যেদিন পুরোদেশে ইন্টারনেট বন্ধ করে দিল, খবর পাওয়ার জন্য পরদিন সকালের পত্রিকা অথবা সারাদিন টিভি চ্যানেলই ভরসা। তখন টিভি চ্যানেলগুলো দেখে সত্যিকার খবর পাওয়া যাচ্ছিল না। কারণ টিভিতে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হামলার নৃশংসতার কোনো খবর নেই। বিচ্ছিন্ন কিছু সংঘর্ষের কথা বলা হত, ছাত্রদের মৃত্যুর কোনো খবর ছিল না কোথাও। শুধু স্থাপনার শোক আর আওয়ামিলীগের মন্ত্রীরা এসে শুধু বলতেছে, পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাবে, ছাত্রদের দাবি মেনে নেয়া হচ্ছে! তখন মনে হইছিলো আমার দাদী ঠিকই বলছেন, টেলিভিশন হইল শয়তানের বাকসো।
আজ আবার কৌতুহলবশত টিভি খুলে বসলাম। দেখলাম তারা এখনও সেই শয়তানের বাকসো। শেখ হাসিনা চলে যাওয়ার পর আজ পর্যন্ত সংখ্যালঘুর বাড়ি ভাঙচুর, অফিস ভাঙচুর, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্মমভাবে মেরে ফেলা, সাধারণ মানুষের বাড়িঘর লুটের কোনো খবর টেলিভিশনে নাই। এমনকি পত্রিকাতেও ওই অর্থে এসব খবর লাল কালিতে প্রধান হেডলাইন হচ্ছে না। হেডলাইন হচ্ছে ছাত্ররা রাস্তা পরিষ্কার করতেছে, সংসদ পরিষ্কার করতেছে, মন্দির পাহারা দিচ্ছে ইত্যাদি। এসব খবর অবশ্যই পজিটিভ, আমাদের মুগ্ধ করে। কিন্তু অনাচারের বিরুদ্ধে কোথাও স্লোগান নাই, প্রতিবাদ নাই। সেটাও হতাশ করে। ৩২ নম্বর ভেঙে ফেলল, শিল্পী রাহুল আনন্দের বাড়ি ভাঙচুর করে ফেলল। অসংখ্য বাদ্যযন্ত্র, নথি পুড়ে ছাই। কেন খুব একটা কেউ কথা বলছে না? কারণ বাকস্বাধীনতা এখনও ফিরে নাই।
বাকস্বাধীনতা শুধু এইটা না যে সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলার অধিকার, বাকস্বাধীনতা সব অনাচারের বিরুদ্ধে কথা বলার অধিকার। আরেকটা দল বিএনপি, তারা নিজেরা কখনই কিছু করতে পারে নাই দেশের মানুষের জন্য। অথচ দেশে পুলিশ বাহিনী কর্মবিরতিতে, রাস্তায় কোনো অফিসিয়াল নিরাপত্তা নাই। তারা এলাকায় এলাকায় মিছিল বাইর করতেছে, ইভটিজিং করতেছে (আমার এলাকায়, আমার সামনে) এমনকি আজকে সমাবেশের ডাক দিয়ে দিছে।
আপনারা ছাত্রদের সাথে আন্দোলন করছেন, আপনারা চাইলে তো এইসব সমাবেশ পরেও করতে পারতেন। ছাত্রদের সাথে অন্তত এই কয়টা দিন রাস্তা পরিষ্কার করতে পারতেন, ট্রাফিক সিগন্যালে দাঁড়াইতে পারতেন, সংখ্যালঘুদের বাড়িতে গিয়ে তাদেরকে নিরাপত্তা দিতে পারতেন, তাদের আশ্বস্ত করতে পারতেন যে, আমরা আছি। মানুষের কাছে নিজেদের প্রমাণ দিতেন। অবশ্য আপনাদের কাছেই বা এসব কেন আশা করতেছি? আপনারাও তো ছিলেন না মানুষের সাথে। আওয়ামিলীগ যেমন মানুষকে বোঝে নাই, বুঝতে চেষ্টা করে নাই। দুইদিনে ঠিক একই বার্তা দিলেন আপনারা। এখন সাধারণ মানুষ হিসাবে ঠুনকো আবেগী কথাটা বলতে পারি, ‘সব মনে রাখা হবে’।
আসলে সাধারণ মানুষ মনে রাখতে পারে না। তারা ভুলে যায়। আপনারাই সব মনে রাখেন। আর হিসাব চুকায়ে দেন। সবাই বলতেছে ধৈর্য ধরতে, কিন্তু আমার অনিরাপদ ভাই-বোন, আত্মীয়দের রেখে আমার তো ঠিকমতো ঘুম আসে না। ঠিক যেমন ঘুম আসত না রাস্তায় অনিরাপদ ছাত্রদের জন্য, গ্রেফতারকৃত ছাত্রদের জন্য। বিশ্বাস করেন, কান্না পায়!
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন