ আরও বেড়ে যায়। যা সরাসরি গ্রাহকদের বিদ্যুতের দামেও প্রভাব ফেলতে শুরু করে।

২#

কুইক রেন্টাল প্রকল্পগুলোকে সাময়িক সমাধান হিসেবে নেওয়া হলেও, এটি দীর্ঘমেয়াদে বিদ্যুৎ সংকটের কোনো স্থায়ী সমাধান দেয়নি। বরং উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ কেনার জন্য সরকারকে বাধ্য করেছে।

মোটাদাগে বলতে গেলে নিজেদের লুটপাটকে জায়েজ করার জন্য আওয়ামী সরকারের নেওয়া এই সাদা হাতিরূপী প্রকল্পগুলোকে এতদিন উন্নয়ন নামক দড়ি দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও এখন এগুলো ধীরে ধীরে আমাদের এবং নতুন সরকারের কাঁধেই ধীরে ধীরে চেপে বসতে শুরু করেছে, প্রস্তুত থাকুন।

১১১ পঠিত ... ১৯:১১, সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৪

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top