আমরা কি গুরুতর ভুলটি করতে যাচ্ছি?

২৩১ পঠিত ... ১৭:৫২, আগস্ট ১২, ২০২৪

WhatsApp Image 2024-08-11 at 17.27.11_78fec49d

ফ্যাসিস্ট রেজিমের পতনে এখনও উৎসাহ-উদ্দীপনা ও উদযাপনের আমেজ শেষ হয় নাই। তবে এই ডামাডোলে আমরা অত্যন্ত গুরুতর ১টা বিষয়ে নজর দিচ্ছি না। বলতেছি বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর কথা।   

রাষ্ট্রের সঙ্গে নাগরিকদের সম্পর্ক বা দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন বোঝা যায় নাগরিকদের সঙ্গে ঐ রাষ্ট্রের পুলিশের ব্যবহারে। আর পুলিশ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিতে। আমরা সবাই জানি, পুলিশের প্রতি সাধারণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন। এই দৃষ্টিভঙ্গি কিন্তু কিছু অসৎ ও দুর্নীতিবাজ পুলিশের আচরণের কারণে না, দীর্ঘদিনের প্রাতিষ্ঠানিক সহিংসতা ও আইনের শাসনের অনুপস্থিতির কারণে। এটা আইনি ও পুলিশ প্রশাসনের অবকাঠামোগত কারণে।  

পুলিশ জনগণের বন্ধু, তারা সেনাবাহিনীর মতো সোলজার না। তার শান্তিশৃঙ্খলায় নিয়োজিত শান্তিরক্ষী বাহিনী। উন্নত দেশগুলিতে তাই ব্যারাক বা পুলিশ কোয়ার্টারে না, কমিউনিটি পুলিশ থাকে কমিউনিটির সঙ্গে। আপনি সততার সাথে বলেন, পুলিশের সম্পর্কে আপনার অভিব্যক্তি কেমন? 

বন্ধুত্বের, আস্থার নাকি ভীতি ও সমীহের? 

উত্তরটা আমরা সবাই জানি। সাধারণ মানুষ মনে করে, বাঘে ছুঁলে ১৮ ঘা, আর পুলিশে ছুঁলে ৩৬ ঘা।  

বিগত ২ দশক ধরে পুলিশ বাহিনী অনেকটা সরকারি দলের গুন্ডাবাহিনীর কাজ করছে— এমনটা বললে বেশি বাড়ায়ে বলা হয় না। আমি ব্যক্তিগতভাবে নিরপরাধ অনেক মানুষরে চিনি যারা অকারণ পুলিশি নির্যাতনের শিকার হইছে। পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের নিরপরাধ মানুষরে হয়রানি, লুটপাট, গুম, এমনকি ডাকাতিরও প্রচুর নমুনা পর্যন্ত পাবলিক ডোমেইনেই হাজির আছে। না জানা অসংখ্য ঘটনার কথা বলতেছিই না। আর এসবের মাত্রাটা এমন না যে এগুলা কিছু অসৎ পুলিশের কারণে ঘটা বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা। পুরা প্রক্রিয়াটা বরং সিস্টেমেটিক বা পদ্ধতিগত। নিয়োগ থেকে শুরু করে, বদলি বা প্রমোশন পর্যন্ত সকল স্তরে দুর্নীতি ও আইনবহির্ভূত, জবাবদিহিতা মুক্ত কাজকর্মের এমন চক্র যে এইটারে অবকাঠামোগত না বলে উপায় নাই।       

পুলিশ বাহিনীর আমূল সংস্কার নিয়ে, তাই, আমাদের এখনই ভাবা দরকার। পুলিশরে থানায় ফিরিয়ে আনতে, এবং জনগণের আস্থায় রাখার অনেক আবেদন নিবেদন ও প্রচারণা মিডিয়াতে দেখতেছি। অথচ পুলিশের পুনর্গঠন ও নতুন করে ঢেলে সাজানোর বিষয়টা আলোচনাতে নাই বললেই চলে। অনেকে হয়ত বলবেন, এখনই পুলিশ জয়েন না করলে, দেশের আইনশৃঙ্খলার কী অবস্থা হবে?

আমি বলব, হাসিনা রেজিমের ‘নরমাল’ টাইম প্রতিটি ঘণ্টায় চাঁদাবাজি, রাস্তায় বখরা, ঘুষ দুর্নীতি, মাদক ব্যবসার বখরায় দেশে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাত্রাটি কেমন ছিল? আমি বলতেছি না যে পুলিশ থানায় না ফিরুক। কিন্তু জোর গোলায় পুলিশ সংস্কার না, পুলিশের পুনর্গঠন করা জরুরি— এই আওয়াজ এখনই উঠাইতে হবে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের এই উত্তপ্ত সময়েই, যখন এই করাপ্ট সিস্টেম কিছুটা ব্যাকফুটে। নতুবা তারা পুনরায় শক্তি ফিরে পেলে, তখন চাপ সৃষ্টি করে উল্লেখযোগ্য কোনো অবকাঠামোগত পরিবর্তন আনা অনেক কঠিন। এখনই সময়।

যেভাবে চলতেছে, তাতে আমার ইতিহাসজ্ঞান বলে, পুলিশ এসে কিছু পপুলিস্ট, লোক দেখানো কাজ করবে। আওয়ামী লোকদের টর্চার করা শুরু করবে, ‘সাইজ’ করবে। এমনকি যে আওয়ামী অত বেশি অপরাধ করে নাই, তাদেরকেও কঠিন টর্চার ও ধরপাকড় করবে। পাবলিকও আওয়ামী রেজিমের উপর আগে থেকে থাকা ক্ষোভের কারণে হয়ত খুশিতে হাততালি দেবে। আর মাঝখান দিয়া আসল দুর্নীতিবাজ পুলিশ অফিসাররা থাকবে ধরাছোঁয়ার বাইরে। বড়জোর ২/৪ জনরে বরখাস্ত করা হবে, আর পুলিশের গণবিরোধী চরিত্রের মৌলিক কোনো বদল ঘটবে না। অথচ অসৎ অফিসারদের জায়গায় ২/৪ জন সৎ অফিসার বসায়ে দিলেই এই সমস্যার সমাধান হবে না।   

আমরা পুলিশি নির্যাতনের কথা জানি, বলাবলি করি, অথচ প্রায়শ আমাদের মনে থাকে না যে আইন- বহির্ভূত পুলিশি কর্মকাণ্ডের সাথে বিচার বিভাগ ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। ম্যাজিস্ট্রেট অনুমতি ছাড়া কিন্তু পুলিশ কাউরে রিম্যান্ডে নিতে পারে না। ফলে সমাধান অত সহজ না। পুলিশের গণবিরোধী ও লুটেরাদের পাইক পেয়াদা ও অংশীদার হওয়ার এই বিদ্যমান ব্যবস্থা দূর করতে প্রয়োজন একই সঙ্গে বিচার বিভাগ ও পুলিশের কাঠামোর আমূল বদল আনা।     

এ জন্য দরকারি কী ধরনের আইন কানুন ও পুলিশ বাহিনীর পুনর্গঠন প্রয়োজন সেইটা নিয়া অভিজ্ঞরা বিস্তারিত বলতে পারবেন। আমি আইনের লোক না। কিন্তু আমি আত্মবিশ্বাসের সাথে বলতে পারি ২টা জিনিস অত্যন্ত জরুরি। 

১. পুলিশকে খোলনলচে পালটে ফেলে, সম্পূর্ণ নতুন কাঠামোর জনবান্ধব কমিউনিটি পুলিশ হিসেবে গড়ে তোলা এবং

২. জুলাই গণহত্যায় সকল পুলিশি কর্মকাণ্ডের তদন্ত জাতিসংঘের অধীনে স্বাধীন তদন্ত কমিটির দ্বারা সম্পন্ন হওয়া। 

মনে রাখা দরকার, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের ফলে এখন পুলিশ প্রশাসন যতটুকু চাপে আছে, তা কিছুদিন পরে থাকবে না। ফ্যাসিবাদের কালে জন্মানো ও বেড়ে ওঠা দেশের বিদ্যমান প্রশাসনিক ব্যবস্থাগুলিরে আপনি যত সময় দেবেন তারা নতুন বোতলে পুরনো মদ হয়ে ফিরে আসার সুযোগ তত বেশি পাবে।   

আমাদেরকে অতি দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। পুলিশরে জনবান্ধব ১টা কমিউনিটি পুলিশে রূপান্তরের এমন মোক্ষম সুযোগ আমরা বেশি দিন পাব না। 

সময় কিন্তু দ্রুত বহিয়া যায়।    

 

 

২৩১ পঠিত ... ১৭:৫২, আগস্ট ১২, ২০২৪

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top